বিজ্ঞাপন

৭ মার্চ: জনস্রোত এসে মিশছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

March 7, 2018 | 12:32 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। উত্তাল জনতার জোয়ার তখন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী) সবুজ দূর্বার গালিচায় অপেক্ষমাণ। মানুষের অপেক্ষা ছিল বঙ্গবন্ধুর তেজোদীপ্ত ভাষণ শোনার। নেতা আসবেন, নেতা বলবেন মুক্তির কথা। এদিন কানায় কানায় ভরে যায় রেসকোর্স ময়দানের বিশাল এলাকা।

পেরিয়েছে ৪৬ বছর। এরইমধ্যে গত বছরের অক্টোবরে জাতিসংঘের ইউনেস্কোর তালিকায় এসেছে ৭ মার্চের এই ভাষণ। ভাষণটি স্বীকৃতি পেয়েছে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে।

বিজ্ঞাপন

ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ার পর এবারই ৭ মার্চের বিষয়টি দলীয়ভাবে উদযাপন করছে আওয়ামী লীগ। ৭ মার্চের প্রবল জন-জোয়ারের মতো জোয়ার আসতে শুরু করেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

ঐতিহাসিক ৭ মার্চের বিশ্ব স্বীকৃতির অর্জনকে এবার আগামী জাতীয় নির্বাচনের নির্বাচনী বছরে ঢাকায় বিশাল জনসমাগম ঘটিয়ে নির্বাচনী শোডাউন দিয়ে নজির স্থাপন করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে সকল প্রস্ততি সম্পন্ন হয়েছে। দুপুর দুইটায় জনসভা শুরু হবে। নৌকা সাদৃশ্য বিশাল মঞ্চের এই জনসভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ১১টা থেকে জনসভায় যোগ দিতে ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের নেতাকর্মীরা উংসব আমেজে লাল-সবুজ, হলুদ- সাদা গেঞ্জি, ক্যাপ পরিধান করে মিছিল সহকারে জনসভাস্থলে প্রবেশ করা শুরু করে।

নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে সোহরাওয়াদী উদ্যানের তিন নেতার মাজার গেট, রমনা কালি মন্দির গেট, টিএসসি গেট, বাংলা একাডেমী গেট, চারুকলা গেট দিয়ে প্রবেশ করছে। আর ভিআইপিরা রমনার আইইবি গেট দিয়ে প্রবেশ করছে।

এদিকে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য শাহবাগ হয়ে মৎস্য ভবন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এছাড়াও কাটাবনের একপাশ বন্ধ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

গত বছর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতির পর এবারই প্রথম আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে উদ্‌যাপন করছে।

এদিকে চলতি বছর হচ্ছে জাতীয় নির্বাচনী বছর। ফলে আগামীকাল ৭ মার্চ আরও বড় আয়োজনে জনসভার উদ্‌যাপন করার জন্য এরইমধ্যে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন আওয়ামী লীগ।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবার জনসভা মঞ্চটি করা হয়েছে আইইবি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লেকের পাশে। নৌকা সাদৃশ্য মঞ্চটি উত্তর-দক্ষিণমুখিভাবে তৈরি করা হয়েছে। মঞ্চের দুই পাশসহ গোটা সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ ৭ মার্চের ভাষণ সম্বলিত বিভিন্ন ফেস্টুন সাঁটানো হয়েছে। মাঠের চারপাশে ভ্রাম্যমাণ টয়লেটসহ, পানির ট্যাপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের বিভিন্ন সড়ক পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মাইক লাগানো হয়েছে।

বাংলাদশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বে ১৯৭১ সালরে ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। গত বছরের অক্টোবরে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা-ইউনেস্কা বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণকে বিশ্ব ঐহিত্যের স্বীকৃতি দেয়। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ওই ভাষণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করে বাঙালি জাতি। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে মুক্তকামী মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। প্রকৃত প্রস্তাবে ওই ভাষণই ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা। দিবসটিতে প্রতিবছরই রাজধানীতে জনসভা করে দলটি। তবে এ বছর ৭ মার্চ বিশ্ব স্বীকৃতির অর্জনের পর এবার অন্যমাত্রায় উদ্‌যাপন করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ৭ মার্চ জনতার জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির কাছে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের চেতনাকে সুসংহত করতে দেশবাসীর কাছে সহযোগিতা চাইবেন। সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ মার্চের জনসভাস্থল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘এবার বিশ্বস্বীকৃতির পর ৭ মার্চের যে তাৎপর্য তাতে জনগণের প্রবল আগ্রহের একটা ঢেউ পরিলক্ষিত হচ্ছে সারাদেশে। কাজেই এবারকার জনসভা আমার তো মনে ঢাকার আশপাশের সব নদীর ঢেউগুলো জনস্রোত হয়ে সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্রে মিশে যাবে এবং ঢাকার সব পথ একপথে এসে মিশে যাবে সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানের মোহনায়।’

গত ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কোর একটি উপদেষ্টা কমিটি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণটিকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ‘মেমোরি অব দা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রারে’ অন্তর্ভুক্ত করে। সারাবিশ্ব থেকে আসা প্রস্তাবগুলো দুবছর ধরে নানা পর্যালোচনার পর উপদেষ্টা কমিটি তাদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করে।

ইউনেস্কো মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা গত ৩০ অক্টোবর এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগম আন্দোলনের পটভূমি নতুন মাত্রা পায়। সেদিন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ আর ভাষণ শেষে স্বাধীনতার পক্ষে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছিল সেইদিনের ঢাকার রাজপথ।

সারাবাংলা/এনআর/একে

আরও পড়ুন

৭ মার্চ ১৯৭১ : এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম

ওয়াজেদ মিয়ার লেখায়: ৭ মার্চের পর মৃত্যুতেও তৈরি ছিলেন বঙ্গবন্ধু

জনসমুদ্রে জাতির সহযোগিতা চাইবেন শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন