May 25, 2018 | 1:51 pm
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কিছু সমস্যা থাকলেও সেগুলো বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব বলে আশাবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দুই প্রতিবেশী দেশ এক হয়ে চলতে চাই। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু একে একে আমরা সব সমস্যার সমাধান করেছি। এখনও কিছু কথা আছে। কিন্তু সে কথা এখন বলে এখানকার পরিবেশ নষ্ট করতে চাই না। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, যেকোনো সমস্যা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারব।’
শুক্রবার (২৫ মে) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ভবনে’র উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে দুই দেশের মধ্যেকার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। দুই দেশ মিলিয়ে গোটা অঞ্চলের পাল্টে দেওয়ার অঙ্গীকারও করেন তিনি। বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়াকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করার ক্ষেত্রে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এই অঞ্চলকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করতে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সদ্ভাব থাকা প্রয়োজন। আমাদের সবাইকে ভাবতে হবে, আমাদের শত্রু একটাই— দারিদ্র্য। আমরা শুধু বাংলাদেশ বা ভারত নয়, গোটা অঞ্চলকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে চাই, ক্ষুধামুক্ত করতে চাই। তৃণমূলে বা একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে যারা পড়ে রয়েছেন, আমরা চাই তাদেরও উন্নতির ধারায় নিয়ে আসতে, তাদেরও সমৃদ্ধ করতে। এই অঞ্চলে একটি মানুষও যেন দরিদ্র না থাকে, আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি। এর জন্য ভারত সহযোগিতা করছে। আমরাও সহযোগিতা করব।’
দুই দেশের সম্পর্কের ইতিবাচকতার ধারাবাহিকতায় রোহিঙ্গা ইস্যুতেও বাংলাদেশের পাশে ভারত থাকবে বলে আশা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। তারা আমাদের কাছে আশ্রয় নিতে এসেছে, তাদের আমরা ফিরিয়ে দিতে পারি না। কিন্তু আমরা চাই, তারা দ্রুত নিজেদের দেশে ফিরে যাক। তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে চাপ দেওয়ার বিষয়ে আমরা ভারতের সহযোগিতা চাই।’
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার নেতৃত্বে আমাদের যে স্বাধীনতার সংগ্রাম, তাতে ভারতবাসী আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাদের অবদান আমরা ভুলতে পারব না। ওই সময়ে যারা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়েছেন, তারা সবাই আমাদের স্বাধীনতার অর্জনে মিশে আছেন। ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় যারা যেকোনোভাবে আমাদের সহায়তা করেছেন, তাদের সবাইকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।’
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেকার সম্পর্কের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল, মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি। দুই দেশের সীমানা নিয়ে বিরোধের সমাধানে বাংলাদেশে আগেই আইন পাস হয়েছিল। পরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ দল-মত নির্বিশেষে ভারতের সংসদে সবাই সীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের বিল পাস করলেন। এ ঘটনা অভূতপূর্ব।’
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়কে বিশ্বের ইতিহাসে এক অনন্য নজির বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই ছিটমহল বিনিময়ে যুদ্ধ লেগে আছে। কিন্তু আমরা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ছিটমহল বিনিময় করেছি। দুইটি দেশ যে আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে ছিটমহল বিনিময় করতে পারে— আমি মনে করি, বিশ্বে এটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এর জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীসহ ভারতীয় সংসদে এ সংক্রান্ত বিল পাস করতে যারা সহায়তা করেছেন, তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা যেমন ভারতের কাছে সহায়তা পেয়েছিলাম, আমার কাছে মনে হয়েছে এ সময় এসে যেন ঠিক একইরকম সহায়তা পেলাম।
এর আগে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ‘বাংলাদেশ ভবনে’র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সবুজ কলি সেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহেনা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, দুই বাংলার জনপ্রিয় রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, কবি নুরুল হুদাসহ বাংলাদেশের রাজনীতি, কূটনীতি ও সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রতিনিধিরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময়ও তার সঙ্গে একই মঞ্চে ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই দুই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়াসহ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে আজ শুক্রবার সকালে কলকাতা যান শেখ হাসিনা। দমদমের নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে শান্তিনিকেতনে পৌঁছান তিনি। সেখানে তাকে স্বাগত জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সবুজ কলি সেন।
দুই দিনের সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠান শেষে শেখ হাসিনা কলকাতায় ফিরে কবি রবীন্দ্রনাথের বাড়ি জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি পরিদর্শন করবেন। সন্ধ্যায় হোটেল তাজ বেঙ্গল কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ চেম্বার নেতারা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
আগামীকাল শনিবার (২৬ মে) আসানসোলে কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তাকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রিতে ভূষিত করা হবে। অনুষ্ঠানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বর্ণপদক বিতরণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সারাবাংলা/টিআর/জেএএম
আরও পড়ুন-
বিশ্বভারতীতে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন হাসিনা-মোদি’র
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় চলছে: মোদি
রবীন্দ্রনাথের ওপর আমাদের অধিকারই বেশি: শেখ হাসিনা