বিজ্ঞাপন

উড়াও শতাবতী (১১) মূল: জর্জ অরওয়েল, অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

June 13, 2018 | 1:34 pm

শুরু থেকে পড়তে…

বিজ্ঞাপন

সরু সিঁড়ির গোড়ায় থমকালো গর্ডন। উপর থেকে মোটা কণ্ঠের বেসুরো গান কানে লাগছে… ‘হু’জ অ্যাফরেড অব দ্য বিগ ব্যাড উলফ’। আটত্রিশের বেশ মোটাশোটা লোকটি সিঁড়ির মোচড় ঘুরে নামছিলেন। চলায় হালকা নাচের ভঙ্গিমা, মোটাদের জন্য বেশ অদ্ভুত আর বেমানান বটে। ধুসর রঙা স্যুট, পায়ে হলুদ জুতো, বাঁকানো পশমি হ্যাট আর বেল্টওয়ালা নীল ওভারকোট, হাঁটার প্রতিটি ঝাঁকুনিতে রুচিহীনতা যেন ঝরে ঝরে পড়ছে। ইনি ফ্ল্যাক্সম্যান। প্রথম তলার বাসিন্দা আর কুইন অব সেবা টয়লেট রিকুইজিটস কম্পানির ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় প্রতিনিধি। গর্ডনকে দেখেই একটা স্যালুট ঠুকলেন, তাতে তার হাতে পরা লেবু-রঙা গ্লাভস জোড়া দৃশ্যমান হলো।

‘হাললললো, চ্যাপ্পি!’ হাসিখুশি উচ্চারণ তার (সবাইকেই ‘চ্যাপ্পি’ বলাই অভ্যাস ফ্ল্যাক্সম্যানের)। ‘কেমন কাটছে জীবন?’
‘ফালতু,’ সংক্ষেপের উত্তর গর্ডনের।
ততক্ষণে ফ্ল্যাক্সম্যান সিঁড়ির গোড়া অব্দি পৌঁছে গেছেন। বিশাল একটি বাহু আদুরে ভঙ্গিতেই রাখলেন গর্ডনের কাঁধে।

– ‘চিয়ার আপ, বুড়ো, চিয়ার আপ! তোমাকে দেখেতো মনে হয় পুরো একটা লাশ, শেষকৃত্যের অপেক্ষায় আছো। আমি ক্রিকটন যাচ্ছি, চলো দু পেগ মেরে আসি।’
– ‘না পারবো না, আমাকে কজে যেতে হবে।’
– ‘কাজ না ছাই! একটু কামভাবে জাগ্রত হও ভায়া। এখানে পশ্চাৎদেশ ঘষে কী লাভ! বরং চলো বারের মেয়েগুলোর সুডৌল নিতম্বে চিমটি কেটে আসি।’

বিজ্ঞাপন

নিজেকে ফ্ল্যাক্সম্যানের বাহুমুক্ত করলো গর্ডন। প্রতিটি দুর্বল ছোট মানুষের মতো অন্যের ছোঁয়া-ছুঁয়ি তারও অপছন্দ। বুঝতে বাকি থাকলো না ফ্ল্যাক্সম্যানেরও- এমন তালপাতার সেপাইদের নিয়ে মোটাদের গতানুগতিক কৌতুকের হাসিটিই ফুটে উঠলো তার মুখে। লোকটা মোটাও কম নয়! ট্রাউজারের ভেতর থেকে পায়ের মাংশ যেন ফেটে বের হয়ে আসবে। তবে অন্য যেকোনো মোটা মানুষের মতো ফ্ল্যাক্সম্যানও স্বীকার করেন না তিনি মোটা। মোটারা যতক্ষণ পারেন ‘মোটা’ শব্দটিই এড়িয়েই চলেন। ওরা বরং নিজেদের ‘বলশালী’ বলতে বেশি পছন্দ করেন, কেউ কেউ নিজেকে ‘স্বাস্থ্যবান’ দাবি করেও বসেন। তবে যাই হোক এই মোটাত্ব নিয়ে আলোচনা তাদের মোটেই পছন্দ নয়। গর্ডনের সাথে যেদিন প্রথম কথা হয়, সেদিন নিজেকে ‘স্বাস্থ্যবান’ই দাবি করেন ফ্ল্যাক্সম্যান। কিন্তু গর্ডনের সবুজাভ চোখে সে বক্তব্যে যে কোনো আস্থারই প্রকাশ ছিলো না, তা বুঝতে কারও বাকি থাকার কথা নয়। ‘শক্তিশালী’ তবু মেনে নেওয়া যায়, ‘স্বাস্থ্যবান’, সে তো মোটেই নয়।

‘এটা ঠিক আছে… শক্তিশালী তুমি বলতে পারো,’ নিজের ভুড়ি আর বুকের সন্ধিস্থলটা চাপড়াতে চাপড়াতে সেটাই বলছিলেন ফ্ল্যাক্সম্যান। ‘শক্ত-সবল পেশী, পায়ের ওপর দিব্যি চলছি। অতএব, তুমি শক্তিশালী বলতেই পারো।’
‘করটেজের মতো,’ বলেছিলো গর্ডন।
‘করটেজ? কে করটেজ?, সেই চ্যাপ্পির কথা বলছো যে মেক্সিকোর পাহাড়ে পাহাড়ে চড়ে বেড়াতো?’
‘ঠিক তাই। তিনি ছিলেন শক্তিশালী, তবে তার ছিলো ঈগলের চোখ।’
‘তাই নাকি? তাহলে তো ব্যাপারটা মিলেই গেলো। জানো কী হয়েছে! আমার বউও একদিন আমাকে ঠিক এমনই একটা কথা বলেছিলো।
বললো- “জর্জ জানো, তোমার চোখ দুটো বিশ্বের সবচেয়ে বিস্ময়কর। তোমার চোখ দুটো ঠিক ঈগলের মতো!” আশা করি বুঝতে পারছো, কথাগুলো হচ্ছিলো বিয়ের আগে।’

এই মূহূর্তে বউয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদ চলছে ফ্ল্যাক্সম্যানের। ঘটনার সূত্রপাত কুইন অব সেবা টয়লেট কম্পানির দেয়া একটা বোনাস নিয়ে। কম্পানি সেবার ফ্ল্যাক্সম্যান ও আরও দুই জনকে ত্রিশ পাউন্ডের বোনাস দিলো আর পাঠিয়ে দিলো প্যারিসে। সেখানে ফরাসি বিভিন্ন ফার্মে ঘুরে ঘুরে ‘সেক্সাপিল ন্যাচারটিন্ট লিপস্টিক’র বাজার তৈরি করবে। ফ্ল্যাক্সম্যান কি করলো! বোনাসের ত্রিশ পাউন্ডের কথা বউয়ের কাছে দিব্যি চেপে গেলো। প্যারিসে গোটা দশদিন, পকেটে ত্রিশ পাউন্ড। বউ তা ঘুণাক্ষরেও জানে না। সে কি ফূর্তি-ফার্তা। কিন্তু কথা কি আর গোপণ থাকে? কীভাবে কীভাবে ফাঁস হয়ে গেলো। ফ্ল্যাক্সম্যানতো স্বপ্নেও ভাবেনি ঘরে ফিরে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে! টেরটা পেলো ঘরে ঢোকা মাত্রই! স্ত্রী তার মাথায় ভাঙলো হুইস্কির বোতল-গ্লাস। বিয়েতে উপহার হিসেবে পেয়েছিলো ওগুলো। সেই থেকে চৌদ্দ বছর ধরে ঘরের গর্বের আর সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে ছিলো এই হুইস্কি সেট। সেতো নষ্ট হলোই। ছেলে-পুলে নিয়ে মায়ের বাড়িও চলে গেলেন ফ্ল্যাক্সম্যানের স্ত্রী। তখন থেকেই ফ্ল্যাক্সম্যানের আশ্রয় হলো এই উইলোবেড রোডে। তবে এ নিয়ে খুব একটা বিচলিত নন ফ্ল্যাক্সম্যান। ঠিক হয়ে যাবে। এর আগেও কয়েকবার এমনটা হয়েছে, এই বলে-ভেবে বেশ আমোদেই কাটিয়ে দিচ্ছেন সময়।

বিজ্ঞাপন

পরের অংশ>>

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন