বিজ্ঞাপন

খাস জমি বন্দোবস্তে নিয়মের তোয়াক্কা করছে না হাতিয়া ভূমি অফিস!

February 16, 2019 | 8:00 pm

।। সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ভাঙা-গড়ার মধ্যেই চলছে উপকূলীয় অঞ্চল। দিন দিন বাড়ছে বাস্তুহারার সংখ্যা। আশ্রয়ের খোঁজে দ্বারে-দ্বারে ঘুরছে ভিটিমাটি হারা হাজারো মানুষ। অথচ নতুন জেগে ওঠা চরাঞ্চলে তাদের আশ্রয় দেওয়ার কথা থাকলেও পুনর্বাসনের নামে ভূমি চলে যাচ্ছে বিত্তবানদের দখলে। এমন চিত্র নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে। সম্প্রতি এলাকাটি ঘুরে এসেছেন সারাবাংলার স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সাদ্দাম হোসাইন। এ নিয়ে আজ থাকছে পাঁচ পর্বে তৈরি ধারাবাহিক প্রতিবেদনটির তৃতীয় পর্ব।

নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা হাতিয়ায় ভূমি বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে  নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগ, এই কর্মকর্তারা চরাঞ্চলের ভূমি অর্থের বিনিময়ে প্রভাবশালীদের বন্দোবস্ত দিয়েছেন। অথচ বন্দোবস্ত নীতিমালা অনুযায়ী এসব খাস জমি পাওয়ার একমাত্র যোগ্য হচ্ছেন ভূমিহীন কৃষকরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৭৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত হাতিয়ায় যত খাস জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে, অধিকাংশ সময়ই কোনো নিয়ম মানা হয়নি।  নীতিমালা অনুযায়ী জেগে ওঠা নতুন চরে ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়ার আগে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর থেকে মাঠ জরিপের মাধ্যমে তালিকা তৈরি করত হবে।  এরপর  খাস জমি বন্দোবস্ত দিতে হবে।  এজন্য জমির দিয়ারা জরিপ (নদী থেকে জেগে ওঠা চর ও জায়গার জন্য ভূমি জরিপ করা) তৈরি করতে হবে।  এরপর যাচাই-বাছাই শেষে ভূমি মন্ত্রণালয় প্রকৃত ভূমিহীনদের একটি চুড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করবে।  এরপর ওই গেজেট অনুযায়ী জেলা প্রশাসক একটি লিখিত নোটিশের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসগুলোকে বন্দোবস্তের বিষয়ে জানাবেন।  অথচ হাতিয়ায় এসব নিয়মের কোনো তোয়াক্কা করেনি ভূমি অফিস। এমনকি ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়ার তথ্য খোদ উপজেলা ভূমি অফিসেও কোনো হিসাব রাখা হয়নি।  অভিযোগ রয়েছে—এই ভূমি বন্দোবস্ত দিতে গিয়ে সরকারের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলও বন্দোবস্ত দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে হাতিয়ায় কোনো জমি বন্দোবস্তের গেজেট প্রকাশ করা হয়নি। কিন্ত দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অর্থাৎ ১৯৭২-৭৩ সালেও গেজেট প্রকাশ ছাড়াই তিন শতাধিক ভূমিহীনের নামে ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল।  কিন্তু উপজেলা ভূমি অফিস থেকে পাওয়া এক নথিতে দেখা গেছে,  ওই অর্থ বছরে বন্দোবস্ত দেওয়ার তালিকায় রয়েছে রয়েছে মাত্র ৬৪টি নথি।  এ সময় বন্দোবস্তের জমাবন্দির নথি পাওয়া উপজেলার সোনাদিয়া, চরকাদিরা, পূর্ববিরবি, জাহাজমারা, মোহাম্মদপুর ও মোক্তারিয়া মৌজার ভূমিহীনরা আজও এসব জমি বুঝে পেতে ভূমি অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

 উপজেলা ভূমি অফিস থেকে পাওয়া নথিতে দেখা যায়, ১৯৮৭-৮৮ অর্থ বছরে ১৫৮টি নথি (প্রতি নথিতে ১.৫০ একর) বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে।  একইভাবে ১৯৮৮-৮৯ অর্থ বছরে ২০৫টি, ১৯৯৮-৯৯ অর্থ বছরে ৮০টি, ১৯৯৯-২০০০ সালে ২৮৫টি, ২০০০-২০০১ সালে ৩১০টি, ২০০৩-২০০৪ সালে ৩৪৭টি এবং ২০০৪-০৫ মালে মাত্র ৪টি বন্দোবস্তের নথির হিসাব পাওয়া যায়।  এ তালিকায় আহমদ কবীর নামে তৎকালীন উপেজেলা ভূমি কর্মকতার স্বাক্ষর পাওয়া গেছে। এতে ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসের ২৮ তারিখ উল্লেখ করা হয়।  মাঝখানে কিছুদিন বিরতি দেওয়ার পর ফের ভূমি  বন্দোবস্ত দেওয়া শুরু হয় ২০০৮ সালের শেষের দিকে।

বিজ্ঞাপন

তৎকালীন উপজেলা ভূমি অফিস সহকারী আব্দুল মুকিতের ল্যাপটপ থেকে উদ্ধার করা নথি থেকে জানা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে ৫ হাজার ৭৩২ টি নথি, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৯ হাজার ৬৭৩টি, ২০১০-১১ অর্থ বছরে ১০ হাজার ৩৪৬ টি, ২০১১-১২ অর্থ বছরে ২৬ হাজার ৯০০টি, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ১৮ হাজার ৭৩০টি, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ২০ হাজার ৮৬০টি, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ১০ হাজার নথিসহ লক্ষাধিক নথি বন্দোবস্তের জন্য ফরম ছেড়েছিল উপজেলা ভূমি অফিস।  আর প্রতিটি নথির বিপরীতে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা করে প্রায় ২০০ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে এসব অর্থ ভূমি অফিসের কর্মকর্তা ও প্রভাবশালীরা আত্মসাৎ করেছেন।  অথচ এসব নথির বিষয়ে সরকারের কাছে হিসাব নেই।

এসব অনিয়মের অভিযোগে ২০১৬ সালে হাতিয়া থেকে বেগমগঞ্জে আব্দুল মুকিতকে বদলি করা হয়।  সেখান থেকে বছরখানেক পরে তাকে ফের কোম্পানীগঞ্জে বদলি করা হয়।  অথচ তিনি বলছেন এ সবের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।

বিজ্ঞাপন

হাতিয়া ভূমি অফিসের অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে  আব্দুল মুকিত এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কোনো অনিয়মের অভিযোগ ছিল না।  ভূমিহীনদের বন্দোবস্ত দেওয়ার কোনো ক্ষমতাও আমার ছিল না।  আমি একজন অফিস সহকারী।  এগুলো তো ইউএনও দিয়ে থাকেন। আমি তো কাগজপত্র প্রস্তুত করার দায়িত্বে ছিলাম।  আর ভূমি বন্দোবস্তে কোনো অনিয়মও হয়নি। ’ যারা অভিযোগ করছেন তারা ভুল অভিযোগ করছেন বলে দাবি করেন তিনি।

উপজেলা ভূমি অফিস থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে বন্দোবস্তের জন্য বাছাই করা হয় ৩ হাজার ৭২৯ টি পরিবারকে।  এর মধ্যে বন্দোবস্ত পায় ২ হাজার ৭০০ ভূমিহীন পরিবার।  বাদ পড়ে ১০২৯টি পরিবার। ২০০৯-১০ অর্থ বছরে বন্দোবস্তের জন্য বাছাই করা হয় ৮ হাজার ৬৫৫ টি ভূমিহীন পরিবার। আর বন্দোবস্ত দেওয়া হয় ৬ হাজার ৫১০ ভূমিহীন পরিবারকে। বাদ পড়ে ২ হাজার ১৫৫ পরিবার। ২০১০-১১ অর্থ বছরে বাছাই করা হয় ৩ হাজার ৭৯৯ টি ভূমিহীন পরিবার। আর বন্দোবস্ত পায় দুই হাজার ২২টি ভূমিহীন পরিবার। বাদ পড়ে ১ হাজার ৭৭৭টি পরিবার। ২০১১-১২ অর্থ বছরে বাছাই করা হয় ১৭ হাজার ৫৯১টি ভূমিহীন পরিবার। বন্দোবস্ত পেয়েছে ৯ হাজার ৫২৫টি ভূমিহীন পরিবার। বাদ পড়েছে ৮ হাজার ৬৬টি পরিবার। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে বাছাই করা হয় ৯ হাজার ৮৬৫ ভূমিহীন পরিবার। বন্দোবস্ত পায় ৭ হাজার ১২৭টি ভূমিহীন পরিবার। বাদ পড়েছে ২ হাজার ৭৩৮টি পরিবার। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে বাছাই করা হয় ৩৭২০টি ভূমিহীন পরিবার। বন্দোবস্ত পায় ১ হাজার ৮৩৬টি পরিবার। বাদ পড়েছে ১ হাজার ৮৮৪টি পরিবার। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে বাছাই করা হয় ২ হাজার ৫৩৮টি ভূমিহীন পরিবার। বন্দোবস্ত পায় ১ হাজার ৮৫৫টি ভূমিহীন পরিবার। বাদ পড়েছে ৬৮৩টি পরিবার। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে বাছাই করা হয় ৩ হাজার ৪৩৩টি ভূমিহীন পরিবার। বন্দোবস্ত পায় ২ হাজার ৮৪০টি ভূমিহীন পরিবার। বাদ পড়ে ৫৯৩টি পরিবার। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বাছাই করাহয় ৪ হাজার ৩১৯ টি ভূমিহীন পরিবার। আর বন্দোবস্ত পায় ৩ হাজার ২০০ ভূমিহীন পরিবার। বাদ পড়েছে ১ হাজার ১৯১ টি পরিবার এবং ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বাছাই করা হয় ২ হাজার ২৯টি ভূমিহীন পরিবার। বন্দোবস্ত পায় ১ হাজা ২২০টি ভূমিহীন পরিবার। বাদ পড়ে ৭২৯টি পরিবার। গত ১০ বছরে ৫৯ হাজার ৭৪০ টি ভূমিহীন পরিবার ভূমি বন্দোবস্তের জন্য ভূমি অফিস বাছাই করে।  এর মধ্যে বন্দোবস্ত পেয়েছে ৩৮ হাজার ৮৩৫টি পরিবার এবং বাদ পড়েছে ২০ হাজার ৯০৫টি ভূমিহীন পরিবার। অভিযোগ রয়েছে প্রতিটি নথির বিপরীতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়েছে। প্রতি নথিতে ২০ হাজার টাকা করে ধরা হলেও ১১৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা লুট করেছে ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা।

এসব নথি বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য দ্বীপের এ পরিমাণ খাস জমি নেই। তবে যেসব নথি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে সেগুলো বন বিভাগের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে আইন অনুযায়ী উপকূলীয় অঞ্চলে যে কোনো নতুন চর জেগে উঠলে বন বিভাগ সেটাতে বনায়ন করবে। এরপর চরটি লায়েক বা চাষাবাদের উপযোগী হলে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ওই চর অবমুক্ত করে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যে সরকার সেটিকে ভূমিহীনদের মধ্যে বন্দোবস্ত দেবে। কিন্তু হাতিয়া উপজেলা ভূমি অফিসে এই নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি।

এদিকে বন বিভাগের তথ্য মতে, ১৯৭৬ সালে নোয়াখালী উপকূলের চার লাখ একর নতুন ভূমিকে উপকূলীয় বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে সরকার। এতে বনায়ন করে বন বিভাগ।  নিয়ম অনুযায়ী বন বিভাগ থেকে কোনো ভূমি জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করলে প্রয়োজন সাপেক্ষে ওই ভূমি বন্দোবস্ত দিতে পারবেন জেলা প্রশাসক। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে এসব জমির মধ্যে কোনো জমি জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।

এছাড়া, ১৯৯৭ সালের ১২ মের ভূমি বন্দোবস্ত নীতিমালা অনুযায়ী নদী পয়স্তি জমি বা চরভূমির ক্ষেত্রে দিয়ারা জরিপ না হওয়া পর্যন্ত জমি বন্দোবস্ত দেওয়া যাবে না।  হাতিয়া উপকূলের ভূমি বন্দোবস্তে এসবের কিছুই মানা হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে উল্লিখিত নথিগুলো সরকারের বন বিভাগের জমি থেকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে।  এ নিয়ে উপকূলীয় বন বিভাগ ও উপজেলা ভূমি অফিস মুখোমুখি অবস্থান রয়েছে। বন বিভাগের দাবি, ভূমি অফিস অবৈধভাবে তাদের মালিকানাধীন বনাঞ্চল বন্দোবস্ত দিচ্ছে।

এদিকে ২০১৪ সালের ১১ নভেম্বর জাতীয় উদ্যানের ভূমি বন্দোবস্ত ও ভূমি বন্দোবস্তে অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরে হাইকোর্টে একটি রিট দাখিল করেন ব্যারিস্টার আবু বকর সিদ্দিক ও সাংবাদিক রফিক উদ্দিন এনায়েত। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ পর্যন্ত হাতিয়া উপকূলে কয়টি নথি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে তা জানতে চান।  একইসঙ্গে নিঝুম দ্বীপকে ইউনিয়ন ঘোষণাকারী, বন বিভাগ থেকে কত একর ভূমি অবমুক্ত করা হয়েছে, বনের মধ্যে নির্মিত বহুতল ভবনের পরিবেশ ছাড়পত্র আছে কি না, তার বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছেন।

এরপর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মামুন ২০১৫ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতকে লিখিতভাবে জানান, তার উপজেলায় ওই সময় পর্যন্ত মাত্র দুই হাজার ৪১৯টি পরিবারের মধ্যে ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। অথচ বর্তমান উপজেলা ভূমি অফিসের তথ্য বলছে, তখন পর্যন্ত ৩২ হাজার ২৫৮টি নথি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল।  আদালতে দেওয়া তথ্যের সঙ্গে এমন অসঙ্গতিই বলে দিচ্ছে দ্বীপটিতে যেসব ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বৈধভাবে দেওয়া হয়নি।

কিন্তু নোয়াখালীর জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে উপকূলীয় অঞ্চল নোয়াখালীর মোট ৭২ হাজার ১৭৮ দশমিক ৪৪ একর জমি মাঠ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য নোটিশ জারি করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।

ওই নোটিশ অনুযায়ী দেখা যায়, নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চল হাতিয়ায় মাত্র ৩ হাজার ৬৬১ দশমিক ১৭ একর ভূমি বন্দোবস্তের জন্য বিবেচনা করে দেখতে মাঠ পর্যায়ে কমিটি গঠন পূর্বক তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়। অথচ ২০১৬ সালে গেজেট প্রকাশের আগে থেকেই কোনো রকম পর্যবেক্ষণ ছাড়াই ভূমি অফিস প্রায় ৬০ হাজার একর জমি বন্দোবস্ত দিয়েছে ভূমিহীন হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে। যাদের অধিকাংশই প্রভাবশালী বিত্তবান। এতেই প্রমাণিত হয় পাহাড় সমান অনিয়মের চিত্র।

এসব বিষয়ে উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলছেন, তিনি অনিয়মের বিষয়ে কোনো কিছু জানেন না।  তিনি সেখানে যোগ দিয়েছেন ছয় মাস আগে। তার দাবি, এসব ঘটনা ঘটে থাকলে, সেটা অনেক আগেই হয়েছে।  তাই কোনো ভূমিহীন যদি অভিযোগ করে, তাহলে তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘যদি কেউ অনিয়মের মাধ্যমে ভূমি বন্দোবস্ত পেয়ে থাকেন, তাহলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অথচ হাতিয়া উপেজেলা ভূমিহীন পুনর্বাসন সমবায় সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম বলছেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে মৌখিক ও লিখিত—উভয়ভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি প্রশাসন। শেষ পর্যন্ত এই বিষয়ের প্রতিকার চেয়ে আদালতে মামলা করেছি, যেটি এখনও চলমান রয়েছে। কিন্তু ছয় মাস বা এক বছর পর কর্মকর্তারা বদলি হয়ে আসে-যান।  আর আমাদের অভিযোগ শোনেন। প্রকৃতপক্ষে আমাদের মতো ভূমিহীনদের জন্য তারা কিছুই করবেন না।  কারণ তারাও জড়িত এসব অনিয়মের সঙ্গে। ’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালীর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আব্দুর রউফ মণ্ডল বলেন, ‘ভূমি বন্দোবস্তে অনিয়মের কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। ’ তবে কেউ যদি অভিযোগ দেয় তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

আগামীকাল পড়ুন: মামলার জালে দিশেহারা ভূমিহীনরা-৪

দ্বিতীয় পর্ব: জমি বনের, বন্দোবস্ত দেয় ভূমি অফিস!
প্রথম পর্ব: দুর্গম চরেও ঠাঁই মিলছে না ভূমিহীনদের

সারাবাংলা/এসএইচ/এমএনএইচ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন