বিজ্ঞাপন

উত্তরার সেই ৪০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের রহস্য উদঘাটন

January 18, 2018 | 5:48 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা :  রাজধানীর উত্তরা জসিম উদ্দিনে ডিবি পরিচয়ে ৪০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, উত্তরার এ ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ছিল একেবারই ক্লুলেস। তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে ছিনতাইয়ের এ চক্রটিকে দেড়মাস পর গ্রেফতার করা হয়। তবে এই চক্রের আরো চার সদস্য রয়েছে। তাদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

গ্রেফতারকৃত তিনজন হলেন, জুয়েল রানা, আন্টু হাওলাদার ও মাসুদ রানা।

জুয়েল রানা গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়, গত ৬ ডিসেম্বর পাঁচজন মিলে উত্তরা জসিম উদ্দিন রোডে ঢাকা ব্যাংকের সামনে থেকে ৪০ লাখ টাকা ছিনতাই করে। এ সময় তারা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দেন। ছিনতাইয়ের ওই টাকা ওইদিনই নিজেরা ভাগবাটোয়ারা করে নেন। ছিনতাইয়ে অংশ নেওয়া পাঁচজনের মধ্যে জুয়েল রানাও ছিলেন। বাকি চারজন এখনো পলাতক। জুয়েল রানা ৬ লাখ টাকা ভাগ পেয়েছিলেন বলে পুলিশকে জানায় সে।

বিজ্ঞাপন

জুয়েল রানা ছাড়াও দুইজন (মাসুদ ও আল্টু) ডিবির হাতে গ্রেফতার হয়েছে, মূলত তাদের জুয়েলের ছিনতাইয়ের টাকা রাখার দায়ে।

এ ব্যাপারে ডিবির অভিযানকারী দলের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, জুয়েলের সঙ্গে আরো যারা ছিলেন তারা হলেন- তৈয়ব, মিলন ও নাসির। এদের মধ্যে তৈয়ব ১৮ লাখ টাকা ভাগ নেন, নাসির ও মাইনুদ্দিন ভাগে পান ৩ লাখ টাকা করে আর মিলন পান সাড়ে ৬ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

তৈয়ব এর আগে দুইবার ও মিলন একবার হজ করেছেন। তৈয়ব, নাসির, মিলন ও জুয়েলের বাড়ি শরীয়তপুরের কালকিনিতে। কিছুদিন আগে তারা মাদারীপুরের কালকিনিতে আরেকটি ছিনতাইয়ের মামলায় জেল থেকে বেরিয়ে তারা ঢাকায় ছিনতাইয়ের জন্য প্রবেশ করে। ড্রাইভার মাইনুদ্দিনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে।

তারা প্রথমে এসে ঢাকার কেরানীগঞ্জে অবস্থান নেন। গত ডিসেম্বর উত্তরার ওই ছিনতাই করার আগে ৪ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জের একটি বাসায় বসে পাঁচজন মিলে পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জুয়েল ব্যাংকে প্রবেশ করে কে বেশি টাকা উত্তোলন করে তার গতিবিধি লক্ষ্য করবে। আর বাইরে তৈয়বের গাড়িতে করে চারজন অপেক্ষা করবে।

সেই অনুযায়ী ৬ ডিসেম্বর জসিম উদ্দিন শাখার ঢাকা ব্যাংকে প্রবেশ করে টাকা জমা দেওয়ার লাইনে দাঁড়ান জুয়েল। পাশে লক্ষ্য করেন একজন ব্যক্তি অনেকগুলো টাকা অনেক সময় ধরে গুনে গুনে ব্যাগে ভরছেন। ব্যাগে ভরার পর ওই ব্যক্তি ব্যাংক থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠলে জুয়েলও বের হয়ে সহকারীদের খবর দেন এবং টাকা বহন করা গাড়ির পেছনে হাঁটতে থাকেন।

একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা ড্রাইভার বাদে টাকা বহন করা গাড়িটি ঘেরাও করেন এবং নিজেদের ডিবি পরিচয়ে গাড়িটিসহ খিলক্ষেত এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে খেলনা পিস্তল, নষ্ট ওয়াকিটকি ও  হাতকড়ার ভয় দেখিয়ে দিয়ে টাকা ছিনিয়ে নেন। এরপর ছিনতাইয়ের ওই টাকা গাড়িতে বসেই ভাগাভাগি করেন।

বিজ্ঞাপন

ডিবির ওই কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহারের জন্য তৈয়ব নিজের গাড়ি দেন। সেই গাড়ির ড্রাইভার ছিলেন মাইনুদ্দিন। আর ছিনতাইয়ের সময় টাকা বহনকারী গাড়িটি চালান আরেক সদস্য মিলন।

ছিনতাকারীদের একে অপরের সঙ্গে পরিচয় সম্পর্কে ডিবি কর্মকর্তা বলেন, তৈয়ব জুয়েলের চাচা, মিলন ফুফাত ভাই। নাসির পাশের গ্রামের প্রতিবেশী এবং মাইনুদ্দিনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।

জুয়েল পুলিশকে জানায়, হজ্জ করে আসার পর চাচা তৈয়ব ডেকে বলেন, টাকা ছাড়া চাকরি তো হচ্ছে না। চল প্রতি মাসে একটা করে ছিনতাই করি। অনেক টাকা ভাগে পাবি। ধরাও পড়বি না। পড়লেও জেল থেকে ছাড়ানোর জন্য আমি উকিল ধরব। যত টাকা লাগে আমি দেব। আর ছিনতাইয়ের জন্য নিজের গাড়ি (ঢাকা মেট্টো-ব-২৭-৮৫১৮) ব্যবহারের কথা বলেন।  তৈয়ব ঢাকা শহরে ছিনতাইয়ের টাকা দিয়ে একটি বিলাসবহুল ফ্লাটে বাস করেন। জুয়েল জানায়, প্রতিমাসে দেশের কোথাও না কোথাও অন্তত একটি ছিনতাই করে থাকেন তৈয়ব।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা এডিশনাল ডি আই জি শেখ নাজমুল আলম বলেন, এই মামলাটি ছিল একেবারেই ক্লুলেস। সময় লাগলেও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নিরলস পরিশ্রম করে আসামীদের সনাক্ত করতে পেরেছে।

তিনি আরও বলেন, ক্লুলেস মামলা সনাক্ত করা সাধারণ মামলার চেয়ে অনেক আনন্দের। আমরা বাকি আসামিদের গ্রেফতার করব এবং সম্পূর্ণ টাকাও উদ্ধার করব।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিবির (বিমানবন্দর জোনাল টিম) সিনিয়র সহকারী কমিশনার মহরম আলী সারাবাংলাকে বলেন, টাকা ছিনতাই হওয়া একটি গার্মেন্টস কোম্পানির ব্যবস্থাপক সাইদ মাহমুদ আল ফিরোজের করা মামলার ভিত্তিতে ডিবির টিম মাঠে নামে। একটি কল লিস্টের সূত্র ধরে আসামিদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়। সেই ভিত্তিতে মূল আসামি জুয়েলসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।

জুয়েলকে ধরতে এর আগে বরিশালেও অভিযান চালানো হয়। তবে জুয়েল সেখান থেকে সটকে পড়ে। জুয়েল গত বুধবার ওমানে যাওয়ার জন্য ঢাকায় ভিসা করতে আসলে ডিবির জালে আটকে যান। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ছিনতাইকারীদের দুজন হজ করেছেন। একজন দুইবার আরেকজন একবার হজ করেছেন।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন