বিজ্ঞাপন

অভ্যন্তরীণ সংকট মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে জামায়াত

February 18, 2019 | 4:40 pm

।। আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল পদ থেকে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগ এবং ‘সংস্কারপন্থী’ হিসেবে পরিচিতি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মুজিবুর রহমান মঞ্জুকে বহিষ্কারের পর জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে দলটি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি এবং স্বাধীনতাবিরোধী দল হিসেবে বিচার শুরুর প্রাক্কালে নিজেদের অন্তর্কলহে টাল-মাটাল অবস্থায় পড়ে দেশের সবচেয়ে ‘বিতর্কিত’ রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াত। পরিস্থিতি সামাল দিতে পর্দার আড়ালে চলছে নানা আয়োজন। কিন্তু দলটির সব ধরনের কর্মকাণ্ড ‘নিষিদ্ধ’ সংগঠনের ‘তরিকা’য় সম্পন্ন হওয়ায় সেগুলো জনসম্মুখে আসছে না  সেভাবে।

শুধু তাই নয়, জামায়াতের যেসব নেতা সচরাচর গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতেন, তারাও কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগ এবং মুজিবুর রহমান মঞ্জুকে বহিষ্কারের পর জামায়াতের কেউ-ই গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেননি।

বিজ্ঞাপন

শনিবার সন্ধ্যা থেকে রোববার রাত পর্যন্ত জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেননি। অথচ দুই দিন আগেও এসব নম্বরে ফোন দিলে তাদের সঙ্গে কথা বলা যেত অনায়াসেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, চলমান পরিস্থিতিতে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দলের সব ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার যেহেতু আমিরে জামায়াত এবং সেক্রেটারি জেনারেলের ওপর ন্যস্ত, সেহেতু এখন থেকে তাদের মাধ্যমেই সব কিছু জানানো হবে। এ ছাড়া জেলা ও মহানগর আমিরদের মাধ্যমে দলের সিদ্ধান্ত পৌঁছে দেওয়া হবে তৃণমূল পর্যায়ে।

এ ব্যাপারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের অধিবেশনে নেওয়া সিদ্ধান্ত ‘নির্দেশনা’ আকারে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে পাঠিয়েছে জামায়াত। সেখানে বলা হয়েছে, সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত জামায়াতের আমির, সেক্রেটারি জেনারেল এবং জেলা-মহানগর আমিরদের মাধ্যমে জানানো হবে। এর বাইরে কারও আবেদন, নিবেদন ও অনুরোধে কেউ যেন সাড়া না দেয়— সে ব্যাপারে সবাইকে সর্তক থাকতে হবে।

বিজ্ঞাপন

ওই নির্দেশনায় সদ্য দল ত্যাগ করা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করা থেকে কর্মীদের বিরত থাকতে বলা হয়। পাশাপাশি এটাও জানানো হয়, দলের পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে অনুরোধ করা হয়েছিল পদত্যাগ না করার জন্য এবং গণমাধ্যমে পদত্যাগের বিষয়টি না জানানোর জন্য। কিন্তু দলের অনুরোধ তিনি রাখেননি।

কেন্দ্র থেকে পাঠানো চিঠিতে মজিবুর রহমান মঞ্জুকে দল থেকে বহিষ্কারের কারণও ব্যাখা করা হয়েছে। সেখানে পরিষ্কার করে বলা হয়, গত কয়েকবছর ধরে সংগঠনের বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশ্যে ভিন্নমত প্রকাশ করে আসছেন মজিবুর রহমান মঞ্জু। সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ড পরিহার করার জন্য তাকে একাধিকবার সর্তকও করা হয়েছিল।

চিঠিতে আরও বলা হয়, সম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সফর করে মজিবুর রহমান মঞ্জু জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পর্যায়ের লোকদের নিয়ে বৈঠক করেন। সে সব বৈঠকে সংগঠনের সিদ্ধান্তের বাইরে নিজ দায়িত্বে একটি সংগঠন গড়ে তোলার বিষয়ে আলোচনা করেন— যা সংগঠনের রীতিনীতি ও শৃঙ্খলাবিরোধী।

এদিকে কেন্দ্রের এ রকম ‘হার্ডলাইন’ অবস্থানের মধ্যেই তৃণমূল জামায়াত থেকে একের পর এক বিদ্রোহের খবর আসছে। শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দিনাজপুর খানসামা উপজেলার ভেড়ভেড়ী ইউনিয়ন জামায়াতের  সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার উদ্দীন দল থেকে পদত্যাগ করেন। উপজেলা জামায়াতের আমিরের কাছে পাঠানো পদত্যাগপত্রে তিনি বলেন, ‘এই দেশের নাগরিক হয়ে দেশের স্বাধীনতাবিরোধী দলের সঙ্গে আর থাকতে চাই না।’

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আরও বড় ধরনের ভাঙন দৃশ্যমান হবে জামায়াতে। স্বাধীনতাবিরোধী ‘পাপ’ থেকে মুক্ত হতে অপেক্ষাকৃত প্রগতিশীল একটি অংশ ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে যাচ্ছেন। প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে তারা জামায়াত থেকে বেরিয়ে যাবেন— এমনটিই দাবি সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে পল্টন থানা জামায়াতের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘পূর্ব পুরুষের দায় আর কতকাল বহন করব। আমরা মনে করি, এখনই সময় অতীত ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে রাজনীতির মূল ধারায় ফিরে আসার। হাইকমান্ড যদি এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব না দেখায়, তাহলে নিজে থেকেই সরে যাব।’

অবশ্য দলের অখণ্ডতা রক্ষায় তৎপরতার কমতি নেই জামায়াতে। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও দফায় দফায় বৈঠক করছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতেও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে এক যোগে বৈঠক হয়। সেখানে সংস্কারপন্থীদের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করার পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে ঐক্য আরও মজবুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) জামায়াতের একজন শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মনে করি, নানামুখি চাপের কারণে দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাসহ কয়েকজন সদস্য দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। পরিস্থিতি যেন আরও খারাপের দিকে না যায়, সে জন্য আমরা চেষ্টা অব্যহত রেখেছি। আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে।’

সারাবাংলা/এজেড/একে

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন