বিজ্ঞাপন

বব চুলে বিউটিফুল

September 11, 2018 | 9:25 am

রাজনীন ফারজানা।।

বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো’র তারকা কিম কার্দাশিয়ানকে তার ভক্তরা লম্বা দীঘল চুলেই দেখে অভ্যস্ত। এ বছরের শুরুর দিকে শর্ট ববে নজর কাড়েন তিনি। একইভাবে তার ছোটবোন কাইলি কসমেটিক্সের মালিক কাইলি জেনারকেও প্রথম সন্তান জন্মদানের পর চুলে শর্ট বব দিতে দেখা গেছে। শুধু কারদাশিয়ান সিস্টাররাই নয় জনপ্রিয় হলিউড স্টার জেনিফার লরেন্স, সুপার মডেল বেলা হাদিদ, সঙ্গীতশিল্পী রিহানাকেও দেখা গেছে চুলে বব কাট দিতে। অন্যদিকে জনপ্রিয় সঙ্গিতশিল্পী কেটি পেরি প্রথমে তার লম্বা চুল ছেঁটে বব করেন আর এখন নজর কাড়ছেন একদম ছোট চুলের প্রিক্সিতে।

বব কাট নামে জনপ্রিয় ছোট চুলের এই নামকরণ হয়েছে ট্রানজিটিভ ভার্ব বা সকর্মক ক্রিয়া ‘বব’ থেকে যার অর্থ কোন কিছু কেটে ছোট করা। বব চুল থেকেই এসেছে ববি পিন। ছোট করে ছাটা বব চুলে স্টাইল করতেই এই ক্লিপের আবিষ্কার। ফ্যাশনের রূপ বদলের ধারায় বব চুল এখন দারুণ জনপ্রিয়। অনেকেই নিজের যত্নে বড় করা লম্বা চুল ছেঁটে একদম নতুন রূপে আবিষ্কার করছেন নিজেকে।

আন্তর্জাতিক তারকাদের কাছে ছোট চুলের ফ্যাশন এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। আমাদের দেশি তারকাদের লম্বা চুল কেটে ছোট করার প্রবণতা না দেখা গেলেও অনেক মেয়েই আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ট্রেন্ড অনুযায়ী নিজের লম্বা চুল কেটে ছোট করেছেন। শুধু ট্রেন্ড অনুসরণ করতেই নয়, অনেকে আবার প্রাত্যহিক জীবনযাপনে সুবিধার কথা বিবেচনা করে চুল ছোট করেছেন।

বিজ্ঞাপন

 

 

বিজ্ঞাপন

সংবাদকর্মী বীথি সপ্তর্ষীর চুলে বেশ নজরকাড়া বব। তিনি জানালেন কোন ফ্যাশন টেন্ড অনুসরণ করে নয় বরং নিজের সুবিধার জন্যই তিনি সবসময় ছোট চুল রাখেন। যেহেতু পেশাগত দায়িত্ব পালনে তাকে প্রচুর বাইরে বাইরে ঘুরতে হয় তাই ছোট চুল তার জন্য একইসাথে আরামদায়ক ও সুবিধাজনক। চুল ছোট থাকায় তাকে চুল বাঁধা নিয়ে অত চিন্তা করা লাগে না, গরম কম লাগে আর প্রতিদিন শ্যাম্পু করাও সহজ।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তন্বী। ক্লাস এইট থেকে রাখা লম্বা চুলগুলোর প্রতি তার ভীষণই মায়া। সামনে পিছে নানাভাবে কাটলেও কখনই চুল একদম ছোট করেননি তিনি। প্রথম সন্তানের জন্মের পর ম্যাটারনিটি লিভ কাটিয়ে অফিস শুরু করার পর তিনি চুল নিয়ে ঝামেলায় পড়েন। অফিসের সময় বাদ দিয়ে বাকি সময়টা বাসায় এসে বাচ্চাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। জীবনে প্রথমবারের মত চুল কেটে ছোট করেন তিনি। চুলে বব কাট দেওয়ার পর নিজের কাছেই নিজেকে দেখতে ভালো লাগছে তার কাছে। অথচ আগে ভাবতেন ছোট চুলে বুঝি তাকে মানাবে না। শুধু যে নিজেকে নতুন চেহারায় আবিষ্কার করেছেন তাই নয়, ছোট চুলের ফায়দাও অনেক বলে জানালেন তন্বী। চুল ধোয়া, শুকানো, বাঁধা নিয়ে কোন ঝামেলা নাই। দ্রুত শুকিয়ে যায় আবার ক্লিপ বা পাঞ্চ ক্লিপের সাহায্যে সহজেই ফ্যাশনেবল লুক দিতে পারেন তিনি।

 

বিজ্ঞাপন

 

একবিংশ শতাব্দীতে নানা রূপে নানাভাবে বারবার বব চুলের ফ্যাশন ফিরে এলেও শুরুটা হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে থেকেই। সে সময় লম্বা চুলকেই নারীত্বের বৈশিষ্ট্য মনে করা হলেও অল্পবয়সী মেয়েরা, কিছু অভিনেত্রী আর অল্প কিছু ফ্যাশনদুরস্ত নারী বব কাট করতেন। ১৯১০ সালে ফরাসী অভিনেত্রী পোলেইরের শর্ট বব আলোচিত হয়। ১৮৯০ থেকেই তিনি চুলে এই কাট দিতেন যদিও সমাজে সেটাকে খুব একটা শ্রদ্ধার চোখে দেখা হত না। এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধের কাজে জড়িত মেয়েদের মধ্যে চুল ছোট করার প্রবণতা দেখা যায়।

উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ইংরেজ সুন্দরী লেডি ডায়ানা কুপার ফ্যাশন সচেতনতার জন্য জনপ্রিয় ছিলেন। শৈশব থেকে প্রাপ্তবয়স সবসময়ই তার চুলে ছিল বব।

অন্যদিকে আটলান্টিকের ওপারে তখন বব কাট সাধারণ মেয়েদের মাঝেও জনপ্রিয় হতে থাকে। ১৯২০ এর দশকেই বব প্রথম মেইনস্ট্রিম ফ্যাশন ধারা হিসেবে জনপ্রিয় হয়। যুগের পর যুগ ধরে চলা নারীত্বের প্রতীক হিসেবে জনপ্রিয় লম্বা চুল, এই ধারণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অস্ত্র হয়ে ওঠে বব কাট। তখনও বয়স্ক মহিলারা এডওয়ার্ডিয়ান ফ্যাশন ধারা অনুসারে লম্বা জামা ও ভারী চুলের ফ্যাশন অনুসরণ করলেও অল্পবয়সী স্বাধীনচেতা মেয়েরা বব কাট করতেন।

 

 

বিখ্যাত আমেরিকান ডান্সার ইরিন ক্যাসল তখন নিত্য নতুন ফ্যাশন ট্রেন্ড চালু করছিলেন। ১৯১৫ তে তিনি চুলে বব করেন এবং তার নামেই এই কাটের নাম হয় ‘ক্যাসল বব’। ১৯২০ এর দশকের শুরু পর্যন্তও ক্যাসল কাট জনপ্রিয় ছিল। এরপর এই দশকের মধ্য থেকে শেষভাগ পর্যন্ত কলেন মুর এবং লাওজি ব্রুকস ফ্লেপারস নামক বব কাটকে আরও জনপ্রিয় করেন।

সে সময় হেয়রড্রেসারদের প্রধান কাজ ছিল লম্বা চুল কোঁকড়া করে বা নানাভাবে সাজানো। কিন্তু সাধারণ মেয়েদের মধ্যে ছোট চুলের কাট জনপ্রিয় হতে থাকায় সে সময়ের নাপিত ও হেয়ার ড্রেসাররাও বব কাট দিতে শুরু করেন। অনেক সেলুনের সামনে নারীদের দীর্ঘ লাইন দিতে দেখা যায় যারা তাদের যত্নে বড় করা লম্বা চুল কেটে বব করতে এসেছেন।

এভাবে দীর্ঘসময় ধরে জনপ্রিয় হয়েছে বব আর এক এক সময়ে এক এক রূপে ফিরে এসেছে। ববের আবার নানা ধরণ আছে।

আসুন দেখে নেই জনপ্রিয় কিছু বব কাটের ধরণ।

 

 

 

এ-লাইন ববঃ এ ধরণের কাটে সামনের দিকে মুখের থুঁতনি পর্যন্ত আর পিছনে তুলনামূলক খাটো করে চুল কাটা হয়। থুঁতনির কাছে কিছুটা বাঁকানো থাকে।

বাজ কাট ববঃ এই চুলের কাটে সামনের অংশের চুল কাঁধ পর্যন্ত লম্বা থাকে আর পেছনে বেশ অনেকটা ছেঁটে ফেলা হয়।

চিন লেন্থ ববঃ থুঁতনি বরাবর সমান করে কাটা হয়। এ ধরণের চুলের কাটে অনেকসময় সামনের দিকে ব্যাংস থাকে আবার অনেকসময় থাকে না।

শোল্ডার লেন্থ ববঃ কাঁধ পর্যন্ত লম্বা এই ববে খুব বেশি লেয়ার থাকে না। চুলগুলো একদম সোজা রাখা হয়।

শ্যাগি ববঃ রেজর দিয়ে কিছুটা মেসি বা এলোমেলো ভাবে কাটা হয় এই বব।

ইনভার্টেড ববঃ এই বব কিছুটা এ লাইন ববের মতই। পিছনের দিকে গোছা করা থাকে চুল আর একদম সোজা থাকার বদলে চুলের ডগার দিকে কার্ভ করে বা বাকিয়ে রাখা হয়। অনেকসময় গ্রাজুয়েটেড বব নামেও ডাকা হয় এরি কাটকে।

শিঙ্গেল ববঃ এই ববে পিছনের দিকে হেয়ার লাইন বরাবর ছোট করে চুল কাটা হয়। আর সাইডে বা মুখের পাশে চিক বা বরাবর ধারালো কার্ল করা হয়।

 

 

মডেল- বীথি সপ্তর্ষি

 

পড়ুন সুন্দর থাকার টিপসবব চুলে বিউটিফুল

সারাবাংলা/ আরএফ/ এসএস

 

 

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন