বিজ্ঞাপন

‘পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা ফিরে এসেছে’

September 16, 2018 | 12:49 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘একটি দেশকে উন্নত করতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা। এক্ষেত্রে আমাদের পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। এখন কিন্তু পুলিশের ওপর মানুষের একটা আস্থা-বিশ্বাসও ফিরে এসেছে। যেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।”

রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গাজীপুর ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ‘মুই ক্যাংকরি কমু বাহে, ভোট তো পাই না’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। এটা আমাদের ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ আমরা দেশকে সামনে নিয়ে যেতে চাই যেন বাংলাদেশকে কারও কাছে হাত পাততে না হয়। বাংলাদেশ আত্মসম্মান ও মর্যাদা নিয়ে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে এগিয়ে যাবে।

পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আজ আর্থসামাজিকভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা বাজেট বাড়িয়েছি। আমরা প্রথমবার সরকার গঠন করলাম, তখনই কিন্তু পুলিশের বাজেট বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। এভাবে প্রতিবছরই আমরা বাজেট বাড়াচ্ছি। যত ধরনের সমস্যা হচ্ছে, আমরা সেগুলো সমাধান করে দিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশ একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় যেন এগিয়ে যায়, সেদিকে লক্ষ রেখেই জনসেবা নিশ্চিত করার জন্য কয়েকটি বিভাগ করে দিয়েছি। আর মেট্রোপলিটন পুলিশ হওয়ার পরে মানুষের সেবাটা বাড়বে। উত্তরবঙ্গ একসময় সম্পূর্ণ অবহেলিত ছিল। এরই মধ্যে সেখানে আমরা ইপিজেড করে দিয়েছি, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- গাজীপুর ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের যাত্রা শুরু

জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালে আমরা সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করব। আমরা দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়তে চাই। আমরা ২০৪১ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

শতবর্ষী ডেলটা প্ল্যানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, শত বছর পরও বাংলাদেশ কিভাবে উন্নত থাকবে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এই পদক্ষেপটা নিয়েছি। যেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম সুন্দরভাবে বাঁচতে পার। এতে আমাদের তরুণ প্রজন্মের জীবনমান যেমন উন্নত হবে, আজকের যে শিশু তার ভবিষ্যত যেন আরও উন্নত হয় বা যে শিশুটা জন্ম নেবে সেও যেন একটা সুন্দর উন্নত দেশে জন্ম নিয়ে তার জীবন মানটা উন্নত করতে পারে, সুন্দরভাব বাঁচতে পারে, তা নিশ্চিত হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই পরিকল্পনাগুলো হাতে নিয়েছি।

মেট্রোপলিটন পুলিশ হওয়ায় গাজীপুর আর রংপুরের মানুষের সেবা পাওয়া আরও সহজ হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ দুই অঞ্চলের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, তারা সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে এবং আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও তরান্বিত হবে, সেটাই আমরা বিশ্বাস করি।

দেশের সব মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দিতে সরকার প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে সে বিষয়েও উল্লেখ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতার সময় যেখানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি, এখন তা হয়েছে ১৬ কোটি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের সেবা সময়মত জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রংপুরকে আলাদা প্রশাসনিক বিভাগ করা হয়েছে। শিল্পনগরী গাজীপুররকে মেট্রোপলিটন সিটি করা হয়েছে। মানুষ যাতে সেবা পায় সেজন্যই রংপুর ও গাজীপুরে মেট্রোপলিটন পুলিশ গড়ে তোলা হয়েছে।’

‘সত্যি কথা বলতে কি, আসলে সব থেকে বেশি কষ্টটা তাদেরই করতে হয়, তাদের কোনো কর্মঘণ্টা নাই, সময় নাই। মানুষ যখনই চাচ্ছে তখনই তাদের ছুটে যেতে হচ্ছে, তাদের কাজ করতে হচ্ছে।’

১৯৯৬ সালে তিনি যখন প্রথমবার ক্ষমতায় আসেন, পুলিশ মাত্র ২০ শতাংশ রেশন পেত। এখন তা বাড়িয়ে শতভাগ করা হয়েছে। পুলিশের সংখ্যা জনসংখ্যার তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল ছিল। তাদের চিকিৎসা, আবাসনের ভালো ব্যবস্থা ছিল না। সরকার সেসব বিষয়েও উদ্যোগ নিয়েছে।

পুলিশের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা রাজারবাগে হাসপাতাল নির্মাণ করে দিয়েছি, আবাসনের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করে দিয়েছি। আমি নিজেই দেখেছি, টিনের ঘর, বৃষ্টি আসলে পানি পড়ে, বিশ্রাম নিতে পারে না, একজন ঘুমালে পরে আরেকজন জায়গা পায় না এরকম একটা অবস্থা ছিল। প্যারেডের জন্য জায়গা ছিল না, মাঠের মধ্যে প্যারেড হতো, বৃষ্টি হলে প্যারেড করতে পারত না।’

‘আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে চেষ্টা করেছি এ বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার, উন্নত করার এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যাতে মানুষকে সেবা দিতে পারে, সেদিকে দৃষ্টি রেখেও আমরা কাজ করেছি। আজ রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ আমরা খুলে দিচ্ছি এইজন্য যে এই দুটি এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা যেন নিশ্চিত হয়।’

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে আইনশঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ দেশে আমাদের কিছ জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস বাংলা ভাই সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ বাহিনী এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পুলিশ, র‌্যাব ও আইনশ্খৃলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থার বলিষ্ঠ ভূমিকা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। তারা সময়োচিত পদক্ষেপ নিতে পেরেছেন বলেই আমরা জঙ্গিবাদ দমন করতে পেরেছি।’

বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা হরতাল-অবরোধের মধ্যে নাশকতা দমনে পুলিশের ভূমিকার কথাও অনুষ্ঠানে স্মরণ করে বলেন, ‘বিএনপি-জামাত জোটের অগ্নি সন্ত্রাসেরও শিকার হয়েছে আমাদের পুলিশ বাহিনী। প্রায় ২৭ জন পুলিশ সদস্য মৃত্যুবরণ করেছে এদের হাতে। তাদের আত্মার মাগফেরাত আমরা কামনা করি।’

‘আমরা দেশকে গড়ে তোলার জন্য সকল মানুষের সেবাটা নিশ্চিত করতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমরা ইতোমধ্যে পুলিশ বাহিনীর সংখ্যা বাড়িয়েছি, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং তাদের প্রমোশনের ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।’

‘এই যে নতুন মেট্রোপলিটন দুটো করলাম, এতে অনেক পুলিশ সদস্যের প্রমোশনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাছাড়া পদের দিক থেকেও আমরা একটু আপগ্রেড করে দিয়েছি’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন