বিজ্ঞাপন

রূপালি রেখার তলে কর্ণফুলী টানেল, কাজ চলছে পুরোদমে

January 27, 2018 | 8:39 pm

মাহমুদ মেনন

বিজ্ঞাপন

শেষ শীতের ঝিরিঝিরি বাতাস কর্ণফুলী নদীর বুকে তুলেছে মৃদু ঢেউ। তার উপর পড়ে সকালের সূর্যালোক বানিয়েছে এক অপরূপ রূপালি রেখা। উপরের ছবিতে ঠিক যেখানটা দিয়ে রেখাটি বয়ে গেছে, ঠিক সেখানটা দিয়েই চলে যাবে একটি টানেল। নাম তার- মাল্টি-লেন রোড টানেল আন্ডার দ্য রিভার কর্ণফুলী।

প্রস্তাবিত এই টানেল সাইটে নদীর প্রস্থ ৭০০ মিটার। আর নদীর এখানটাতে পানির গভীরতা ৯ থেকে ১১ মিটার পর্যন্ত ওঠানামা করে। সেই ১১ মিটারেরও অনেক গভীরতায় নদীর তলদেশ ফুঁড়ে যাবে টানেল।

ফলে শেষ শীতে কর্ণফুলীর এই দৃশ্য কখনোই হারাবে না।

তবে দেশের পশ্চিমের জেলাগুলো এই টানেলের বহুলেনযুক্ত সড়ক ধরে যুক্ত হবে গোটা দেশের সাথে। দেশ পাবে তার গৌরবের উৎস হিসাবে নদীর নিচে প্রথম পাতাল পথ। বিশ্বের দেশে দেশে যে টানেলকে উন্নয়নের পথ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়, বাংলাদেশও যুক্ত হবে সেসব দেশের তালিকায়।

বিজ্ঞাপন

ভৌগলিকভাবে চট্টগ্রাম নগরকে দুইভাগে ভাগ করেছে এই কর্ণফুলী নদী। একদিকে মূল নগর ও বন্দর, অন্যদিকে শিল্প এলাকা। বেশ কিছু ভারী শিল্প এখানে গড়ে উঠেছে। যার আশীর্বাদে চট্টগ্রাম হয়ে উঠেছে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। নদীর উপর দিয়ে এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে তিনটি সেতু। তাও এই বাণিজ্য নগরীর প্রয়োজন মেটাতে পারছে না। আর সে কারণেই নদীর তলদেশ থেকে এই টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত।

গত সপ্তাহে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা অংশে সারাবাংলার ক্যামেরায় বন্দি হয় এই টানেল নির্মাণের কাজ। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পুরোদমে চলছে সে কাজ। এখন চলছে ‘টানেলের মুখ’ নির্মাণের বিশাল কর্মযজ্ঞ।

বন্দর নগরী থেকে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে এগিয়ে গেলে এই পতেঙ্গার যে অংশে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমি তারই পাশ ঘেঁষে দুই বর্গকিলোমিটারেরও বেশি এলাকা জুড়ে এই টানেল নির্মাণের প্রকল্প এলাকা। অদূরেই হযরত শাহ আমানত বিমানবন্দর।

এটি টানেলের শহর প্রান্ত। অপর প্রান্তটি নদীর পশ্চিম পাড়ে আনোয়ারা অংশে। ঠিক যেখানটাতে চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার(সিইউএফএল) সেখান থেকেই মাটি ফুঁড়ে বের হবে এই টানেল।

বিজ্ঞাপন

নেভাল একাডেমি কিংবা পতেঙ্গা প্রান্তেই এখন কাজ চলছে। প্রকল্প এলাকা ঘুরে চোখে পড়ল সে কর্মযজ্ঞ। সড়কের বিভিন্ন অংশেই টানানো হয়েছে- ‘সংরক্ষিত এলাকা’ নোটিশ বোর্ড। তবে বাইরে থেকেই দেখা যায় ভেতরে বড় বড় স্থাপনা করে বসানো হয়েছে ওয়ার্কশপ। বড় বড় ক্রেনে করে তোলা নির্মাণ সামগ্রী নেওয়া হচ্ছে এখান থেকে ওখানে। একটু পরপর ঘর্ঘর শব্দ তুলে ঢুকছে-বের হচ্ছে বিশালাকায় ট্রাকগুলো।

নদীর তীর ঘেঁষে নিরাপত্তা চৌকিতে নিযুক্ত হুমায়ুন কবির জানালেন, ভেতরে পুরোদমে এগিয়ে চলেছে টানেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। এখন বানানো হচ্ছে টানেলের মুখ।

টানেলটি হবে ৩.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ। যার জন্য প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

কর্ণফুলী নদীর নীচে একটি টানেল নির্মাণ করা হলে দেশের অর্থনীতি নতুন গতি পাবে এমন ভাবনা থেকে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পরপরই পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। নানা ধাপ পেরিয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০১৫ সালের নভেম্বরে। ততদিনে তৃতীয় দফায় সরকারে অধিষ্ঠিত হয়েছেন শেখ হাসিনা।

বারবার সরকার বদল না হলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে, প্রধানমন্ত্রী সে কথা প্রায়শঃই বলেন। তারই এক বাস্তব রূপ এই কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প। নতুন সরকার তার পূর্ব পরিকল্পনা অব্যহত রাখল এবং ২০১৬ সালের অক্টোবরে যখন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফর করলেন তখন দুই নেতার উপস্থিতিতে সই হলো কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ঋণ চুক্তি। সে চুক্তি অনুযায়ী চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদী এ ঋণ সহায়তা দেবে বলে ঠিক হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৭ ডিসেম্বর চীনা এক্সিম ব্যাংক এ সংক্রান্ত অর্থছাড় দেয়। ফলে কাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুত গতিতে।

বিজ্ঞাপন

সবকিছু ঠিকঠাক এগুলে ২০২০ সালে এই টানেল নির্মাণের কাজ শেষ হবে। চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কন্সট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন করছে। জি টু জি ভিত্তিতে এই প্রকল্পে অর্থায়নও করছে চীন।

প্রকল্প এলাকাতেও দেখা গেছে চীনা প্রকৌশলী-কর্মীরা নানা কাজে ন্যস্ত।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে মোট নির্মাণ খরচের মধ্যে ৭০ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা চীন ঋণসহায়তা হিসেবে দেবে। বাকি টাকা সরকারি তহবিল থেকে খরচ করা হবে।

‘প্রায় ১ হাজার ১শ ৮ কোটি টাকা ছাড় করেছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। গত ৭ ডিসেম্বর এ অর্থ ছাড় করেছে ব্যাংকটি। প্রথম কিস্তি ছাড় দেওয়ায় দেশের অন্যতম বৃহৎ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আর কোনও বাধা থাকলো না।’
 – ড. মতিউর রহমান, যুগ্ম সচিব, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (এশিয়া উইং)

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন