বিজ্ঞাপন

নজরুল ও শেখ মুজিব পাশাপাশি দুটি নাম : প্রধানমন্ত্রী

May 26, 2018 | 2:25 pm

।। সারাবাংলা ডেস্ক।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক উপাধি পেয়েছি, অনেক প্রস্তাব এখনও পড়ে আছে। আমি হয়ত সেদিকে বেশি সময় দিচ্ছি না। কিন্তু যখন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রস্তাবটা এলো আমার আকাঙ্ক্ষা দমন করতে পারিনি। তাই ছুটে এসেছি আপনাদের মাঝে।’

তিনি বলেন, ‘আমাকে যে সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে তা আমি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উৎসর্গ করছি, পাশাপাশি উৎসর্গ করছি বিশ্বের সমগ্র বাঙালিদের।’

শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম এদেশের শোষিত-নিপীড়িত মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছেন। শোষিত-নিপীড়িত মানুষের জন্যই তিনি বারবার কারাবরণ করেছেন। তেমনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও শোষিত-নিপীড়িত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেছেন। তিনিও বারবার কারাবরণ করেছেন। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তাদেরকে কেউ দমাতে পারেনি। তাই বলা যায় শোষিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজী নজরুল ইসলাম ও শেখ মুজিবুর রহমান পাশাপাশি দুটি নাম।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন এবং আমাদের জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত করেন। আমরা যখন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি সেই আন্দোলন-সংগ্রামে নজরুল ইসলাম আমাদের প্রেরণা। তিনি বাংলা সাহিত্যের কবি আর তেমনি রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজকে নজরুলের জন্মবার্ষিকীতে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতবাসী আমাদের পাশে ছিল। তারা এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দিয়েছেন। এ জন্য আমরা ভারত সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানাই।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের যে জয়বাংলা স্লোগান তা কবি নজরুলের কবিতা থেকে ধার করা। নজরুলের কবিতা বাংলার জয় হোক, বাংলা-বাঙালির জয় হোক। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জয়বাংলা স্লোগান তুলে ধরেছিলেন। সেই জয়বাংলা স্লোগান মহান আত্মত্যাগে আমাদের উদ্ধুদ্ধ করেছিল।’

বিজ্ঞাপন

মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকারের অবদান তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের জীবনে বারবার আঘাত এসেছে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। ওই সময় দেশে খাদ্য ছিল না, পানি ছিল না। রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা, এক কোটি মানুষ শরণার্থী। ওই সময় ভারত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।’

‘৭৫ এর পর আমরা বিদেশে ছিলাম। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আমাদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। মিসেস গান্ধী জার্মানি থেকে আমাদের নিয়ে এসে আশ্রয় দিয়েছেন। এমনকি আমার স্বজনদের আশ্রয় দিয়েছেন। প্রতিটি দুঃসময়ে আমি আপনাদের পাশে পেয়েছি।’

শিক্ষাখাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সাক্ষরতার হার ৭২ শতাংশ। প্রতি জেলায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় করছি এবং বহুমুখি বিশ্ববিদ্যালয় করার চেষ্টা চালাচ্ছি। আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে তারপরও আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি কীভাবে মানুষকে শিক্ষিত করা যায়। কারণ শিক্ষিত জাতি আমাদের সম্পদ।’

বিজ্ঞাপন

‘কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ভারতে কিন্তু তিনি বাংলাদেশের অনেক জায়গায় গিয়েছেন। আমরা ত্রিশালে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। তিনি কুমিল্লায় ছিলেন, সেখানে আমরা গবেষণা কেন্দ্র করেছি। জাতির পিতা সে আত্মজীবনী লিখেছেন সেখানে লিখেছেন ফরিদপুরে কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। একসঙ্গে তারা ছিলেন। এ থেকেই বোঝা যায় তাদের দুজনের মধ্য চেতনার মিল ছিল।’

নজরুল-রবীন্দ্রনাথ দুই বাংলার সম্পদ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলা ভাগ হয়েছে নজরুল-রবীন্দ্রনাথ ভাগ হয় নাই। এটা দ্ব্যার্থহীনভাবে আমরা বলতে পারি। তাই যখন এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে দাওয়াত দিয়েছে আমি চলে এসেছি।’

‘১৯৯৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে এসে আমি চুরুলিয়া গ্রামে গিয়েছি, সেটা করুণ অবস্থায় ছিল। মমতা ব্যানার্জীকে ধন্যবাদ দিই। তিনি চুরুলিয়ায় নজরুলের জন্মভিটাকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছেন।’

ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চিরজীবী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা প্রতিবেশী দেশ। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাব। আমরা একে অপরের সঙ্গে কাজ করে নজরুল গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাব সেটাই আমরা চাই।’

‘আমাদের দেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। মানবতার কারণে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। আমরা চাই, অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হোক। মাদক-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে জন্য প্রতিবেশী দেশের সহায়তা চাই।’

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনের মাধ্যমে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি.লিট) ডিগ্রি দেওয়া হয়। নজরুলের আদর্শে উদ্বুদ্ধ ও সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে এই ডিগ্রি দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ মে ভারত সফরে যান। সফরের প্রথম দিনে তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করেন। এদিন তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকও করেন। সফরের দ্বিতীয় দিন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যোগ দেন শেখ হাসিনা।

শনিবার সন্ধ্যায় দেশে ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

সারাবাংলা/একে

আরও পড়ুন

নজরুল-শেখ মুজিব পাশাপাশি দুটো নাম : প্রধানমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন