বিজ্ঞাপন

ঈদের পর আন্দোলন নয়, সংলাপ চেয়ে চিঠিও নয়!

May 25, 2018 | 7:10 pm

।। আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ২০১৫ সাল থেকে ‘ঈদের পর’ আন্দোলনের হুমকি দেওয়া বন্ধ করেছে বিএনপি। তবে নির্বাচনের বছর হওয়ায় দলটির নেতা-কর্মী, সমর্থক ও শুভাঙ্ক্ষিদের প্রত্যাশা ছিল, এবার ঈদের পর ‘বড় ধরনের’ আন্দোলনে যাবে তাদের দল। আর সুধী সমাজের ধারণা ছিল, সংলাপ চেয়ে সরকারকে ঈদের পর চিঠি দেবে বিএনপি।

কিন্তু আপাতত খবর হলো, ঈদের পর আন্দোলন এবং সংলাপ চেয়ে চিঠি— কোনোটিই করছে না বিএনপি। চলমান সংকটের সমাধান কোন পথে হবে, সে বিষয়েও পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই দলটির নীতি-নির্ধারকদের!

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বর মাসেই অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর অক্টোবর-নভেম্বর মাসে শুরু হবে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি। সে দিক থেকে হিসাব করলে রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে সময় আছে আর মাত্র ৪ মাস।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণ, নাকি নির্বাচন বর্জন? সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ‘কঠোর’ আন্দোলন, নাকি সংবিধানের আলোকে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ?— কোনো কিছুই ঠিক করে উঠতে পারেনি বিএনপি।

প্রায় একই রকম পরিস্থিতিতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সংলাপের জন্য চিঠি দিয়েছিলেন বিএনপির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

অবশ্য সেই চিঠির চারদিনের মাথায় ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা টেলিফোন করে সংলাপের প্রস্তাব দিলেও তা প্রত্যাখান করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর এবার সংলাপের জন্য চিঠি দেওয়ার কথাও ভাবছে না বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৪ মে) বিকেলে বিষয়টি নিয়ে কথা হয় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে।

সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এবার সংলাপের জন্য কোনো চিঠি দেওয়া হবে না আওয়ামী লীগকে। চিঠি দেওয়ার কোনো চিন্তা-ভাবনা আপাতত আমাদের নেই।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় সংলাপ-সমঝোতার মতো ‘স্পর্শকাতর’ বিষয় নিয়ে আগ বাড়িয়ে কথা বলার ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের কেউ। সবাই নিজেকে নিরাপদ রেখে সাবধানে এগোচ্ছেন। কারণ, দলের সর্বোচ্চ ফোরামে সংলাপ-সমঝোতার বিষয়টি প্রথম যিনি তুলবেন তিনিই সরকারের ‘লোক’ বলে চিহ্নিত হয়ে যাবেন!— বিএনপিতে এ প্রবণতা দীর্ঘদিনের।

অন্যদিকে সরকার সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় তাদের দিক থেকেও সংলাপ-সমঝোতার প্রস্তাব আসার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বিষয়টি দৃষ্টিকটূ হলেও সংলাপ-সমঝোতার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব বিএনপিকেই দিতে হবে। নিজেদের প্রয়োজনে হলেও উদ্যোগটা তাদেরকেই নিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু বিএনপিতে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনাই হয়নি। দলটির শীর্ষপর্যায়ের চারজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর প্রায় প্রতিদিনই গুলশান কার্যালয়ে শীর্ষনেতারা বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে খালেদা জিয়ার মুক্তি, আইনি লড়াইয়ের বিভিন্ন দিক এবং নতুন কর্মসূচি নির্ধারণ বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে সংলাপ চেয়ে ক্ষমতাসীন দলকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়ার বিষয়টি সেখানে এখন পর্যন্ত আলোচনা হয়নি।

বৃহস্পতিবার (২৪ মে) এ ব্যাপারে কথা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে।

সারাবাংলাকে তিনি বলেন,‘আমার জানামতে সংলাপ চেয়ে সরকারকে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি এখন পর্যন্ত দলীয় ফোরামে আলোচনা হয়নি।’

২০১৩ সালে চিঠি দেওয়ার প্রসঙ্গটি তুললে তিনি বলেন, ‘আমি এই মুহূর্তে বিষয়টি ঠিক মনে করতে পারছি না। আর ঈদের পর চিঠি দেওয়া হবে কি হবে না?—  সে বিষয়টিও আমার জানা নেই। দলে আপাতত এ নিয়ে কোনো আলোচনা নেই।’

এদিকে ঈদের পর গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে বিএনপিকে। সুতরাং চাইলেও কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার সুযোগ পাবে না তারা। এর মধ্যেই আবার চলে আসবে ঈদুল আজহা। তারপরেই নির্বাচনের তপসিল ঘোষণা। সবকিছু মিলেও রাজপথ ‘কাঁপানো’ আন্দোলন অধরাই রয়ে যাবে বিএনপির।

অবশ্য সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নির্বাচনের আগে এক মাস/১৫ দিন মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে বড় ধরনের কর্মসূচিতে যাবে বিএনপি। তবে সেটি ঈদুল ফিতর বা ইদুল আজহার পরে নয়। নভেম্বর-ডিসেম্বরে— নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে।

সারাবাংলা/এজেড/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন