বিজ্ঞাপন

মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে যা জানা দরকার

November 6, 2018 | 12:20 am

।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।

বিজ্ঞাপন

প্রতি দুই বছর পরপরই আমেরিকানরা একটি নতুন প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ নির্বাচিত করেন। কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার দুই বছর পর যে নির্বাচনটি হয়, সেটি মধ্যবর্তী নির্বাচন নামে পরিচিত। মূলত প্রেসিডেন্টের মেয়াদের মাঝখানে অনুষ্ঠিত হয় বলেই এই নাম। যুক্তরাষ্ট্রে এইবারের মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর)।

অন্যান্য মধ্যবর্তী নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচনটি নানা দিক দিয়েই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এবারের নির্বাচনকে কেবল নির্বাচন নয়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সমর্থনের গণভোট হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভোটাররা তাদের ভোটের মাধ্যমে ঠিক করবেন প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের নিয়ন্ত্রণে কারা থাকবেন— ট্রাম্পের রিপাবলিকান দল, না কি ডেমোক্রেটরা!

কখন ফলাফল জানা যাবে?

বিজ্ঞাপন

ফলাফল প্রকাশ নির্ভর করে ভোট কত দ্রুত গণনা হবে ও প্রতিযোগিতা কত বেশি. তার ওপর। প্রতিযোগিতামূলক অনেক আসন হচ্ছে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে যেমন— ফ্লোরিডা, ক্যারোলিনা, পেনসিলভানিয়া ও ভার্জিনিয়া। এগুলোর ফলাফল স্থানীয় সময় রাত ৮টার মধ্যেই প্রকাশ পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে রাত ১১টার মধ্যেই জানা যাবে, কী হতে যাচ্ছে নির্বাচন পরবর্তী অবস্থা। ওইসময় ক্যালিফোর্নিয়ার ভোট গণনা শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর যদি এমনটা না হয়, তাহলে বেশ দেরি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এছাড়া, পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিনেট আসনের নির্বাচন হবে। তাই ফলাফল নিশ্চিত হতে বুধবার (৭ নভেম্বর) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

রিপাবলিকানদের জন্য নির্বাচনটি কত গুরুত্বপূর্ণ?

বর্তমানে প্রতিনিধি পরিষদের (নিম্নকক্ষ) ৪৩৫ আসনের মধ্যে রিপাবলিকানরা ২৩৫ আসনের দখলে আছে। ডেমোক্র্যাটদের দখলে আছে ১৯৩ আসন। এছাড়া শূন্য আছে সাতটি আসন। এদিকে সিনেটের (উচ্চকক্ষ) ১০০ আসনের মধ্যে দুই পক্ষের ব্যবধান ৫১-৪৯। আর ৬ নভেম্বর এই ব্যবধানে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে।

বিজ্ঞাপন

ডেমোক্র্যাটদের সুযোগ কতটা জোরদার?

ডেমোক্র্যাটদের কাছে সিনেটের চেয়ে প্রতিনিধি পরিষদের দখল নেওয়া বেশি সহজ বলেই জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা। প্রতিনিধি পরিষদে শূন্যস্থানগুলো পূরণেও বেশ চেষ্টা চালিয়েছে তারা। জোরদার প্রচারণা চালিয়েছে। জনমত জরিপগুলোতে তারা রিপাবলিকানদের চেয়ে এগিয়েও রয়েছে। অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, তারা প্রতিনিধি পরিষদের দখল নেওয়ার মতো আসনে জয় লাভ করবে।

আরও পড়ুন- মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচনে ইতিহাস গড়তে পারেন যারা

রয়টার্সের এক প্রতিবেদন অনুসারে, এই মধ্যবর্তী নির্বাচন হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে অর্থবহুল নির্বাচনগুলোর একটি। শুধুমাত্র প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচনী প্রচারণার জন্যই এখন পর্যন্ত খরচ করা হয়েছে ২৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

বিজ্ঞাপন

সিনেটে ক্ষমতার রদবদল হবে?

খুব সম্ভবত ‘না’। ডেমোক্র্যাটদের জন্য এটা বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জ। সিনেটের নিয়ন্ত্রণ নিতে হলে প্রথমত তাদেরকে বর্তমানে যে আসনগুলো তাদের দখলে আছে এর সবগুলো ধরে রাখতে হবে। এরকম আসনের সংখ্যা ২৬টি। এর মধ্যে দু’টি হচ্ছে স্বাধীন সিনেটরদের নিয়ন্ত্রণে। তারা সাধারণত ডেমোক্র্যাটদের পক্ষেই ভোট দেয়। এছাড়া, আরও ১০টি আসন হচ্ছে এমন রাজ্যগুলোতে যেগুলোতে ট্রাম্প ২০১৬ সালে জয়ী হয়েছে।

আরও পড়ুন- মধ্যবর্তী নির্বাচন: ট্রাম্পকে কোণঠাসা করতে চায় ডেমোক্রেটরা

নিজেদের আসন ধরে রাখার পাশাপাশি রিপাবলিকানদের দখলে থাকা অন্তত দুই বা তার অধিক আসনে জয় ছিনিয়ে আনতে হবে ডেমোক্র্যাটদের। আর এইবারের নির্বাচনে এমন আসনের সংখ্যা মাত্র নয়টি। এর মধ্যে ছয়টি আসনে ট্রাম্প ২০১৬ সালে ব্যাপক ব্যবধানে জয়ী হয়েছে। তবে ডেমোক্র্যাটদের জন্য কিছুটা সুসংবাদ হতে পারে যে, সাধারণত মধ্যবর্তী নির্বাচনে এমন আসনগুলোতে প্রেসিডেন্টের দল আসন হারিয়ে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে এখন পর্যন্ত রিপাবলিকানরা মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদে ২৬ টি আসন ও সিনেটে ৪টি আসন হারিয়েছে। আর এইবারের নির্বাচনটিকে ধরা হচ্ছে ‘ওয়েভ ইলেকশন’। এ ধরণের নির্বাচনের ফলাফল একপাক্ষিকভাবে এগিয়ে যায়, কংগ্রেসে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে কোন পক্ষ। এবার সেটা ডেমোক্র্যাটরা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

যে কারণে এটা ‘ওয়েভ ইলেকশন’ হতে পারে?

নির্বাচনটি ‘ওয়েভ ইলেকশন’ হওয়ার জন্য বেশ কিছু নির্দেশক রয়েছে। যেমন ট্রাম্পের অনুমোদন রেটিং হ্রাস পাওয়া, ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীদের অর্থায়নকারীর সংখ্যা নজিরবিহীনভাবে বৃদ্ধি পাওয়া, জনমত জরিপে ডেমোক্র্যাটদের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি। বিভিন্ন জনমত জরিপে দেখা গেছে, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ডেমোক্র্যাটরা ২১৮টির বেশি আসনে জয়ী হতে পারে। নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য এই আসন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি।

ডেমোক্র্যাটিক নিয়ন্ত্রিত নিম্নকক্ষ ট্রাম্পের জন্য কতটা ক্ষতিকর?

অনেক। নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রণ ডেমোক্র্যাটদের কাছে থাকলে ট্রাম্পের প্রধান বিলগুলো পাস হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ কেননা কোন বিল সিনেটে যাওয়ার আগে নিম্নকক্ষে পাস হয়ে যেতে হয়। বিল পাস ছাড়া, ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে নতুন তদন্ত চালু হতে পারে বা চলমান তদন্তই আরও জোরদার হতে পারে। এসব তদন্তের মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাত উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ নিয়েও তদন্ত চালু করতে পারে।

যদি সিনেটও ডেমোক্র্যাটদের দখলে চলে আসে তাহলে…

এক্ষেত্রে ট্রাম্প মহাবিপদে পড়বেন। কেননা সিনেটের দখল মানে হচ্ছে, ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্প মনোনীত যেকোনো সুপ্রিম কোর্ট প্রার্থীর নিয়োগের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারবে। পাশাপাশি, তার মন্ত্রীপরিষদের সকল নিয়োগও নিয়ন্ত্রণ করবে ডেমোক্র্যাটরা। নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষের নিয়ন্ত্রণ ডেমোক্র্যাটদের কাছে যাওয়া মানে আগামী দুই বছর যুক্তরাষ্ট্রের সকল বিল নির্ধারণ করবে ডেমোক্র্যাটরা।
(ব্লুমবার্গ, রয়টার্স ও গার্ডিয়ান অবলম্বনে)

আরও পড়ুন- মার্কিন নির্বাচন ইস্যুতে দশ হাজার ভুয়া টুইটার একাউন্ট বাতিল

সারাবাংলা/ আরএ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন