বিজ্ঞাপন

আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্তে দ্বিধা-বিভক্ত শিক্ষকরা

December 25, 2017 | 5:56 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা :  শিক্ষকদের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করলেও মন্ত্রীর আশ্বাসে সায় দেয়নি সাধারণ শিক্ষকরা। সোমবার বিকেল ৫টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান সাধারণ শিক্ষকদের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করলে  আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হন অনশনরত শিক্ষকরা। অনশন ভাঙবেন না এবং আন্দোলন স্থগিত করবেন না জানিয়ে মন্ত্রীর উপস্থিতিতেই তারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।

ফলে বেতন বৈষম্য কমানোর দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশনরত শিক্ষকরা দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।  এখনো শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা তাদের অবস্থান অব্যাহত রেখেছেন। সাধারণ শিক্ষকদের বিক্ষোভের মুখেই শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী, সচিব আসিফুজ্জামান ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল।

বাংলাদেশ সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি আনিসুর রহমান সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় সারাবাংলাকে বলেন, সাধারণ শিক্ষকরা আমাদের কথা বিশ্বাস করছে না। তারা বলেছে, অনশন ভাঙার সিদ্ধান্ত মানবেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসে ঘোষণা দিলেই কেবল তারা এখান থেকে সরবেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরো বলেন, সাধারণ শিক্ষকরা আমাদের ভুল বুঝছে। তারা ভাবছে আমরা খারাপ কিছু করেছি।  অনেক শিক্ষক আমাদের ওপর চড়াও হয়েছে। আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।

আনিসুর আরো বলেন, আমরা শিক্ষকদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। তারা আমাদের কথা শুনছেন না।

এর আগে বিকেল ৫টার দিকে শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী। মন্ত্রী আসার আগেই শিক্ষক নেতারা শহীদ মিনার বেদীতে উঠে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মন্ত্রী মহোদয় আসবেন, আমরা তার থেকে আশাব্যঞ্জক কিছু শুনব। এ সময় তারা সামনে থাকা শিক্ষকদের কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না করার অনুরোধ করেন।

বিজ্ঞাপন

ঠিক ৫টায় মন্ত্রী অনশনস্থলে আসেন। তার সঙ্গে সচিব, ডিজি ও শিক্ষক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মন্ত্রী সঙ্গে জুসও নিয়ে আসেন।

মন্ত্রী সাধারণ শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে আপনাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে আমাকে কিছু জানাননি। আমি, সচিব, ডিজি একইসঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসব। আপনাদের দাবির যৌক্তিকতা শুনব। আপনারা আপনাদের যৌক্তিকতা তুলে ধরবেন আলোচনার টেবিলে।’

এ সময় সামনে থাকা শিক্ষকরা বলেন, না, না, হবে না। এক দফা, এক দাবি। আমাদের দাবি মানতে হবে। এসব স্লোগান বলতে বলতে অনশনরত শিক্ষকরা বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়েন। এ সময় পুরো শহীদ মিনার চত্বর স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে এবং মন্ত্রী চুপ হয়ে যান। এ সময় একাধিক শিক্ষক নেতা আন্দোলনরত শিক্ষকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।

শিক্ষকদের আন্দোলনের দ্বিধা-বিভক্তি বিষয়ে  বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি শাহীনুর আল-আমিন বলেন, মাননীয় মন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের কমিটি করে দেবেন। এই কমিটির মধ্যে শিক্ষক প্রতিনিধিরাও থাকবেন। আমাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলবেন।

বিজ্ঞাপন

মন্ত্রী মাইক নিয়ে আবার বলেন, বেতন যারা নির্ধারণ করেছেন তাদের সঙ্গে আমাদের বসতে হবে। আমরা আমাদের যুক্তি তুলে ধরব, আলোচনা করে সমাধানে পৌঁছাব। কিন্তু আশ্বাস দেওয়ার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষকদের শান্ত করতে ব্যর্থ হন মন্ত্রীসহ শিক্ষক নেতারা।

আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে সাধারণ এক শিক্ষক সারাবাংলাকে বলেন, আমরা কোনো আশ্বাস চাইনি। আমরা চেয়েছি এখান থেকেই সরাসরি সিদ্ধান্ত হোক।  আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে আমরা ফিরে যাব না।

সাধারণ শিক্ষকরা বলছেন, যে সব নেতারা মন্ত্রীর বাসায় গেছে তাদের কনভিন্সড করে ফেলেছে সরকার।

এই পরিস্থিতির মধ্যেই নেতাদের জুস পান করিয়ে মন্ত্রী বলেন, একমাসের মধ্যে এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হবে।

এরপর তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তবে মন্ত্রীর চলে যাওয়ার পর আরো বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষকরা।

এর আগে বিকেলে মন্ত্রীর সঙ্গে হেয়ার রোডের বাসায় বৈঠক করেন শিক্ষক প্রতিনিধিরা। সেখানে অনশন কর্মসূচি স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের কিছুক্ষণ পরই অনশন ভাঙাতে মন্ত্রী শহীদ মিনারে আসেন।

গত শনিবার থেকে এক দফা দাবিতে শহীদ মিনারে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কয়েক হাজার সহকারী শিক্ষক। সোমবার ছিল আন্দোলনের তৃতীয় দিন।

সারাবাংলা/জেএ/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন