বিজ্ঞাপন

২১ আগস্ট মামলার অভিযোগে যা বলা হয়েছে

October 10, 2018 | 9:17 am

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ঘটনার ১৪ বছর ও প্রথম অভিযোগ গঠনের ১০ বছর পর চাঞ্চল্যকর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ বুধবার (১০ অক্টোবর)। এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ তৎকালীন সরকারের প্রশাসানিক দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। একইসঙ্গে মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারের কোনো চেষ্টা না করে এবং তাদেরকে আইনের আওতায় না এনে ২১ আগস্টের মতো আরও অনেক ঘটনার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর বারবার হামলার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, তদন্তে প্রকাশ পায়— ২০০০ সালের জুলাই মাসে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বোমা পুঁতে হত্যাচেষ্টা মামলাটি তদন্ত করে সিআইডি। সিআইডির এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান (এই মামলার আগের তদন্ত কর্মকর্তা) মামলাটির তদন্ত শেষে মুফতি হান্নানসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। একই সময় তিনি কোটালীপাড়া থানায় রাষ্ট্রদ্রোহ ও সরকার উৎখাতের চেষ্টা মামলাটির বাদী হন। ওই মামলায় মুফতি হান্নানসহ অন্য অপরাধীদের আসামি করেন।

আরো পড়ুন : জজ মিয়া নয়— ‘জালাল’, দুর্ধর্ষ নামের আড়ালে হারায় যে নাম

বিজ্ঞাপন

অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০০১ সালে মুফতি হান্নান তার জঙ্গি গোষ্ঠী নিয়ে সিলেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বোমা মেরে হত্যার চেষ্টা চালায়। ব্যর্থ হয়ে বোমা নিষ্ক্রিয় করার সময় দুই জঙ্গি নিহত হয়। এই মামলাটিও সিআইডি তদন্ত করে। তখন থেকেই সিআইডি’র এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান, এসএসপি আব্দুর রশিদ ও বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমীন ভালোভাবে অবহিত ছিলেন যে মুফতি আব্দুল হান্নান ও তার জঙ্গি গোষ্ঠী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাদের ক্রমাগতভাবে হত্যার চেষ্টা চালাচ্ছে। শুধু তাই নয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরাও এ বিষয়টি জানতেন।

গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় মুফতি হান্নানের এসব তৎপরতা নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে উল্লেখ করে অভিযোগে বলা হয়, তা সত্ত্বেও ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার তদন্তের প্রথম পর্যায় থেকে মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য অপরাধীদের বাঁচানোর উদ্দেশ্যে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে হান্নানসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের তদন্ত বা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো জজ মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে তার কাছ থেকে মিথ্যা ও বানোয়াট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়।

২০০৫ সালের ৫ অক্টোবর মুফতি হান্নান গ্রেফতার হয় র‌্যাবের হাতে। জিজ্ঞাসাবাদে মুফতি হান্নান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ সব গ্রেনেড হামলার দায়দায়ত্ব স্বীকার করে তার সহযোগীদের নাম প্রকাশ করে। তবে তাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়নি এবং তার সহযোগীদেরও চিহ্নিত করে গ্রেফতারের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও উল্লেখ করা হয় অভিযোগপত্রে।

বিজ্ঞাপন

আরো পড়ুন : ‘জ্ঞান ফিরলে দেখি, আমি লাশের ভেতরে শুয়ে আছি’

এতে আরও বলা হয়, মুফতি হান্নান গ্রেফতার হওয়ার পর জজ মিয়ার মিথ্যা বানোয়াট স্বীকারোক্তির সঙ্গে মিল রেখে এ মামলায় আসামি আবুল হাশেম রানা ও শফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। ২০০৫ সালের ১৬ নভেম্বর তাদের কাছ থেকেও একইভাবে মিথ্যা ও বানোয়াট স্বীকারোক্তি রেকর্ড করানো হয়।

অভিযোগে বলা হয়, মুফতি হান্নান গ্রেফতার থাকার সময় আসামি শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল গ্রেফতার হয়। সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার বিষয়টি সে স্বীকার করে। ওই সময় বিপুল জানায়, মুফতি হান্নানের কাছ থেকে গ্রেনেড সংগ্রহ করেই সে ওই হামলা চালায়। এ বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেওয়ার পরও ওই সময়ের সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি (পরবর্তী আইজিপি) খোদা বক্স চৌধুরী, বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমীন, সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সী আতিকুর রহমান (সবাই গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি) জেনেশুনেই প্রকৃত আসামিদের বাঁচাতে মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীদের এই মামলায় গ্রেফতার দেখাননি। তারা অন্যান্য বোমা ও গ্রেনেড হামলার ঘটনায় স্বীকারোক্তি নেওয়া সত্ত্বেও এই মামলার ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেননি।

অভিযোগে আরও বলা হয়, পুলিশ কর্মকর্তারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, বিশেষ করে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যায় মুফতি হান্নান ও জঙ্গি গোষ্ঠীর তৎপরতা সম্পর্কে জানলেও এবং তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও গ্রেফতারের চেষ্টা না করে তাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর বারবার হামলার সুযোগ করে দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতার হওয়ার পর মুফতি হান্নান তার জবানবন্দিতে নির্বিঘ্নে গ্রেনেড হামলা চালাতে প্রশাসনের সহায়তা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে উল্লেখ করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অভিযোগে বলা হয়, এই মামলার তদন্তে গ্রেনেড সরবরাহকারী হিসেবে মওলানা তাজউদ্দিনের নাম উঠে আসে। তবে তাকেও গ্রেফতারের চেষ্টা করা হয়নি। ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডই প্রমাণ করে যে তারা আগে থেকেই জানত— মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীরা প্রশাসনিক সহায়তায় ২১ আগস্ট হামালা করেছে। একইসঙ্গে মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীসহ এই হামলার মূল হোতাদের বাঁচাতে জজ মিয়া, আবুল হাশেম রানা ও শফিকুল ইসলামদের দ্বারা মিথ্যা ও বানোয়াট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করানো হয়।

আরো পড়ুন : তারেকের ভাগ্য নির্ধারণ আজ, কী করবে বিএনপি?

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, পরে মূল পরিকল্পনাকারী ওই সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নির্দেশে এবং ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞাতসারেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও গ্রেনেড সরবরাহকারী মওলানা তাজউদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রীর পিএস-২ লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, তার ভায়রা ভাই ডিজিএফআইয়ের সিটি আইবির জিএসও-১ লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার ও সিটি আইবির পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল, বর্তমানে মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন পরস্পর যোগসাজশে মূল অপরাধীদের রক্ষা করতে ভুয়া নামের পাসপোর্ট দিয়ে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ২০০৬ সালের ১০ অক্টোবর পাকিস্তানে পাঠাইয়া দেন। তারা আসামি মওলানা তাজউদ্দিনের বড় ভাই অভিযুক্ত আসামি আব্দুস সালাম পিন্টুকে গ্রেফতার করার কারণে তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি ফজলুল কবিরকে গ্রেফতারের ভয়ও দেখায়।

উল্লেখ্য, ঘটনার দীর্ঘ ১৪ বছর ও মামলার প্রথম অভিযোগপত্র দাখিলের ১০ বছর পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাগুলোর যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ঠিক করেছেন।

সারাবাংলা/এজেডকে/এআই/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন