বিজ্ঞাপন

ইডেনের ছাত্রী মিতা হত্যা, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৩ আসামিসহ সবাই খালাস

November 13, 2018 | 7:57 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ইডেন কলেজের ছাত্রী সাদিয়া নূর মিতা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত তিন আসামিসহ ৮ আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যদণ্ডাদেশ অনুমোদনের আবেদন) ও আসামিদের করা আপিল শুনানি শেষে মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন মিতার ফুফাতো ভাই খন্দকার মামুন হাসান, খন্দকার হাসিবুর রহমান ওরফে নিপুণ এবং মফিজ খন্দকার ওরফে দগু।

বিজ্ঞাপন

 আর যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া আসামিরা হলেন কাজী শাহ আলম ওরফে তুষার কাজী, শামসুর রহমান ওরফে জনি, শেখ নাজমুল ও নিহত মিতার চাচাতো বোন ইসরাত জাহান শ্রাবণী এবং পাঁচ বছর কারাদণ্ড পাওয়া আসামি আনোয়ার হোসেন ওরফে মনি।

আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও ফজলুল হক খান ফরিদ। তাদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সাইফুর রহমান রাহি। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুজ্জামান রুবেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম আজাদ খান।

পরে সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুজ্জামান রুবেল বলেন, ‘এ মামলায় কোনো চাক্ষুষ সাক্ষী ছিলেন না। এ ছাড়া মিতার চাচাত বোন শ্রাবণী যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন, সে জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে বিচারিক আদালত আসামিদের মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবনসহ সাজা দিয়েছিল।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দুই ধরনের হয়, ইন কালপেটরি (অপরাধে নিজেকে জড়িয়ে) দেওয়া জবানবন্দি, আরেকটা হচ্ছে এক্স কালপেটরি (নিজেকে অপরাধে না জড়িয়ে) দেওয়া জবানবন্দি। আইনে এক্স কালপেটরি জবানবন্দি আমলযোগ্য বা গ্রহণযোগ্য না।’

‘শ্রাবণী যে স্বীকারোক্তি দিয়েছে সেটা এক্স কালপেটরি বা অপরাধে নিজেকে না জড়িয়ে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি। অর্থাৎ অপরাধ সংগঠনে তার কোনো ভূমিকা ছিল না। এখন আমরা শ্রাবণীর বক্তব্যকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি বললেও আইন এটাকে শুধুমাত্র স্টেটম্যান্ট (জবানবন্দি) বলছে। বিচারিক আদালত শ্রাবণীর জবানবন্দিটাকে ইন কালপেটরি ধরে সাজা দিয়েছিল।’

‘উচ্চ আদালত পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য ও শ্রাবণীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ত্রুটিপূর্ণ বা এক্স কালপেটরি ধরে সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন’ বলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুজ্জামান রুবেল।

রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, ‘শ্রাবণী বলেছে, সে কিছুই করেনি। আসামিরা নাকে চেতনানাশক কিছু একাটা ধরার পর তার শরীর অবশ হয়ে গিয়েছিল। তাকিয়ে দেখা ছাড়া সে কিছুই করতে পারেনি।’

বিজ্ঞাপন

এই স্বীকারোক্তিতে শ্রাবণী নিজেকে না জড়িয়ে অন্যদের দোষী বা দায়ী করছেন। ফলে এটা এক্স কালপেটরি স্টেটমেন্ট। আইনের দৃষ্টিতে আমলযোগ্য নয়।

আমরা আদালতে যুক্তিতর্কে বলেছি, মিতাকে যে হত্যা করা হয়েছে এটা তো সত্য। মানে শ্রাবণীর জবানবন্দি এক্স কালপেটরি হলেও ঘটনার সত্যতা আছে। ফলে আমরা (রাষ্ট্রপক্ষ) এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১০ সালের ২৪ আগস্ট ঈদ উপলক্ষে কলেজ ছুটির পর মিতা পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা থেকে তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মিয়াপাড়ায় যায়।

আসামিরা ৩০ আগস্ট রাতে অপহরণের পর মিতাকে হত্যা করে একটি পুকুরে লাশ ফেলে রাখেন। এ ঘটনায় নিহত মিতার বাবা লিয়াকত হোসেন মোল্লা বাদী হয়ে ওই দিনই গোপালগঞ্জ থানায় মামলা করেন।

২০১১ সালের ২৯ মে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে শ্রাবণীর মাধ্যমে মিতাকে অপহরণ করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দেওয়া হয় বলে পুলিশের অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

পরে এ মামলায় ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারক মোতাহার হোসেন তিন জনকে মৃত্যুদণ্ড, চারজনকে যাবজ্জীবন ও এক জনকে ৫ বছরের সাজার রায় দিয়েছিলেন।

পরে আসোমিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য অবেদনের (ডেথ রেফারেন্স) পাশাপাশি বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন।

আসামিদের করা সেই আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে আজ খালাসের এ রায় দেন হাইকোর্ট।

সারাবাংলা/এজেডকে/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন