বিজ্ঞাপন

ওয়াজেদ মিয়ার লেখায়: ৭ মার্চের পর মৃত্যুতেও তৈরি ছিলেন বঙ্গবন্ধু

March 6, 2018 | 11:19 pm

হাসান আজাদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। ৪৭ বছর আগে স্বাধীনতার বছরে কেমন ছিল দিনটি। অথবা স্বাধীন বাংলার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের আগে কেমন ছিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এসব খুব কাছ থেকে দেখেছেন বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী প্রয়াত এম এ ওয়াজেদ মিয়া। ওয়াজেদ মিয়া তার লেখা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ বইয়ে তা উল্লেখ করেছেন। এই বইয়ে ওই সময়ের রাজনৈতিক তৎপরতার ধারাবাহিক বিবরণও পাওয়া যায়। একইসঙ্গে বইটিকে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে সর্ম্পক, বিয়ে, একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার নিয়ে দিনযাপনের একটি দলিলও বলা যেতে পারে। এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ দেয়ার আগে ও পরে রাজনৈতিক তৎপরতা কি ছিল তা নিয়েও তিনি লিখেছেন। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে ওয়াজেদ মিয়ার এই লেখা বাংলাদেশের ইতিহাসের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চের আগে ও পরের ঘটনা নিয়ে ওয়াজেদ মিয়া লিখেন- টিক্কা খান ঢাকায় পৌছেন ৫ই মার্চ। তাঁর শপথ গ্রহণ করার কথা ছিলো ৬ই মার্চ। কিন্তু গণআন্দোলনের তীব্রতা ও আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের পূর্ণ সমর্থন লক্ষ্য করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বি.এ. সিদ্দিক টিক্কা খানকে গর্ভনর পদে শপথ গ্রহণ করাতে অস্বীকৃতি জানান। ৫ই মার্চ রেডিও-টেলিভিশনে ঘোষণা করা হয় যে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ৬ই মার্চ বিকেল ৫টায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। ঐদিন বিকেল পাঁচটার দিকে বঙ্গবন্ধু,সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এএইচএম কামরুজ্জামান,ক্যাপটেন মনসুর আলী, তাজউদ্দিন আহমেদও ড: কামাল হোসেন সাহেবদের সঙ্গে তাঁর বেডরুমে বসে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। আমিও সেখানে দাঁড়িয়েছিলাম।

তিনি লিখেন, এমনি সময় ইয়াহিয়া খান টেলিফোনে কথা বলবেন বলে তৎকালীন ঢাকাস্থ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইয়াকুব খান বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করে তাঁকে অপেক্ষা করতে বলেন। টেলিফোন পাবার পর বঙ্গবন্ধু “কিছু শুনতে পাচ্ছি না, কিছু শুনতে পাচ্ছি না” বলে ইয়াহিয়া খানকে আবার টেলিফোন করতে বলেন। অতঃপর বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেন যে, পুনরায় টেলিফোন এলে আমি যেন জেনালের ইয়াকুব খানকে এই বলে ব্যস্ত রাখি যে, তিনি তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন। এর কিছুক্ষণ পর জেনারেল রাও ফরমান আলীর কাছ থেকে পুনরায় টেলিফোন আসলে আমি তা রিসিভ করে কিছুক্ষণ তাকে ব্যস্ত রেখে বঙ্গবন্ধুকে রিসিভারটি দিই। বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়াকে বলেন যে, তিনি যেন বিগত কয়েকদিন আন্দোলন চলাকালে যে সমস্ত ছাত্র-জনতা ইপিআর ও পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন, তার জন্য তার আন্তরিক দুঃখ এবং শহীদদের পরিবারর্গের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে সে সমস্ত ঘটনার জন্য দায়ী ব্যাক্তিদের চিহ্নিত করার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিশন গঠন করেন। … সে সময়ে হাসিনা ও আমি বঙ্গবন্ধুর বাসাতেই থাকতাম। বঙ্গবন্ধু আমাদের সবাইকে নির্দেশ দেন যে, আমরা যেন ৬ই মার্চে ইয়াহিয়া খানের ভাষণ টেপ করে রাখি। ৬ই মার্চ বিকেলে বঙ্গবন্ধু নিজেও একটি ট্র্যানজিস্টার নিয়ে শয়ন কক্ষেল দরজা বন্ধ করে শুয়ে থাকলেন। …ভাষণ শোনার পর বাড়ীর সবাই নিশ্চুপ হয়ে যাই। ঘন্টাখানেক পর বঙ্গবন্ধু দরজা খূলে বেরিয়ে আসেন এবং তাঁর ব্যাক্তিগত সহকারী মোহাম্মদ হানিফকে আওয়ামী লীগের সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এএইচএম কামরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, তাজউদ্দিন আহমেদ, খন্দকার মোস্তাক আহমেদ ও ড: কামাল হোসেনকে জরুরী তাঁর বাসায় আসার জন্য সংবাদ দিতে বলেন। নেতৃবৃন্দ আসার পর বঙ্গবন্ধু তাদেরকে নিয়ে লাইব্রেরী রুমে প্রায় এক ঘন্টা আলাপ-আলোচনা করেন। শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান ও আমি- এই তিনজন মিলে উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে ছাত্রদের মতামত তাঁদেরকে জানাই।

বিজ্ঞাপন

পরের দিন আসে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ওই দিনটির ক্ষণ ক্ষণ ধরে বর্ণনা রয়েছে এম ওয়াজেদ মিয়ার বইয়ে। তিনি লিখেছেন- ….৭ মার্চ সকালে ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু বাড়ী আওয়ামী লীগের বহু নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তি ও ছাত্র নেতৃবৃন্দে ভরে যায়। উপস্থিত সবার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন দেশে পরিণত করার ব্যাপারে আলোচনা করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এ,এইচ.এম কামরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, তাজউদ্দিন আহমেদ ও ড: কামাল হোসেন সাহেবদের সঙ্গে লাইব্রেরী রুমে দ্বার রুদ্ধ করে আলাপে বসেন। সুদীর্ঘ আলোচনার পর লাইব্রেরী কক্ষ থেকে বসার ঘরে অপেক্ষারত আওয়ামী লীগ,কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু বলেন যে, তাঁরা ঐক্যমত্যে পৌঁছেছেন এবং ঐদিন বিকেল সাড়ে চার ঘটিকায় রেসর্কোস ময়দানে অনুষ্ঠিতব্য সভায় দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার দাবীর প্রতি পূর্ণসমর্থন ও সংহতি প্রকাশ করে একটি চার দফার দেয়া হবে। অতঃপর বঙ্গবন্ধু তৎমর্মে জনাব কামরুজ্জামান , জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, খন্দকার মোশতাক আহ্মদ ও ডঃ কামাল হোসেনকে নির্দেশ দিয়ে গোসল ও দুপুরের আহারের জন্য বাড়ির উপর তলায় চলে যান। আর আহার শেষে বঙ্গবন্ধু যখন বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন সেসময় এক ফাঁকে এসে ডঃ কামাল হোসেন তাঁকে প্রস্তাবিত ঘোষাণপত্রের খসড়াটি দেখিয়ে নেন। ততক্ষণে আওয়ামী লীগের অপর পাঁচ নেতা নিজ নিজ বাসায় দুপুরের আহারের জন্য চলে গিয়েছিলেন। ডঃ কামাল হোসেন উপরোল্লিখিত ঘোষণাপত্রটি টাইপ করিয়ে নেয়ার জন্য নীচে চলে গেলে বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেন আমি যেন ঐ ঘোষণাপত্রটির টাইপড্ (চুড়ান্ত) কপিটি সেটির অনুমোদিত মুল খসড়াটির সঙ্গে মিলিয়ে দেখি। ঘোষণাপত্রের খসড়াটি বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহকারী মোহাম্মদ হানিফকে টাইপ করার নির্দেশ দিয়ে ডঃ কামাল হোসেন আহারের জন্য তাঁর বাসায় চলে যান।

….বিকেল তিনটার দিকে প্রথমে আসেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ এবং এর একটু পরেই ডঃ কামাল হোসেন। আমি তখন ঘোষণাপত্রটির চুড়ান্ত কপিটি বঙ্গবন্ধু কর্তৃক অনুমোদিত খসড়া কপিটির মিলিয়ে দেখছিলাম। এক পর্যায়ে খন্দকার মোশতাককে জিজ্ঞেস করলাম যে, ইশতেহারে স্বাধীনতা ঘোষণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে কিনা। তিনি বলেন যে, সামরিক শাসনের ক্ষমতাবলে জারীকৃত আইনগত কাঠামো ( ষবমধষ ঋৎধসবড়িৎশ ঙৎফবৎ-খঋঙ)-এর অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে ঢাকায় বসে পাকিস্তানের অখন্ডতদা লংঘন সংক্রান্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার ব্যাপারটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ। সুতারাং এই ব্যাপারটা এই ইশতেহারে লেখা হয়নি। আমি ঐ ইশতেহার পড়ে দেখলাম যে, তাতে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচন সম্পূর্ণ হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টোর যে সমস্ত আলাপ হয়েছে এবং পহেলা মার্চ হতে গণআন্দোলনের প্রেক্ষিতে যে সমস্ত মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে এবং বিরাজমান পরিস্থিতি ও ছাত্র-জনতার দাবী উল্লেখপূর্বক বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দলের নেতা হিসেবে চারটি দাবী উপস্থাপিত করেছে। উক্ত ইশতেহারে ইয়াহিয়া খানের নিকট দাবী করা হয়: (১) সমস্ত সামরিক বাহিনী লোকদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে, (২) পহেলা মার্চ হতে আন্দোলন যে সমস্ত ভাইবোনকে হত্যা করা হয়েছে, সে বিষয় একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিশন ঘটনের মাধ্যমে তদন্ত করে সে ব্যাপারে দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি প্রদান করতে হবে, (৩) সামরিক আইন অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নিতে হবে এবং (৪) অবিলম্বে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দলের নেতার কাছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

…..ঠিক এ সময়ই বঙ্গবন্ধু রেসকোর্সে আয়োজিত জনসভায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আমাদের কক্ষে প্রবেশ করেন। তাঁর সঙ্গে আরও দশ-পনেরজন ছাত্র ও আওয়ামী লীগ নেতা প্রবেশ করেন। বঙ্গবন্ধু উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমি সভামঞ্চে পৌঁছার পূর্বেই তোমরা সভামঞ্চের চারদিকে উপস্থিত দেশী-বিদেশী সাংবাদিকবৃন্দের মধ্যে এই ইশতেহার কপি বিতরণ করবে।”এ কথা বলে তিনি দোতলায় চলে যান। প্রায় আধঘন্টা পর সাড়ে চারটার দিকে বঙ্গবন্ধু সভায় যাওয়ার জন্য আয়োজন করতে বলেন। হাসিনা,রেহানা, এটিএম সৈয়দ হোসেন সাহেবের বড় মেয়ে শেলী ও শেখ শহীদের বোন জেলী আমার গাড়ীতে উঠে বলে যে, তাদেরকেও রেসকোর্সের জনসভায় নিয়ে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধু একটি ট্রাকে ওঠেন। উক্ত ট্রাকে ছিলেন সিটি আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী গোলাম মোস্তফা, শেখ ফজলুল হক মণি, ছাত্রলীগের প্রাক্তন সভাপতি আব্দুর রউফ ও সাধারণ সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ আলী, ডাকসুর প্রাক্তন সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমেদ, নূরে আলম সিদ্দিকী, আবদুল কুদ্দুস মাখন, সিরাজুল আলম খান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। মোস্তফা মহসীন মন্টু, কামরুল আলম খসরু, মহিউদ্দিন, আ.স.ম আবদুর রব ও শাহজাহান সিরাজসহ আরো কিছু সংখ্যক আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা আর একটি ট্রাকে ছিলেন। নিরাপত্তার জন্য গাজী গোলাম মোস্তফা ড্রাইভারকে ৩২নম্বর সড়কের পশ্চিম দিক দিয়ে যেতে বলেন। বঙ্গবন্ধুর অনুসারী অন্যান্য যানগুলো চলে যাওয়ার পর আমি হাসিনা ও শ্যালিকাদের নিয়ে মিরপুর রোড দিয়ে যাত্রা করি। সিএসআইআর-এর মোড়ে পৌঁছে সাইয়েন্স ল্যাবরেটরী রোড ও আশপাশের রাস্তাগুলোয় রেসকোর্সে অভিগামী ছাত্র-জনতার মিছিলে পরিপূর্ণ থাকায় নিউ মার্কেট, ইডেন কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের রাস্তা দিয়ে হাইকোর্ট এলাকা ঘুরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের কাছাকাছি যাই। সেখানে পৌঁছে দেখি রেসকোর্স লাখ লাখ লোকে পরিপূর্ণ এবং প্রায় সবার হাতে লাঠিসোটা। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের প্রাঙ্গণ ছিলো রায়ট পুলিশে ভর্তি।

বিজ্ঞাপন

….সেদিন রেসকোর্স ময়দানে নৌকা আকৃতির সভামঞ্চটি স্থাপন করা হয়েছিলো বর্তমান শিশুপার্কের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে। হাসিনার অনুরোধে আমি বহু কষ্টে সভামঞ্চের কাছাকাছি গাড়ি নিয়ে যাই। বঙ্গবন্ধু তখনো সভামঞ্চে এসে পৌঁছাননি।এর প্রায় পনের মিনিট পর বঙ্গবন্ধু সদলবলে সেখানে পৌঁছান এবং মঞ্চে উঠে সবাইকে অভিবাদন জানান। হাসিনা আমাকে বলে, “বিভিন্ন সংবাদপত্রে লিখেছে, আব্বার আজকের সম্পূর্ণ বক্ততা রেডিওর মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।” সে আমাকে গাড়ীর রেডিও অন করতে বলে। রেডিওতে তখন বার বার এই মর্মে ঘোষণা দেয়া হচ্ছিলো, কিন্তু বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা শুরু করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই রেডিও নিস্তব্ধ হয়ে যায়। যা হোক, বঙ্গবন্ধু প্রায় আধ ঘন্টা ধরে বক্ততা করেন এবং শেষ প্রান্তে বলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।” এই কথার সাথে সাথে উপস্থিত জনতা জয় বাংলা ধ্বনিতে লাঠিসোটা ঠোকাঠুকি করে বিজয় উল্লাসে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু আবার জয় বাংলা বললে জনতা জয় বাংলা ধ্বনিতে চারদিক মুখরিত করে তোলে। “খোদা হাফেজ” বলে বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্ততা শেষ করেন। সভা শেষে আমি হাসিনা ও শ্যালিকাদের নিয়ে একই রাস্তায় ৩২নম্বরে ফিরে আসি। বঙ্গবন্ধু প্রায় আধ ঘন্টা পর বহু লোকজনসহ বাসায় ফিরে আসেন।

….. সেদিন রাত ৮টার দিকে রেডিও পাকিস্তানের ঢাকাস্থ কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারী ৩২ নম্বরের বাসায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তাঁদের নেতৃবৃন্দের অন্যতম ছিলেন জনপ্রিয় বাংলা সংবাদ পাঠক ও ছাত্র ফেডারেশনের ইকবাল বাহার চৌধুরী। তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে জানান যে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন সত্ত্বেও ঢাকায় অবিস্থত সেনা বাহিনীর হাই কমান্ডের নির্দেশে সেদিন বক্তৃতা সম্প্রচার করতে না দেয়ার তাঁরা প্রতিবাদস্বরূপ ৭ই মার্চ রেসকোর্সে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রদত্ত তাঁর সম্পূর্ণ ভাষণ পুনঃপ্রচার করার অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত ঢাকাস্থ রেডিও পাকিস্তান কেন্দ্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ও উপস্থিত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

……৭ই মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু, হাসিনা, শেখ কামাল, শেখ জামাল, রেহানা, রাসেল, শেখ শহীদ, শাশুড়ী ও আমাকে নিয়ে খাওয়ার সময় গম্ভীর হয়ে বললেন, “আমার যা বলার ছিল আজকের জনসভায় তা প্রকাশ্যে বলে ফেলেছি। সরকার এখন আমাকে যে কোন মূহুর্তে গ্রেফতার বা হত্যা করতে পারে। সেজন্য আজ থেকে তোমরা প্রতিদিন দু’বেলা আমার সঙ্গে একত্রে খাবে।”

সারাবাংলা/এইচএ/এমএম

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন