বিজ্ঞাপন

আইন আর উদ্যোগের পরও থামছে না মানবপাচার, ঘাটতি শনাক্তের পরামর্শ

July 29, 2018 | 5:53 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, ‘মানবপাচারের ঘটনায় বাংলাদেশে চমৎকার আইন রয়েছে। তারপরও পাচারের ঘটনা ঘটছে, পাচার থেমে থাকেনি। কারণ, কোথাও না কোথাও ঘাটতি রয়েছে।’ রোববার (২৯ জুলাই) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম আয়োজিত ‘মানবপাচার ও অনিয়মিত অভিবাসন’ শীর্ষক এক মিডিয়া ডায়ালগ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘আমাদের দেশে একসময় আইন ছিল না, কিন্তু এখন চমৎকার একটি আইন হয়েছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত সরকারের একটি প্ল্যান অব অ্যাকশন আছে। তারপরও পাচারের ঘটনা ঘটছে, পাচার থেমে থাকেনি। কারণ, কোথাও না কোথাও গ্যাপ-ল্যাপ রয়েছে। বাংলাদেশের সুশীল সমাজ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো কাজ করছে, কিন্তু তারপরও কোনও অগ্রগতি হচ্ছে না। তাই ঘাটতিগুলো শনাক্ত করতে হবে।’

মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপের দেশগুলো থেকে আমাদের দেশের মানুষদের ফেরত আসা আর দেখতে চাই না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘একটি ম্যাকানিজমের মধ্যে মধ্যসত্ত্বভোগীদের সরিয়ে দিয়ে সেখানে প্রকৃত শিক্ষিত লোকদের আনা দরকার। দেশের বাইরে প্রত্যেককে দেখার দায়িত্ব সেই দেশের দূতাবাসের দায়িত্বে থাকা লোকদের।’

বিজ্ঞাপন

এখনও মানুষ অন্ধ হয়ে কী করে দালালদের এতো টাকা দিয়ে দিচ্ছে প্রশ্ন রেখে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘তাহলে কী এ সর্ম্পকিত বার্তাগুলো সমাজে সবার কাছে পৌঁছাচ্ছে না? প্রোপার ওয়েতে আমরা আমরা ঠিকভাবে অ্যাড্রেস করতে পারছি না? কিন্তু তথ্যের অভাব কেন থাকবে? দেশ থেকে কতোজন যাচ্ছে, কতজন ফিরে আসছে সেই তথ্য কেন থাকবে না? যারা বাইরে যাচ্ছে, তারা কোথায় আছে-কেমন আছে সেটা জানার অধিকার তার পরিবারের রয়েছে। একজন মানুষেরও যদি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় তাহলে সেটা মানবাধিকার লঙ্ঘন।’

কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘অদক্ষ মানুষ যেন মাইগ্রেশন না করে সে দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। রিক্রুটিং অ্যাজেন্টগুলো যেমন আমাদের ভুগিয়েছে, আবার এই রিক্রুটিং অ্যাজেন্টগুলো মার্কেট তৈরি করেছে। তাই সঠিক রিক্রুটিং অ্যাজেন্সিগুলো যদি থাকে, এই প্রতারক রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো যদি আউট হয়ে যায়, সঠিকভাবে যদি আমরা একটি ম্যাকানিজম তৈরি করতে পারি তাহলে মাইগ্রেশন সিস্টেমটাকে একটি আকারে নিয়ে আসা যাবে আর এজন্য সরকার এবং সুশীল সমাজের যারা আছেন তাদের অর্জনগুলো তুলে ধরতে হবে।’

কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘আমরা সৌদি আরব এবং ইউরোপসহ অন্যান্য দেশ থেকে ফেরত আসা আর দেখতে চাই না। মানবপাচারের সবচেয়ে বড় কারণ অজ্ঞতা। অজ্ঞতার কারণেই বিদেশগামী কর্মীরা দালালের কাছে যায়, নিজের অধিকার সম্পর্ক সচেতন নয় বেশিরভাগ কর্মী।’

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে সিআইডির স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্সের ডিআইজি মো. শাহ আলম বলেন, ‘মানব পাচারকারীদের মূল হোতারা সংখ্যায় খুব অল্প। আমাদের দেশে কত রেমিট্যান্স আসে তার হিসাব আছে, কিন্তু রেমিটেন্স যে যায় সেটার কোনও হিসাব আমরা রাখি না। যারা বিদেশ যায় তাদের কাছ থেকে যদি আগেই টাকাটা নিয়ে নেয় তাহলে সে কি করবে?’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (পশ্চিম ইউরোপ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীর বলেন, ‘সরকারের অনেক লিমিটেশনের মধ্যে চেষ্টা করেও পারছে না। আমি বিভিন্ন জায়গায় কাজ করার সুবাদে দেখেছি, আমাদের লোকেরা কথা শোনেন না। তারা কাজ ছাড়াই ফ্রি ভিসা শুনেই পাড়ি জমান। তারপর গিয়ে বিপদে পড়ে।’

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার এবং অনিয়মিত অভিবাসন বিষয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল ইসলাম হাসান। ব্র্যাকের স্ট্র্যাটেজি, কমিউনিকেশনস অ্যান্ড এম্পাওয়ারমেন্ট কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন পরিচালক আসিফ সালেহ্’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) মোহাম্মদ শামসুর রহমান, আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার (আইওএম) বাংলাদেশের চিফ অব মিশন জর্জি গিগরি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বাংলাদেশের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্সের হেড অব কো-অপারেশন মারিও রনকনিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি অভিবাসন সংস্থার প্রতিনিধিরা।

সারাবাংলা/জেএ/এমও

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন