বিজ্ঞাপন

ভিকারুননিসার ৩ শিক্ষক বরখাস্ত, বিভাগীয় মামলার নির্দেশ

December 5, 2018 | 12:56 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনা ও প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আরাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

বুধবার ( ৫ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ তথ্য জানান।

শিক্ষার্থী আত্মহত্যার ঘটনায় তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করার পাশাপাশি তাদের এমপিও বাতিল ও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ভিকারুননিসার শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীকে ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা’র অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে মন্ত্রণালয়ের গঠিত তিন সদস্যের কমিটি। 

তিনি বলেন, ভিকারুননিসা স্কুলের দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটির সব ধরনের অনিয়ম উঠে আসছে। অভিভাবকরাও নানা অনিয়মের কথা বলেছেন। ওই ঘটনায় তিনজনের নাম উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আক্তার ও শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনাকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করেছে গভর্নিং বডি। এ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে তাদের বরখাস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে যা দেওয়া হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত অংশ বলতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার শিফট ইনচার্জ জিনাত আরা ও শ্রেণী শিক্ষক হাসনা হেনাকে প্রতিবেদনে অভিযুক্ত করেছেন। তারা অরিত্রীর পিতামাতাকে ভয়ভীতি দেখায় এবং তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে অরিত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে।

বিজ্ঞাপন

পিতামাতার প্রতি অপমান ও অসম্মানের বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি বলেই অরিত্রীকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছে বলে তদন্ত কমিটির কাছে প্রতীয়মান হয়। যার দায় কোনোভাবেই তারা এড়াতে পারেন না। তাদের বিরুদ্ধে অরিত্রীর আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী হিসেবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে বলে তারা সুপারিশ করেছে।

তিনি বলেন, ‘এ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত তিনজনকে বরখাস্ত করার জন্য গর্ভনিং বডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অন্যান্য বিভাগীয় মামলাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই তিনজন শিক্ষকের এমপিও বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘মহামান্য হাইকোর্ট সেখানে একটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হবে। তারা পুরো ঘটনা যাচাই করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করবে। এটা হাইকোর্টের গাইডেন্সের মাধ্যমেই হবে। হাইকোর্টের এ নির্দেশের কারণে আমরা আরও বেশি সাহস পেয়েছি। আমরা আজই এ কমিটি করে দেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই, কোনো শিক্ষার্থীকে কোনোভাবেই শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা যাবে না। এটা অপরাধ। এটা করলে সংশ্লিষ্টকে শাস্তি পেতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী অরিত্রীর আত্মহত্যার ঘটনার পরে অভিভাবকরা নানা অভিযোগ করছেন। ঘটনার পর থেকে আমি অসংখ্য টেলিফোন পাচ্ছি, তারা তাদের ক্ষোভের কথা জানাচ্ছেন। আমি বলেছি, এ বিষয়গুলো আগে বলেননি কেন? অনেক ক্ষমতাবান ব্যক্তি অথচ তারা আগে বলেননি। তারা বলেছে, আমরা সাহস পাইনি, কারণ আমরা বললে আমাদের মেয়েকে শাসাতে পারে, সেই কারণে।’

নাহিদ বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত, ব্যথিত এবং খুবই কষ্ট পেয়েছি। ঘটনার দিন আমরা দুপুরে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা কমিটি গঠন করে তদন্ত করব। ফলে ঘটনার দিনেই আমরা সন্ধ্যার পরই কমিটি গঠন করেছি। আমরা কমিটিকে তিনদিন সময় দিয়েছিলাম যাতে বিষয়টি দ্রুত বিস্তারিত জানতে পারি। কমিটি গঠনের পর থেকে কাজ করে আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আমরা প্রতিবেদন পেয়েছি। এই প্রতিবেদনে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ওই ঘটনার জন্য শুধুমাত্র তিনজন দায়ী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছি তা নয় বরং আমরা সেই সঙ্গে অনেকগুলো অনিয়ম এবং অসঙ্গতির বিষয়গুলো অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পেয়েছি। ওখানে বহুদিন ধরে অধ্যক্ষ নেই, একজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বারবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও তারা নিয়ম না মেনে অধ্যক্ষ নিয়োগে তারা ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে এটাও একটি বড় ধরনের অনিয়ম।’

মন্ত্রী বলেন, ‘নিয়মের বাইরে তারা শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছেন। এখানে নির্দিষ্ট সংখ্যক সিট আছে। সেটা না মেনে তারা অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে। আমরা জেনেছি, পূর্বে সেখানে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে ১০ লাখ টাকাও নেওয়া হত। তারা যে পরিমাণ ছাত্র ভর্তির অনুমোদন পায় তারা তার চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষার্থিী ভর্তি করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শাখা খোলার অনুমোদন দেই না, তারপরও তারা শাখা খুলে ফেলে। এই তথ্যগুলো কেউ বলে না। মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা অনেক তথ্য পাই কিন্তু কোনো অভিভাবক-শিক্ষার্থী অভিযোগ করতে চান না, তারা ভয় পান। ফলে এ ঘটনার মধ্যদিয়ে আমরা অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পেয়েছি।’

সারাবাংলা/এইচএইচ/একে/জেডএফ

আরও পড়ুন

ক্ষমা চাইলেন ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ
শান্তিনগরে ভিকারুননিসা শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে: শিক্ষামন্ত্রী
ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, তদন্তে ৩ কমিটি
ভিকারুননিসার প্রভাতী শাখার প্রধান শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত
শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ
বুধবার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের
অরিত্রীকে আমরা ভুলে যাব
শিক্ষার্থীদের মানসিকতা আমরা বুঝছি না

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন