বিজ্ঞাপন

ইকো-ট্যুরিজমে দর্শনার্থী বেড়েছে ৮ গুণ

July 23, 2018 | 8:35 am

।। জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বাংলাদেশে জনপ্রিয় হচ্ছে ইকো-ট্যুরিজম। কয়েক বছর আগেও এই ধারণা খুব বেশি মানুষের মধ্যে প্রচলিত ছিল না। পরবর্তীতে সরকারি উদ্যোগে হাতে নেওয়া হয় ‘বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন’ নামের একটি প্রকল্প। এখন ছয় বছর ধরে বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের সুফল মিলতে শুরু করেছে। আগে পর্যটন মৌসুমে যেখানে দিনে গড়ে ১৪ জন মানুষ বেড়াকে যেতো, সেখানে বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ১১০ জন আসেন। যা আগের তুলনায় ৮ গুণ বেশি।

বন বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রকল্পের আগে ৪৫.৬ শতাংশ দর্শনার্থী আসতো, এখন নানা সুবিধা বাড়ায় ৮৭.৯ শতাংশ দর্শনার্থী এসেছেন বনে। ধীরে ধীরে তা আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে এসব চিত্র। প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, গত মে মাসে প্রকল্পটির প্রভাব মূল্যায়ন করে খসড়া জমা দেয় আইএমইডির নিয়োগ করা সমীক্ষক সংস্থা ‘পাথমার্ক অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড’। আলাপ-আলোচনার পর গত জুন মাসে এটি চূড়ান্ত করা হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পটি দেশের ২০ জেলার ৩৫টি বনবিট বা রেঞ্জে বাস্তবায়িত হয়। জেলাগুলো হচ্ছে- লালমনিরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, ঢাকা, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, মাদারীপুর, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার।

আইএমইডির সচিব মো. মফিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে ইকো-ট্যুরিজম জনপ্রিয় হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু দুর্বল দিক এবং ঝুঁকিও খুঁজে পাওয়া গেছে। সুপারিশসহ প্রতিবেদনটি পাঠিয়ে দেওয়া হবে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকেই পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

উপ-প্রধান বন সংরক্ষক জহির উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বনের ইকো-সিস্টেম ঠিক রেখে জনগণের চলাচল নিশ্চিত করাকে ইকো-ট্যুরিজম বলে। এক্ষেত্রে বনের উদ্ভিদ ও প্রাণির কোনোরকম বিপত্তি ঘটবে না। পাশাপাশি মানুষও আনন্দ উপভোগ করতে পারে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে ইকো-ট্যুরিজম জনপ্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সে চেষ্টা অনেক সফল হয়েছে। আগামীতে এ ধরনের প্রকল্প আরো নেওয়া উচিৎ।’

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। কিন্তু নানা কারণে এই বৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। এজন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। দু’বার সংশোধনের মাধ্যমে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন বন অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে।

মূল ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ছিল ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন এবং প্রকল্প ব্যয় ছিল ৪৮ কোটি ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সর্বশেষ সংশোধনীতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ কোটি ৬১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রকল্পের সময় বৃদ্ধি পায় ৬৬.৭ শতাংশ এবং ব্যয় বৃদ্ধি পায় ১৯.৯ শতাংশ।

প্রকল্পটির ৫টি প্রধান অংশ হচ্ছে- বনায়ণ, বিশেষ সম্পদ, যানবাহন সংগ্রহ, জলযান সংগ্রহ, নির্মাণ ও পূর্ত কাজ এবং মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ।

প্রধানত দেশে উদ্ভিদ ও প্রাণি বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বিদ্যমান জাতীয় উদ্যান, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, ইকোপার্ক, উদ্ভিদ উদ্যান, সাফারি পার্ক ইত্যাদিসহ সংরক্ষিত বন, বিশেষ সংরক্ষিত এলাকা ও সম্ভাবনাময় ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে সুবিধার উন্নয়ন, সংকটাপন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ উদ্ভিদ এবং বন্যপ্রাণির জিন সংরক্ষণের সহায়তা, অবৈধ পাচার, শিকার ও ব্যবসা বন্ধ, বন্যপ্রাণির আবাসস্থল পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইকো-ট্যুরিজম কার্যক্রম গ্রহণের ফলে ইকোপার্কগুলোতে দর্শনার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে বন বিভাগের আয়। বনবিভাগ ইকো-ট্যুরিজম চালু করলেও গেট ব্যবস্থাপনা ছাড়া বনের বিশেষায়িত বিষয়গুলো যেমন, কটেজ, রেস্ট হাউজ, পিকনিক স্পট ব্যবহার ইত্যাদি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।

প্রকল্পের বনায়ণ অংশ বাস্তবায়নে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বনের উদ্ভিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যপ্রাণীর মধ্যে বানর ও হরিণের সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া মেছো বাঘের সংখ্যা সামন্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি সংরক্ষণের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশিষ্ট এলাকাগুলোয় অর্থনৈতিক গতি বেড়েছে। দর্শনার্থীদের বিভিন্ন সেবা যেমন যাতায়াত, ট্যুরিস্ট গাইড হিসাবে সহায়তা করা, খাবার ও অন্যান্য পণ্য সামগ্রী বিক্রি ইত্যাদিতে নিয়োজিত হয়ে আয় করার সুযোগ পাচ্ছেন স্থানীয়রা।

তবে প্রকল্পের কয়েকটি দুর্বল দিকের কথাও এতে বলা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাস্তবায়ন কাজ শুরু করার পর বেজলাইন সার্ভে না করা, বিটভিত্তিক অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা প্রকল্প দলিলে না থাকা, প্রকল্প সম্পর্কে স্থানীয়দের সময়মত অবহিত না করা। সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অপ্রতুলতা ইত্যাদি।

এসব দুর্বল দিকের কারণে প্রকল্পে বেশ কিছু ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। যেমন জমির অবৈধ দখলদাররা প্রকল্পের কাজে বাধা দিয়েছে, উপকূলীয় বন এলাকাগুলোতে চলাচল জোয়ার-ভাটা নির্ভর বলে কাজ করতে সময় বেশি, অঞ্চল ভেদে যথেষ্ট বৈচিত্র্য থাকার পরও সব এলাকার জন্য একই ধরনের স্থাপনা নির্মাণ ইত্যাদি। এসব কারণেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নকালে দু’বার সংশোধন করতে হয়, এতে প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ বাড়ে।

সারাবাংলা/জেজে/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন