বিজ্ঞাপন

মাসিক নিয়ে ট্যাবু ভাঙ্গার এখনই সময়

May 28, 2018 | 2:23 pm

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা:  মাসিক একটি প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্য সর্ম্পকিত স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অথচ এই স্বাভাবিক বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করার চর্চা আমাদের সমাজে নেই। পরিবারের অন্য সদস্য, বিদ্যালয় বা অন্য কেউ তো দূরের কথা, মায়েরা পর্যন্ত মাসিক নিয়ে কথা বলেন না মেয়ের সঙ্গে। অথচ এ নিয়ে সামাজিক বিধিনিষেধ, ভুল ধারণা, রীতিনীতি নারী ও কিশোরীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে।

এমনি পরিস্থিতে আজ ২৮ মে বিশ্ব্যাপী পালিত হচ্ছে মাসিক স্বাস্থ্যবিধি দিবস। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে, আর নয় বাধা: সঠিক স্বাস্থ্যবিধির মাধ্যমে নারী ও কিশোরীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করি (No More Limits: Empowering Women and Girls Through Good Menstrual Hygiene)।

দুই থেকে আড়াই বছর আগে উন্নয়নকর্মী ফেরদৌস আর রুমী মিন্স্ট্রুয়াল হাইজিন নিয়ে কাজ করতে যান ভোলার চরফ্যাশনে। কিন্তু কেবল মেয়েদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে তিনি দেখতে পান, মেয়েরা নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করছে, লজ্জা পাচ্ছে। তারা বলছিল, ‘আপা এগুলো কী নিয়ে কথা বলছেন। অথচ সেখানে কোনও পুরুষ ছিল না।

বিজ্ঞাপন

কোস্ট ট্রাস্ট কাজ করছে ভোলার চরফ্যাশন, লালমোহনসহ তিনটি উপজেলায়। এ তিন উপজেলাতে আটশ বয়ঃসন্ধি ক্লাবে ৩২ হাজার সদস্য রয়েছে।

‘‘এদের সঙ্গে গত দুই বছর ধরে কাজ করছি এবং প্রথম দিকে কথা বলার সময়ে তারা খুব সংকোচ বোধ করতো’’, এ মন্তব্য করে প্রতিষ্ঠানটি সহকারী পরিচালক ফেরদৌস আরা রুমী আরো বলেন, এখন এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, তারা নিজেরাও এলাকায় সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করছে।

এখনও হাইজিন টেন্ডেন্সি, ট্যাবু, লুকোচুরি- এসব কারনে মেয়েরা সচেতন না।  তাদের অভিভাবকরাও সচেতন নন। সমাজে এখনও বিষয়টি একটি অচ্ছ্যুৎ বিষয়। কিন্তু এ সময়ে যে মেয়েদের পরিচর্যা, যত্ন, পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন সেটি পরিবার জানেও না।

বিজ্ঞাপন

অন্ধকার স্যাঁতস্যাতে জায়গায়তে পুরনো কাপড় শুকাতে দেবার কারনে পরবর্তী সময়ে মেয়েরা যে কতটা ঝুঁকির ভেতর দিয়ে যেতে পারে-সে সর্ম্পকে কোনও কথাই হচ্ছে না। অথচ এটি একটি স্বাস্থ্য সর্ম্পকিত বিষয়, একটি প্রাকৃতিক বিষয়।

ফেরদৌস আরা রুমী নিজের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, এসব এলাকায় মাসিকের সময় নিজ কন্যা সন্তানকে পুষ্টিকর খাবার, তাদের বিশেষ যত্ন, এই সময়ে স্কুলে পাঠানো, স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনে দেওয়াসহ মেয়েটির প্রয়োজনীয় নানা কাজের জন্য পিতামাতাকে সচেতন এবং উদ্বুদ্ধ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা দেওয়া হচ্ছে।

২০১৪ সালের বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাইজিন বেসলাইন সার্ভে থেকে জানা যায়, দেশের ৪০ শতাংশ মেয়ে মাসিক ঋতুচক্রের সময়ে তিনদিন স্কুল যায় না এবং এই ৪০ শতাংশের তিনভাগের এক ভাগ মেয়ে জানিয়েছে, স্কুল কামাই দেবার কারনে তাদের লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখনও মাত্র দশ শতাংশ মেয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে আর বাকী ৮৬ শতাংশ মেয়ে ব্যবহার করে পুরাতন কাপড়। অপরদিকে, মাত্র ৬ শতাংশ  মিন্সট্রুয়াল হাইজিন ম্যানেজমেন্ট সর্ম্পকে স্কুলে জানতে পারে।

বিজ্ঞাপন

অপরদিকে, জাতিসংঘ শিশু তহবিল ( ইউনিসেফ) এর তথ্যানুযায়ী, জীবনের প্রথম মাসিকের অভিজ্ঞতা অনেক মেয়ের কাছেই ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা। কারন এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনও তথ্য থাকে না এবং মায়েরা পর্যন্ত নিজ কন্যা সন্তানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন না।

“যেখানে আমরা কাজ করছি, কথা বলছি, সেখানে হয়তো মানুষ সচেতন হচ্ছে। কিন্তু সবাইতো সব জায়গায় কথা বলেন না। ক্লাসে এখনও শিক্ষকরা এই অধ্যায়গুলো পড়ান না, তারা বলেন-নিজেরা বাড়িতে পড়ে নিও। শিক্ষকরা যেখানে লজ্জা পান-সেখানে ছোটছোট মেয়েগুলো কী করে শিখবে?’’-  প্রশ্ন রাখেন রুমী।

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী সারা বাংলাকে বলেন, গড়ে ১২ বছর বয়স থেকে কিশোরীদের মাসিক শুরু হয়। মাসিক নারী জীবনের একটি স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সর্ম্পকিত বিষয়। শরীরের অন্যান্য জটিলতার কথা আমরা যেভাবে বলতে পারি, একটি স্বাভাবিক বিষয় হওয়া স্বত্ত্বেও মাসিক নিয়ে পরিবারে কথা হয় না। বরং তার প্রতি কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে তাকে একা করে দেওয়া হয়। তাকে আতঙ্কিত করে রাখা হয় ওই দিনগুলোতে।

ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী বলেন, গ্রামে এমনকী শহরেও মাসিকের সময়ে মাছ মাংস না খেতে দেবার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে, একটি কিশোরীর শরীরে সেসময় আরও বেশি পুষ্টির দরকার হয়। পরিবার বিশেষ করে বাবা মাকে এগিয়ে আসতে হবে। একজন কিশোরীকে এ সময় প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেবার পাশাপাশি তাকে সাহস জোগাতে হবে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের কিশোর-কিশোরী ও প্রজনন স্বাস্থ্য কর্মসূচির ব্যবস্থাপক মো. জয়নাল হক বলেন,  মাসিকের সময়ে সচেতনতামূলক বার্তা দেওয়ার জন্য তাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে এ বিষয়ে কথা বলার এবং ট্যাবু ভাঙার সময় চলে এসেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

 

সারাবাংলা/জেএ/ এসএস

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন