বিজ্ঞাপন

অবহেলায় নষ্ট জীবন রক্ষাকারী সোয়া কোটি টাকার ভ্যাকসিন!

July 18, 2018 | 6:11 pm

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে (সিএমএসডি) সোয়া কোটি টাকার জীবন রক্ষকারী ভ্যাকসিন নষ্ট হয়ে গেছে। অভিযোগ উঠেছে অবহেলার কারণে ভ্যাকসিন নষ্ট হয়েছে। শুধু তাই নয়, মূল ঘটনা আড়াল করতে পকেট কমিটির মাধ্যমে বৈদ্যুতিক ত্রুটিকে দায়ী করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে সোয়া কোটি টাকার এই ভ্যাকসিন সিএমএসডি’র হিসাব থেকে বাদ দেওয়ার জন্য কৌশলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে, গত বছর নভেম্বর মাসে কোল্ড চেম্বার মেরামত করার আবেদন জানানো হয়- অথচ তিন মাস পরে কেন মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএমএসডি’র এক কর্মকর্তা জানান, কোল্ড চেম্বারের তাপমাত্রা মনিটরিংয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাফলতির কারণে সোয়া কোটি টাকার জীবন রক্ষকারী ভ্যাকসিন নষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে উচিৎ ছিল বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। পুরো বিষয়টি আবার খতিয়ে দেখা দরকার বলেও মনে করেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত কোল্ড চেম্বারে রাখা ভ্যাকসিনগুলো মাইনাস ২ থেকে ৮ সেন্টিগ্রেট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। কোল্ড চেম্বার মেরামত করা দরকার জানিয়ে আবেদনও করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর ভ্যাকসিন ও ইনজেকশন শাখার স্টোর ইনচার্জ স্টেনো-টাইপিস্ট কবির আহমেদ কোল্ড পরিচালকের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু তিন মাস পর ২৫ ফেব্রুয়ারিতে ভ্যাকসিন নষ্ট হওয়ার পর মেরামত কাজ শুরু হয়।

“সেই সময় দায়িত্বে ছিলেন সহকারী পরিচালক (এসঅ্যান্ডডি) ডা. প্রভাত কুমার নাথ। তার তদারকিতেই স্টোরের মালামাল সংরক্ষণ ও বিতরণ করা হয়। অথচ তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং কোল্ড চেম্বার মেরামতের আবেদনের পরও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় সোয়া কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ জলে গেল।”

বিজ্ঞাপন

সিএমএসডি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে নষ্ট কোল্ড চেম্বার বিলম্বে মেরামতের সময় বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। তখন স্বাস্থ্য বিভাগীয় ঔষধ, ভ্যাকসিন, মেডিকেল যন্ত্রপাতি ক্রয়, মজুদ, রক্ষণাবেক্ষণ ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) ৩ নম্বর কোল্ড চেম্বারে রক্ষিত ছিল ১০ হাজার ৬৪৪ ভায়াল ইঞ্জেকশন অ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন এবং ১১ হাজার ৬৭১ ভায়াল ইঞ্জেকশন মেনিঙ্কোকোকাল মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন।

ভ্যাকসিন নষ্টের প্রকৃত কারণ নিরুপনের জন্য চারটি কার্য-পরিধি দিয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সিএমএসডি’র উপ-পরিচালক (সিএমএসডি) ডা. কল্যাণ মিত্রকে সভাপতি, সংযুক্ত মেডিকেল প্রকৌশলী (ইকুইপমেন্ট) বেলাল আহমেদকে সদস্য ও সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) প্রফুল্ল কুমার সাহাকে সদস্য সচিব করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

সিএমএসডি’র একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, ভ্যাকসিন নষ্ট হয়ে গেছে বুঝতে পেরে কারণ অনুসন্ধানে ৩ সদস্যের একটি পকেট তদন্ত কমিটি করা হয়। যে কমিটি পরিচালকের কাছে তাদের প্রতিবেদনে ভ্যাকসিন নষ্টের পেছনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব অবহেলাকে পাশ কাটিয়ে বৈদ্যুতিক ত্রুটিকে দায়ী করে তিনটি সুপারিশ পেশ করে।

সুপারিশে প্লান্টটি পুরনো তাই নতুন করে স্থাপন ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, দায়িত্বরতদের সঠিকভাবে দায়িত্বপালন-পর্যবেক্ষণ ও ত্রুটি দেখা দিলে তাৎক্ষণিক অবহিত করা এবং নষ্ট ভ্যাকসিন ধ্বংস করার কথা বলা হয়।

বিজ্ঞাপন

তদন্ত কমিটির সুপারিশে সহমত পোষণ করে সিএমএসডি’র সোয়া কোটি টাকার নষ্ট ভ্যাকসিন ধ্বংস করার নথি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের অনুমোদনের জন্য পাঠান কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক ব্রি. জেনারেল এএফএম রফিকুল ইসলাম।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদনের পর সহকারী পরিচালক (এসঅ্যান্ডডি) স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার নষ্ট ভ্যাকসিন বাদ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

তবে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক ব্রি. জেনারেল এএফএম রফিকুল ইসলাম শুরুতেই বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ নষ্ট করেনি। সেদিন সকাল সাড়ে নয়টায় সিস্টেম ঠিক ছিল, কিন্তু হঠাৎ করেই সকাল ১১টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, চেম্বারের টেম্পারাচার (তাপমাত্রা) বেড়ে গেছে, ৮ সেন্টিগ্রেট থাকার কথা, ছিল ২০ থেকে ২২ সেন্টিগ্রেট। সঙ্গে সঙ্গেই অন্য চেম্বারে ওষুধগুলো স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু এক ঘণ্টার মতো উচ্চমাত্রার তাপে থাকায় ভ্যাকসিনগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। পরে তদন্ত করেও সিস্টেম নষ্ট থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। নষ্ট ভ্যাক্সিনতো ব্যবহার করা যাবে না, তাই ডেস্ট্রোয় করে ফেলতে হবে।

আপনাদের কাছে খবরটা কীভাবে গেছে আমি ঠিক জানি না। এটা নিয়ে কেউ কিছু করতে চাচ্ছে কীনা-সে নিয়েই আমরা এখন ‘ডাউট’, বলেন এএফএম রফিকুল ইসলাম।

সারাবাংলা/এটি

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন