বিজ্ঞাপন

আফতাবনগরে মনজিল হত্যা : আসামি শনাক্ত

January 18, 2018 | 10:46 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: রাজধানীর বাড্ডার আফতাবনগরে নিজ ফ্লাটে তরুণ ব্যবসায়ী মনজিল হক খুনের ঘটনায় এক মাস পার হলেও এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। দিনে দুপুরে চার যুবক ফ্লাটে ঢুকে মনজিলকে গলা কেটে হত্যা করে গেলেও প্রথমে পুলিশের কূল কিনারা খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়। তবে এখন পুলিশ বলছে কারা কিভাবে মনজিলকে হত্যা করেছে তা জানতে পেরেছেন। এমনকি আসামিদেরও শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বাড্ডা থানার এসআই কামরুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, আসামিদের সনাক্ত করা হয়েছে। ঢাকায় বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযানও চালানো হয়েছে। তবে কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। খুব শিগগিরই মনজিল হত্যার আসামীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আশা করেন তিনি।

তবে বাড্ডা থানার আরেক এসআই নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, মনজিলের কোনো অভিভাবক নেই, বাবা-মা আগেই মারা গেছেন, তাই এ মামলার তদন্তে তেমন কোনো গুরুত্ব পাচ্ছে না। থানা পুলিশও তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। অন্যান্য হত্যার ক্ষেত্রে মামলা সাধারণত ডিবিতে চলে যায়। ফলে ওই সব মামলার আসামিদের ধরতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। আবার অনেক সময় ডিবি ছায়া তদন্ত করে থাকে। কিন্তু মনজিল হত্যার মামলায় ডিবির যে টিম ছায়া তদন্ত করছে তাতেও তেমন অগ্রগতি নেই বলে জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

ছায়া তদন্তকারী ডিবির ওই টিমের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, মনজিল হত্যায় তার সৎ ভাই ইয়াসীনের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তার সৎ ভাই ইয়াসীন সম্পত্তির লোভে তাকে খুন করে থাকতে পারে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হত্যাকাণ্ডে যে চার যুবক অংশ নেয় তাদের একজন ইয়াসীন বলে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের সময় ইয়াসীনও মারাত্বক আহত হতে পারে। মনজিল নিজেও ইয়াসীনকে ছুরিকাঘাত করতে পারে।

অন্যদিকে মনজিলের সৎ মা লায়লা ইয়াসমীনকে মঙ্গলবার সারাবাংলার পক্ষ থেকে ফোন করে জানতে চাওয়া হয়, আপনার ছেলে খুন হয়েছে? এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পেরেছে? জানতে চাইলে তিনি স্বাভাবিকভাবে বলেন, পুলিশ এখনো এরকম কোনো খবর দেননি। আমরাও খোঁজ নেইনি। আরেক ছেলে ইয়াসীনের ব্যাপারে জানতে চাইলে লিপি বেগম বলেন, ইয়াসীন কোথায় আছে তাও জানি না। তার সঙ্গে এখনো যোগাযোগ হয়নি।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, আফতাবনগরে খুন হওয়া ওই যুবকের পেছনে সৎ মা, সৎ ভাইবোন সবার হাত রয়েছে। তাদের ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন হবে। সৎ ছেলে খুন হয়েছে। নিজের ছেলে ইয়াসীন হত্যার দিন থেকেই লাপাত্তা। এতো দিনেও ইয়াসীনের সঙ্গে তার মায়ের যোগাযোগ হয়নি, এটি ডাহা মিথ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। ইয়াসীনের সৎ মা ও বোনদের সাথে অবশ্যই যোগাযোগ আছে বলে দাবি করেন এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা। কারণ ইয়াসীন নিখোঁজ থাকলে অবশ্যই এতো দিনে তার মা থানায় যোগাযোগ করতেন।

গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বাড্ডার আফতাব নগরে নিজের ফ্ল্যাটে খুন হন তরুণ ব্যবসায়ী মনজিল হক (৩০)। মনজিল হক বাড্ডায় গাড়ি মেরামতের একটি ওয়ার্কশপের মালিক ছিলেন। দুর্বৃত্তরা রশি দিয়ে পা বেঁধে গলা কেটে তাকে হত্যা করে। তার দুই হাতেও ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পায় পুলিশ। পুলিশ ওই বাসা থেকে রক্তমাখা দুটি ছুরি উদ্ধার করে।

পুলিশ ও প্রতিবেশীরা জানান, ফ্ল্যাটটিতে মনজিল একাই থাকতেন। মাঝে-মধ্যে সেখানে তার বন্ধুরা আড্ডা দিতেন। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার হোমনায়।

মনজিলের চাচা ফারুক মিয়া জানান, ছয় মাস আগে মনজিলের বাবা মাইনুল হক মারা যান। তার বাবার দুই বিয়ে। মনজিল ছিল প্রথম স্ত্রীর একমাত্র সন্তান। দ্বিতীয় স্ত্রীর এক ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। মনজিলের বাবা মারা যাওয়ার আগে দুটি ফ্ল্যাট কিনে একটিতে মনজিলকে থাকতে দেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইউজে/জেডএফ

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন