বিজ্ঞাপন

সাগর-রুনি হত্যার ৭ বছর, ৬২ বারেও জমা পড়েনি প্রতিবেদন

February 10, 2019 | 7:18 pm

।। আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নাহার হত্যা মামলার প্রতিবেদন ৬২ বারেও দাখিল করতে পারেননি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা । সংশ্লিষ্ট আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মামলাটির বাদী নিহত রুনির ছোট ভাই নওশের আলম রোমান সারাবাংলাকে বলেন, কিন্তু এ দীর্ঘ সময়েও এই হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি র‌্যাব। এ নিয়ে এখনও মুখ খুলছে না তারা। তদন্তে কোনো ধরনের অগ্রগতি না থাকলেও গত ৭ বছরে ৬২টি অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা। আদালতের কাছ থেকে দফায় দফায় সময় নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন- সাগর-রুনি হত্যার রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থতা নেই : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন

রোমান ক্ষোভের সঙ্গে জানান, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পূর্ণ হচ্ছে কাল (সোমবার, ১১ ফেব্রুয়ারি)। কিন্তু আমরা দুই পরিবারের স্বজনরা হতাশ। এসব নিয়ে কথা বলতেও আর ভালো লাগে না। অনেকেই আমার কাছে জানতে চান, আমরা উচ্চ আদালতে যাব কি না। এ হত্যার বিচার পেতে সব ধরনের প্রক্রিয়ার মধ্যেই আমরা যেতে আগ্রহী। কিন্তু কোনো ভরসা পাই না। আদৌ কোনো কাজ হবে, এমন আশা এখন আর নেই। কিন্তু আমার মা, সাগর ভাইয়ের মা এখনও তাদের সন্তান হত্যার বিচার পাবেন বলে বিশ্বাস করেন।

মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আব্দুল্লাহ আবু সারাবাংলাকে বলেন, মামলাটি  যে স্টেজে আছে, এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। যতক্ষণ না মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল না করছেন, ততক্ষণ  পর্যন্ত মামলার বিচার কাজ শুরু করা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য রয়েছে। এখনই কোনো ধরনের অগ্রগতি দেখছি না। তদন্ত কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, তারা যেন দ্রুত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন। যেন মামলার পরবর্তী কাজে যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আনিসুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাগর-রুনি হত্যার মামলায় আমাদের ক্লায়েন্ট জড়িত নয়। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। আসল অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। আমার ক্লায়েন্টদের বিরুদ্ধে মিথ্যা হয়রানিমূলকভাবে অভিযোগ আনা হয়েছে।’

আদালত সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ জানুয়ারি মাসের ৯ তারিখে মামলাটির প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ঠিক ছিল। কিন্তু ওই দিনও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের সহকারী পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারায় আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ঠিক করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

২০১২ সালের বছর ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার দিন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ঘটনাস্থলে এসে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেন। কিন্তু সেই ৪৮ ঘণ্টার ফল এখনও আট বছরেও শূন্য রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলাটির তদন্তের জন্য প্রথম ডিবি উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলম তদন্তভার নেন। এরপের ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, ওই বছরের ৭ জুন, ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর ও সর্বশেষ ২০১৭ বছরের ২১ মার্চ তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তদন্ত অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিটি প্রতিবেদনে প্রায় একই ধরনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন- সাগর-রুনি হত্যার বিচারে জোরালো পদক্ষেপ নেব: তথ্যমন্ত্রী

এ মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার ৮ জনের কেউই এখনপর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেনি। মামলার আসামিদের মধ্যে দুই জন বাড়ির দারোয়ান পলাশ রুদ্র পাল ও কথিত বন্ধু তানভীর রহমান জামিনে আছেন। অন্য ছয় আসামি মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু, বকুল মিয়া, কামরুল হাসান অরুন, রফিকুল ইসলাম, এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবিল ও আবু সাঈদ কারাগারে আটক আছেন।

২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সাগর-রুনির ভাড়া বাসার নিরাপত্তা প্রহরী এনামুল হক ও পলাশ রুদ্র পাল ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দেন।

২০১৩ সালের আগস্ট মাসে রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মো. সাইদ, মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ ও নিহত দম্পতির বন্ধু তানভীর রহমান এ ৫ জনকে মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণচন্দ্র হত্যার ঘটনায় র‌্যাব ও ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। এ পর্যন্ত  ১৫৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‌্যাব।

সারাবাংলা/এআই/জেডএফ 

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন