বিজ্ঞাপন

রবীন্দ্রনাথের ওপর আমাদের অধিকারই বেশি: শেখ হাসিনা

May 25, 2018 | 2:31 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ সারাবিশ্বের বাংলা ভাষাভাাষী মানুষের প্রাণের কবি হলেও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর বাংলাদেশের মানুষের অধিকার একটু বেশি বলেই মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সব মানুষেরই কবি। কিন্তু তিনি তার অধিকাংশ কবিতা বাংলাদেশে বসে লিখেছেন। তাই আমার কাছে কখনও কখনও মনে হয়, রবীন্দ্রনাথের ওপর আমাদের অধিকার একটু বেশি।’

শুক্রবার (২৫ মে) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ভবনে’র উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়কে এমনভাবে গড়ে তুলেছেন, যেন প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গিয়ে প্রকৃতি থেকে জ্ঞান আহরণ করার সুযোগ থাকে। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাইনি। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেক পুরনো। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। আমার সবসময় মনে হয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার আত্মার মিল রয়েছে। আমি সেভাবেই সবসময় চিন্তা করি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যখন ২০১০ সালে ভারত সফর করি, তখনই বিশ্বভারতীতে এই বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেই। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেভাবে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম করতে গড়ে তুলেছিলেন, বাংলাদেশ ভবনের নকশাতেও সেই একই ভাবনার প্রতিফলন রয়েছে। এই ভবনের নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যেন এখানকার প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের অন্তরে মিশে আছেন। মানবমনের সব ধরনের অনুভূতি প্রকাশ করতে চাইলে আমরা তার কথাতেই প্রকাশ করে থাকি।

বিজ্ঞাপন

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার আন্দোলন-সংগ্রামে রবীন্দ্রনাথ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাবা বেশিরভাগ সময়ই কারাগারে কাটিয়েছেন। ছোটবেলায় কমই পেয়েছি তাকে। তিনি সময় পেলেই তিনি বই পড়তেন, রবী ঠাকুরের কবিতা পড়তেন। স্টিমারে চড়ে ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়া যেতে তখন ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা লাগত। ওই সময় বাবা স্টিমারে বসে কবিতা আবৃত্তি করতেন, বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার গোটা জীবনই ছিল বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নিবেদিত। অনেক সময়ই তিনি অনেক সমস্যায় পড়তেন। প্রায়ই তিনি বলে উঠতেন, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে…।’ আবার তিনি দরাজ গলায় উচ্চারণ করতেন, ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ভয় নাই ওরে ভয় নাই/…।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন তারও অনুপ্রেরণা।

এর আগে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বাংলাদেশ ভবনে’র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সবুজ কলি সেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহেনা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, দুই বাংলার জনপ্রিয় রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, কবি নুরুল হুদাসহ বাংলাদেশের রাজনীতি, কূটনীতি ও সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রতিনিধিরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময়ও তার সঙ্গে একই মঞ্চে ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এই দুই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়াসহ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে আজ শুক্রবার সকালে কলকাতা যান শেখ হাসিনা। দমদমের নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে শান্তিনিকেতনে পৌঁছান তিনি। সেখানে তাকে স্বাগত জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সবুজ কলি সেন।

দুই দিনের সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠান শেষে শেখ হাসিনা কলকাতায় ফিরে কবি রবীন্দ্রনাথের বাড়ি জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি পরিদর্শন করবেন। সন্ধ্যায় হোটেল তাজ বেঙ্গল কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ চেম্বার নেতারা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

আগামীকাল শনিবার (২৬ মে) প্রধানমন্ত্রী আসানসোলে কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং ভাষণ দেবেন। সেখানে তাকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রিতে ভূষিত করা হবে। অনুষ্ঠানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বর্ণপদক বিতরণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সারাবাংলা/টিআর/জেএএম

আরও পড়ুন-

বিশ্বভারতীতে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন হাসিনা-মোদি’র

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় চলছে: মোদি

বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে সব সমস্যার সমাধান করতে পারব: প্রধানমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন