বিজ্ঞাপন

অটল বিহারী বাজপেয়ীর মৃত্যু: ‘প্রকৃত বন্ধু’ হারাল বাংলাদেশ

August 16, 2018 | 6:52 pm

।। সারাবাংলা ডেস্ক।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগে ৯৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অকৃ্ত্রিম বন্ধু ও ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী।

দিল্লীর অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স (এইমস) হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন বাজপেয়ী। গত ১১ জুন শারীরিক নানা সমস্যা নিয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ডায়াবেটিস, কিডনিজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে হৃদরোগেও আক্রান্ত হয়েছিলেন বাজপেয়ী।

বুধবার রাতে শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার ৫টা ০৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অটল বিহারী।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৫ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ীকে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা দেয় বাংলাদেশ সরকার। বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছ থেকে অটল বিহারী বাজপেয়ীর পক্ষে সম্মাননা নিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

ওই সম্মাননা অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজপেয়ীকে বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।

বাজপেয়ী ভারতের লোসভার সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে অবদান রাখেন। ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা হিসেবে ১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৩ দিন দায়িত্ব পালন করেন এবং পরে ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ মেয়াদে তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

ভারত সরকার অটল বিহারী বাজপেয়ীকে ১৯৯২ সালে তাকে ‘পদ্মবিভূষণ’ এবং ২০১৪ সালে ‘ভারতরত্ন’ পদকে ভূষিত করে।

বাজপেয়ীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ার খবর পেয়ে তাকে বৃহস্পতিবার সকালে দেখতে যান ভারতের উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, লালকৃষ্ণ আদভানি ও শাহনেওয়াজ হুসেন।

বাজপেয়ীর শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর পেয়েই বুধবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাজপেয়ীর শারীরিক পরিস্থিতির খোঁজখবর নেন তিনি। হাসপাতালে প্রায় ৫০ মিনিটের মতো সময় কাটান মোদী।

বিজ্ঞাপন

বাজপেয়ীকে মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা:  ২০১৫ সালের ৭ জুন বিদেশি এই বন্ধুকে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা দেয় বাংলাদেশ সরকার।

সম্মাননা গ্রহণের পর দেওয়া বক্তব্যে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, অটল বিহারী বাজপেয়ী তার সারাজীবন দেশ ও সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের জন্য এ মহান নেতাকে বাংলাদেশ সম্মানীত করছে। এটি আমার জন্য এক সৌভাগ্যের মুহূর্ত। ভারতবাসীর জন্যও এক গৌরবের মুহূর্ত।’

মোদী বলেন, ‘একটি কথা, হয়ত আমি আগে কখনো বলিনি। আজ বলতে পেরে আমি গর্ববোধ করছি। আমি রাজনীতিতে দেরিতে এসেছি, ১৯৯০’র এর দশকে। কিন্তু অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে ভারতীয় জনসংঘ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে যে সত্যাগ্রহ করেছিল, একজন স্বেচ্ছাসেবক যুবকর্মী হিসেবে ওই সত্যগ্রহে যোগ দিতে আমি গ্রাম থেকে দিল্লি এসেছিলাম।’

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বরে ভারতীয় পার্লামেন্টে তখনকার বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে অটল বিহারী বাজপেয়ীর দেওয়া বক্তব্য তুলে ধরে মোদী বলেন, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব বলতে কী বোঝায়, তা ওই বক্তব্যে বোঝা যায়।

বাজপেয়ী বলেছিলেন, দেরিতে হলেও, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়ে একটি সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু

বঙ্গভবনের দরবার হলে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীকে মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের রাজনৈতিক মহলকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষে আনতে বাজপেয়ী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

অটলবিহারী বাজপেয়ীকে বাংলাদেশের একজন প্রকৃত বন্ধু একথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাকে মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে আমি সম্মানিত বোধ করছি।

বাজপেয়ীর উত্তরসূরী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে এ সম্মাননা হস্তান্তরে শেখ হাসিনা তার আনন্দ ও সন্তোষের কথা প্রকাশ করে বলেন, ‘১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ ভারতকে পাশে পেয়েছিল। ওই সময় ভারত বাংলাদেশী শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতিবিদ হিসেবে শ্রী বাজপেয়ীর অকুণ্ঠ সমর্থন ভারতীয় রাজনীতিকদের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বাজপেয়ীর কাছ থেকে সব সময় সহমর্মিতা ও সহযোগিতা পেয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে তিনি এ স্বাক্ষর রেখেছেন।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধুদের সম্মান জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সর্বোচ্চ সম্মান স্বাধীনতা সম্মাননা দেওয়া হয় ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে। ২০১২ সালের ২৫ জুলাই ইন্দিরার পুত্রবধূ সোনিয়া গান্ধীর হাতে সেই সম্মাননাপত্র তুলে দেওয়া হয়।

২০১৩ সালের ৫ মার্চ ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে সম্মাননা জানানো হয়।

এদিকে, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

এক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, অটল বিহারী বাজপেয়ীর মৃত্যুতে এ অঞ্চলের রাজনীতিতে এক  শূন্যতার সৃষ্টি হলো। এ অঞ্চলের উন্নয়নে তার অবদান জনগণ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। রাষ্ট্রপতি এসময় তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে পাঠানো এক শোক বার্তায় বলেন, অটল বিহারী বাজপেয়ী আমাদের একজন মহান বন্ধু এবং বাংলাদেশে তিনি খুবই শ্রদ্ধা ভাজন ছিলেন। সুশাসন এবং ভারতসহ এতদঞ্চলের সাধারণ মানুষের শান্তি ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য অটল বিহারী বাজপেয়ী চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

সারাবাংলা/একে/এনএইচ

আরও পড়ুন,
অটল বিহারী বাজপেয়ীর মৃত্যুতে ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন