বিজ্ঞাপন

অাগের মতোই অরক্ষিত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক

May 26, 2018 | 6:35 pm

।। ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: রাস্তা পারাপারে ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করুন অথবা গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা ৩০ কিলোমিটারসহ নানা ধরনের সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড লেখা থাকলেও কমছে না ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুর্ঘটনা।

একদিকে প্রশাসন বিলবোর্ড টাঙিয়ে দায়িত্ব শেষ করছে অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভুলে ইচ্ছামতো রাস্তা পারাপার হচ্ছে।

গত বছর এই দিনে (২৬ মে ২০১৭) ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান আরাফাত ও রানা নামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দুর্ঘটনার বিচার, অরক্ষিত মহাসড়কের নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনাসহ সাত দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। হামলার কারণ জানতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনে গেলে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো কথা না বলে উল্টো তার বাসভবনে ভাংচুর ও শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগ এনে ৫৪ শিক্ষার্থীর নামে মামলা দায়ের করেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন ছাত্রীসহ ৪২ জনকে জেল-হাজতেও পাঠানো হয়।

সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে এত কিছুর পরও বাস্তবায়ত হয়নি কোনো পদক্ষেপ। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা নিজেরাও ভুলে গেছে নিজেদের দায়িত্ব ও সতর্কতার বিষয়টা পর্যন্ত।

বিজ্ঞাপন

মহাসড়কে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে সিঅ্যান্ডবি এলাকায় পুলিশ বক্স বসিয়ে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল প্রশাসন। যেখানে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা ৩০ হওয়ার কথা থাকলেও দেখা যায় সর্বনিম্ম গতি সীমা ৩০ কিলোমিটার। এই গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো উদ্যোগও নেই প্রশাসনের।

অন্যদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটক  (ডেইরি গেট) সংলগ্ন মহাসড়কের ডিভাইডার ভেঙ্গে ফেলে। দেড় মাসেও সেটি মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম জানান, ডিভাইডারটি ছাত্ররা ভেঙেছে, ফলে সেটি মেরামতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেবে না। তিনি বলেন, বিষয়টি দেখবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, ফলে তাদের নজরে আনার জন্য বেশি বেশি ছবি দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার পরামর্শ দেন।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি গেটের মধ্যে ডেইরি ও প্রান্তিক গেট দিয়েই শিক্ষার্থীদের চলাচল সবচেয়ে বেশি। অধিকাংশ শিক্ষার্থী এ দুটি গেট দিয়ে চলাচল করলেও প্রান্তিক গেটে নেই কোনো ফুট ওভারব্রিজ। শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও এখনো পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল কালাম আজাদ বলেন, টেন্ডার হয়ে গেছে। ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। টাকা পেলে ঈদের পরই কাজ শুরু করা হবে। তবে এ প্রকল্পে দেরি হওয়ার কারণে হিসেবে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্পকে দায়ী করেন তিনি।

অন্যদিকে প্রান্তিক গেটে দেখা যায় রাস্তা পারাপারে শিক্ষার্থীরা দ্রুতগতির যানবাহনকে পাশ কাটিয়ে দলবদ্ধ হয়ে বা বিচ্ছিন্নভাবে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। চলন্ত গাড়ি উপেক্ষা করে পার হতে গিয়ে ঘটে দুর্ঘটনা। প্রশাসনের ঘাড়ে নানা অভিযোগ চাপালেও রাস্তা পারাপারে নিজেদের দায়িত্বটুকু এড়িয়ে চলেন শিক্ষার্থীরা।

এ ছাড়া সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে সড়ক বিভাজক ভেঙে ফেলায় সুবিধাই হয়েছে শিক্ষার্থীদের। উন্মুক্ত মহাসড়কে চলন্ত গাড়িকে হাত উঁচিয়ে থামতে বলে রাস্তা পার হচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী। সড়ক বিভাজক ভেঙে যাওয়ায় একেবারেই কমে গেছে ফুট ওভারব্রিজের ব্যবহার। এখন আর কেউ কষ্ট করে ওভারব্রিজে উঠতে চাই না।

তবে ফুট ওভারব্রিজ না ব্যবহার করার কারণ হিসেবে তারা সময় স্বল্পতাকেই উল্লেখ করছেন।

মহাসড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সোচ্চার হলেও, নিজেদের জীবনের নিরাপত্তার নিয়ে তারা ঠিক ততটাই উদাসীন। ফলে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় জীবন হারাচ্ছে কেউ না কেউ।

সারাবাংলা/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন