বিজ্ঞাপন

ভাষার টানে জন্মভূমিতে

February 21, 2018 | 2:16 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট 

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: নাড়ির টান বলে একটা শব্দ বাংলা ভাষায় বহুল প্রচলিত। সদ্যজাত শিশু যে নাড়ি কেটে মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয় সে নাড়ি যেখানে পোঁতা হয় সে জায়গাই নাকি তার মাটি! এই মাটির টান অস্বীকার করার সাধ্য নেই কারও।

নিষ্ঠুর মানব জীবন, কই আর কে নাড়ির খোঁজ নেওয়ার সময় পায়? তার উপর আছে জীবিকার তাড়না, রাজনৈতিক প্ররোচনা। যেতে তো হয়ই শিকড় কেটে! মানুষ তো আর গাছ নয়, কচুরিপানা!

তবে শিকড় কাটা হোক আর ভাসা, একটা টান সবার থাকে, হোক সেটা মাটির হোক সেটা ভাষার। টান একটা থাকেই। সে টানেই শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ৭০ জনের একটি দল বাংলাদেশে এসেছে ভারত থেকে। নিজেদের তারা ডাকে ‘ভয়েজার্স ক্লাব’ নামে। ভয়েজার বা জলযাত্রী অবশ্য তারা নন। ঢাকা এসেছেন বাসে চেপে, তবে নামকরণটা একদম বৃথা যায়নি।

বিজ্ঞাপন

ভয়েজাররা র‍্যাডক্লিফ লাইনে ভেসে যাওয়া মানুষ। ওপাড়ে তাদের নাম ‘বাঙাল’ এ পাড়ের বাংলাদেশ থেকে তারা যখন রাতারাতি ভেসে গিয়েছিলেন তখন ছিলেন নিতান্তই শিশু। দেশ কি জানতেন না, দেশভাগও বুঝতেন না। শুধু জানতেন সীমানার ওপাড়ে দেশটিই আসলে তাদের দেশ!

এই দেশের প্রতি লালিত ভালোবাসা বয়সের সঙ্গে বেড়ে পরিণত হয়েছে, ততদিনে তারা বয়সের ভারে ন্যুজ। কেউ কেউ খুব কষ্টে একটা লাঠি নিয়ে এসেছেন, কেউ আসছেন খুব সাবধানে, প্রতিটা পদক্ষেপ মেপে। এ বয়সে একবার পা হড়কালে উঠে দাঁড়ানো সহজ হবে না। তবুও ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে হবে জন্মভূমিতে এসে।

বুধবার সকাল সাড়ে আটটার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে টলমলে পায়ে ভয়েজার্স ক্লাব দলটি এগিয়ে আসে ফুল হাতে। শৈশবে এমন টলমলে পায়ে হেঁটেই হয়তো তাদের চলে যেতে হয়েছিল এ দেশ ছেড়ে। বৃদ্ধকালে এসে অন্তত এখানে তারা অনাহূত নয়। এটাই তাদের প্রশান্তি।

বিজ্ঞাপন

ভয়েজার্স ক্লাবের দলনেতা বিশ্বজিৎ সেন গুপ্ত। তিনিই এই গ্রুপের একমাত্র কম বয়সী মানুষ। জন্ম ওপারে তবে বিশ্বজিৎ-ও দাবি করেন তিনি ঢাকার ছেলে, কারণ তার বাবার জন্ম ঢাকার পাশে বিক্রমপুরে।

শহীদ মিনারের সামনে প্রভাত ফেরিতে আসা মানুষের ভিড়-ভাট্টা। তাও উৎসাহের কোনো কমতি নেই এই দলনেতার। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আমরা ৭০ জন গত ১৯ তারিখে ভারতের কলকাতা থেকে ঢাকায় এসেছি। আমরা সবাই বাংলাভাষায় কথা বলি। বাংলা আমাদেরও মাতৃভাষা। মাতৃভাষার টানে সীমান্ত পেরিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি।

বিশ্বজিৎ-এর কাছেই জানা যায়, ভয়েজার্স ক্লাবের সকলেই এক সময়ে পূর্ববাংলার (বর্তমানে বাংলাদেশ) অধিবাসী ছিলেন। দেশভাগের সময় তারা ভারত চলে যান। ভারত গেলেও পূর্ব-পুরুষের ইতিহাস আর মাতৃভাষাকে ভুলতে পারেননি তারা। তাই প্রতি বছরই দলটি শ্রদ্ধা জানাতে ২১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজির হন তারা।

ভয়েজারদের খুব আক্ষেপ, পশ্চিম বাংলায় নাকি এখন আর বিশুদ্ধ বাংলার চর্চা হয় না। সেখানে এখন একাধিক জনগোষ্ঠীর যৌথ সংস্কৃতির জীবন। পশ্চিম বাংলায় ভাষায় মিলে যাচ্ছে নানান রকমের ভাষা! তাই বাংলার টানটা তারা এখানেই পান।

শ্রদ্ধা জানানো হয়, নেমে যায় দলটি, কাল তারা ফেরত যাবেন ওপারের বাড়িতে। আবার আগামী বছর ফিরে আসবেন নাড়ির টানে, ভাষার টানে, যতদিন বাঁচবেন…

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেআইএল/এমএ

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন