বিজ্ঞাপন

অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ বাড়ায় জনমনে আতঙ্ক

October 23, 2018 | 12:09 pm

।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: অজ্ঞাত পরিচয় লাশ বৃদ্ধি পাওয়ায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গত ২১ অক্টোবর একদিনে রাজধানী ও তার পাশের জেলায় ছয়টি অজ্ঞাত লাশ পাওয়ায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসব লাশ পাওয়ার বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকেও ভাবিয়ে তুলেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামনে নির্বাচন। এই মুহূর্তে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য হয়ত কেউ কেউ হত্যাকাণ্ডকে ব্যবহার করছেন। রাস্তায় এরকমভাবে লাশ পড়ে থাকার বিষয়টি উদ্বেগজনক। অচিরেই তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

এদিকে পুলিশ বলছে, অজ্ঞাত পরিচয় লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তারাও উদ্বিগ্ন। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

পল্টনে হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী নাজমুল শামস সারাবংলাকে বলেন, ‘নির্বাচন আসছে। এ মুহূর্তে কে কাকে মারছে, লাশ ফেলে রাখছে! সবার মাঝে আতঙ্ক রয়েছে। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় পরিবার সদস্যরা সাবধান থাকতে বলেন।

বাংলামোটরে কথা হয় চাকরিজীবী সোহেল রানার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নিঃশ্বাসের বিশ্বাস নেই। যে কেউ কাউকে ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলতে পারে। অনেকেই বিচার চান, কিন্তু সবসময় তো বিচার পাওয়া যায় না।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন রাজবাড়ী থেকে রোকনুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘সবখানেই লাশ উদ্ধার হচ্ছে। কারা মারছে তা পুলিশের উচিৎ ভালোভাবে তদন্ত করা।’

বিজ্ঞাপন

হঠাৎ করে অজ্ঞাত পরিচয় লাশ পাওয়ার ঘটনার কারণ কী জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কারও কারও কাছে এ বছরটি সহিংতার বছর হিসেবে পরিচিত। তবে এখনও তার চিত্র দেখা যায়নি। হয়ত সামনে হবে। এর আগেই অনেকে হয়ত সুযোগ নিচ্ছে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে। তবে লাশ উদ্ধারের ঘটনা ‍খুবই উদ্বেগজনক।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের গণমাধ্যম শাখার সহকারি পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা বলেন, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার ও দিয়াবাড়িতে লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ আরও বেশি সতর্ক রয়েছে। আগের চেয়ে এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে। যাতে কেউ পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ ফেলে যেতে না পারে।

জানতে চাইলে ডিএমপির উপ-কমিশনার (ক্রাইম) মুনতাসির রহমান রনি বলেন, ‘এসব হত্যাকাণ্ড খুবই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হয়ে থাকে। দুই একটা বাদ দিয়ে প্রত্যেকটি হত্যার খুনিদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। কোনোটার বেশি সময় লেগেছে আবার কোনোটার স্বল্প সময়ের মধ্যে রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে।’

কারা এরকম ঘটনা ঘটিয়েছে তা অচিরেই বের করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

গত ২১ অক্টোবর সকালে রাজধানীর দিয়াবাড়ি এলাকার একটি কাশবনের ভেতর থেকে অজ্ঞাত পরিচয় দুই যুবকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে তুরাগ থানা পুলিশ। প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্টে পুলিশ জানতে পারে, নিহতদের শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। তাদের নাম পরিচয় এখনো শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। লাশ ময়না তদন্তের জন্য রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে।

একইদিন সকালের দিকে খবর পেয়ে পুলিশ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের পাঁচরুখি এলাকা থেকে চার জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় তাদের পাশ থেকে একটি মাইক্রোবাস ও গুলিসহ একটি পিস্তল উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশের দাবি, লাশগুলো অন্যত্র থেকে এনে এখানে ফেলে দেওয়া হয়েছে। শনিবার (২০ অক্টোবর) দিবাগত রাতের কোনো এক সময় লাশগুলো আড়াইহাজারের এই জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। পরে লাশগুলো ময়না তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ময়না তদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আসাদুজ্জামান বলেন, চার লাশের তিনজনেরই মাথায় গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। বাকিজনের মাথা পেছন থেকে থেতলে দেওয়া হয়েছে।

পরে ২২ অক্টোবর সকালে এসে নিহতের তিনজনের স্বজন এসে পরিচয় শনাক্ত করেন। নিহতরা হলেন, পাবনার আতাউকুলা থানার পুষ্পপাড়া গ্রামের জহিরুল ইসলাম, একই গ্রামের খাইরুল সরদারের ছেলে সবুজ সরদার ও জামাল প্রামাণিকের ছেলে ফারুক প্রামাণিক।

জহিরুলের পরিচয় শনাক্ত তার শ্বশুর নজরুল ইসলাম। এর আগে ২১ অক্টোবর সকালে আরেকজনকে লুৎফর মোল্লা বলে শনাক্ত করেন তার স্ত্রী রেশমা বেগম।

নিহত ফারুকের বাবা জামাল প্রামাণিক বলেন, ফারুক গত ১৫ বছর থেকে রূপগঞ্জের গাউছিয়ায় বাস থাকত। সেখানে ফারুক বাস চালাত। গত ১৫ অক্টোবর ডিবি পরিচয়ে তাকে গাউছিয়া এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায়। তার সাথে সবুজ ও জহিরুলসহ অন্য আরও একজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। যাদের তিনজনের লাশ মেলে আড়াইহাজারের ওই গ্রামে।

জহিরুলের শ্বশুর নজরুল বলেন, জহিরুল বেকারিতে কাজ করত। গ্রাম থেকে তাকে ফারুক নিয়ে এসেছে। শুনেছিলাম ফারুক একজন ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। ফারুক বাকিদের সবাইকে নিয়ে এসেছিল।

নারায়ণগঞ্জ পুলিশের একটি সুত্র জানিয়েছে, নিহতরা পেশাদার ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। কীভাবে বা কাদের হাতে মৃত্যু হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, আড়াইহাজারে চারজনকে কারা হত্যা করেছে তার তদন্ত হচ্ছে। নিহতদের মধ্যে কেউ কেউ ছিনতাইকারী বলে শোনা যাচ্ছে। প্রতিপক্ষ কোনো গ্রুপ ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে হত্যা করেছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান পুলিশ সুপার।

এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল তিনশ ফুট সড়কের ১১ নম্বর ব্রিজের নিচ থেকে অজ্ঞাত পরিচয় তিন যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহতদের স্বজনরা দাবি করেন, নিহতদের বাড়ি ঢাকাতে। তারা ব্যবসায়িক কাজে ঝিনাইদহে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে ঘটনার কয়েকদিন আগে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ডিবি পরিচয়ে যাত্রীবাহী বাস থেকে তাদের নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। নিহত তিন জন হলেন, রাজধানীর মহাখালীর শহীদুল্লাহর ছেলে সোহাগ, মুগদা এলাকার আবদুল মান্নানের ছেলে শিমুল ও একই এলাকার আবদুল ওয়াহাব মিয়ার ছেলে নুর হোসেন ওরফে বাবু। এর মধ্যে শিমুল ও বাবু সম্পর্কে ভায়রা ভাই।

এ ঘটনায় রুপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান মনির সারাবাংলাকে বলেন, তিন যুবকের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত এখনো চলছে। লাশ উদ্ধারের সময় তাদের পকেট থেকে ইয়াবা পাওয়া গিয়েছিল। তদন্ত শেষ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন