বিজ্ঞাপন

তারেকের ভাগ্য নির্ধারণ আজ, কী করবে বিএনপি?

October 10, 2018 | 8:29 am

।। আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের মধ্য দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আরেক দফা ভাগ্য নির্ধারণ হতে যাচ্ছে বুধবার (১০ অক্টোবর)।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ইতিহাসের জঘন্যতম গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক ও হত্যা— দু’টি মামলারই অন্যতম আসামি তারেক রহমান। খোদ তার আইনজীবীরাই বলছেন, মামলার রায় বিপক্ষে গেলে বিস্ফোরক আইনে যাবজ্জীবন এবং হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মৃত্যুদণ্ড হতে পারে তারেক রহমানের।

তবে দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডাদেশ নিয়ে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের ফাঁসি বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও এই মুহূর্তে বড় কোনো কর্মসূচি দেবে না বিএনপি। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

সাধারণত যে কোনো ধরনের বড় কর্মসূচির আগে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলকে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়। কারণ, এ তিনটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী সমর্থরাই রাজপথে বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করে।

বিভিন্ন মামলায় সারাদেশে এই মুহূর্তে বিএনপির ৯ হাজার নেতাকর্মী কারাগারে থাকলেও যুব দলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান, সাধারণ সম্পাদক একরামুল হাসান কারাগারের বাইরে রয়েছেন।

অর্থাৎ যুব দলের সাধারণ সম্পাদক ছাড়া রাজপথ দখল করার মতো বিএনপির প্রধান তিনটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কারাগারের বাইরে রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির পক্ষ থেকে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের কাছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় নিয়ে বিশেষ কোনো বার্তা পাঠানো হয়নি। অর্থাৎ রায় যাই হোক না কেন, এই মুহূর্তে বড় কোনো কর্মসূচি দিচ্ছে না বিএনপি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখানোর ক্ষেত্রেও সংযোমী থাকবে দলটি।

দলীয় সূত্রমতে, হাইকমান্ড থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, তারেক রহমানের রায়ের প্রতিবাদে শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাবে না বিএনপি। এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য নির্বাচনের আগে যতদূর সম্ভব ঝামেলা এড়িয়ে চলা। গ্রেফতার এড়িয়ে সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ থাকা।

তবে দলের সিদ্ধান্ত যাই থাক, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ফাঁসি বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হলে রাজধানীসহ সারা দেশে বিএনপি’র নেতাকর্মী সমর্থকরা কিছু সময়ের জন্য হলেও রাস্তায় নেমে আসতে পারেন বলে ধারণা করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘রায় সামনে রেখে আমরা তো কোনো অগ্রিম কর্মসূচি ঘোষণা করিনি। কিন্তু অন্যায়ভাবে যদি তারেক রহমান বা বিএনপির অন্য নেতাদের সাজা দেওয়া হয় তাহলে আমাদের নেতাকর্মীরা তো ঘরে বসে থাকবে না। তখন পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে যুব দলের কেন্দ্রীয় নেতা গিয়াস উদ্দীন মামুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘তারেক রহমানের রায় নিয়ে বিশেষ কোনো বার্তা যুব দলকে পাঠানো হয়নি। আমরা জানতে পেরেছি বিএনপির হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রায় ইস্যুতে বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি দেওয়া হবে না। তবে টুকটাক মিছিল টিছিল হতে পারে।’

এদিকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বড় কোনো সাজা হলেও লন্ডনে বসে দল পরিচালনার সুযোগ হাতছাড়া হবে না তারেক রহমানের। নির্বাসনে থেকে এখন যেমন দল পরিচালনা করছেন, তখনও তিনি দল পরিচালনা করতে পারবেন বলেই বিশ্বাস বিএনপি নেতাদের।

দলটির গঠনতন্ত্র থেকে ৭ নম্বর ধারা বাতিল করে দেওয়ায় তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছোঁড়ারও সুযোগও নেই। কারণ, দলটির গঠনতন্ত্রে ৭ নম্বর ধারায় ‘কমিটির সদস্যপদের অযোগ্যতা’ শিরোনামে বলা ছিল, ‘নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জাতীয় স্থায়ী কমিটি বা যেকোনো পর্যায়ের যেকোনো নির্বাহী কমিটির সদস্যপদের কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী পদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন, তারা হলেন— (ক) ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৮-এর বলে দণ্ডিত ব্যক্তি; (খ) দেউলিয়া; (গ) উন্মাদ বলে প্রমাণিত ব্যক্তি; (ঘ) সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি।

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলাগুলো দ্রুত গতিতে নিষ্পত্তির দিকে যেতে থাকায় তাদের সম্ভাব্য পরিণতির কথা বিবেচনা করে আগেভাগেই গঠনতন্ত্র থেকে ৭ নম্বর ধারা বাতিল করেছে বিএনপি। এতে করে দলের প্রধান দুই ব্যক্তি সাজাপ্রাপ্ত হলেও নেতৃত্বদানে কোনো সমস্যা নেই তাদের।

আর সে কারণেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানের সম্ভাব্য ফাঁসি বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নিয়ে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে কোনো সংকট দেখছেন না বিএনপির নেতারা। তারা বলছেন, এ মামলায় তারেক রহমানের সর্বোচ্চ সাজা হলেও বিএনপির নেতৃত্ব তার হাতেই থাকবে। লন্ডন থেকে তিনিই বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন।

‘তারেক রহমানের সর্বোচ্চ সাজা হলে বিএনপির নেতৃত্ব কে দেবেন’— এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘তো কী হয়েছে? তার সাজা তো আগেও দুই বার হয়েছে। তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন না? ২১ আগস্ট মামলায় সাজা হলেও তিনি বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন। আমাদের ম্যাডামও তো সাজা ভোগ করছেন। এগুলো আমাদের কাছে এখন আর কোনো ব্যাপার না।’

সারাবাংলা/এজেড/এসএমএন

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন