বিজ্ঞাপন

ঊর্ধ্বমুখী ধারায় পুঁজিবাজার, এখনই উদ্বেগ নয়

January 16, 2019 | 7:45 am

।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: নতুন বছরের শুরুতেই ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরছে দেশের দুই পুঁজিবাজার। আগের বছরের শেষ ভাগে টানা দরপতনের পর নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে শেয়ারের দাম। চলতি জানুয়ারি মাসে লেনদেন হওয়া ১১ কার্যদিবসে মধ্যে আট দিনই সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এ সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক বেড়েছে ৪৭৮ পয়েন্টেও বেশি।

তবে পুঁজিবাজারের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাতেও বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই বলে মত দিচ্ছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, পুঁজিবাজারে সূচক বেড়ে সাত হাজার পর্যন্ত পৌঁছালেও বাজার পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক বলা চলে। তবে সূচক এর চেয়ে বেশি বেড়ে ২০১০ সালের মতো পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সেদিকে বিনিয়োগকারীদের সর্তক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের পর পরই পুঁজিবাজার চাঙ্গা হওয়ার পেছনে বেশ কিছু যৌক্তিক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকা, নির্বাচনের আগে-পরে বড় ধরনের কোনো সহিংসতা না হওয়া ও নতুন অর্থমন্ত্রীর পুঁজিবাজারে সর্ম্পকে সঠিক ধারণা থাকা। ব্যাংকের আমানতের সুদের হার কম থাকায় বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারের প্রতি নতুন করে আগ্রহ তৈরি হয়েছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে ইতিবাচক পরিবর্তন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়া ও বিদেশি বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি হওয়ার কারণেও পুঁজিবাজারে চাঙ্গা হয়ে উঠছে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজার উত্থানের পেছনে বেশ কিছু যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে যে শঙ্কা ছিল, তা কেটে গেছে। নির্বাচনের আগে-পরে বড় কোনো সহিংসতা না হওয়ায় পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দ্বিতীয়ত, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে চীনের বিনিয়োগ ও আইসিবি‘র বন্ড বিক্রির টাকা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হওয়ায় পুঁজিবাজারের সূচক কিছুটা বাড়ছে। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।’

তিনি বলেন, সূচক সাড়ে ছয় হাজার থেকে সাত হাজার পয়েন্ট পর্যন্ত স্বাভাবিক। তবে খেয়াল রাখতে হবে, সূচক ২০১০ সালের মতো বেড়ে বুদবুদ পরিস্থিতি যেন না হয়।

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আরও বলেন, সূচকের ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার প্রবণতার পাশাপাশি দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারের (জেড ক্যাটাগরি) দাম বাড়ছে। এটা যেন না বাড়ে, বিনিয়োগকারীদের সে বিষয়ে সর্তক রাখতে হবে।

বিজ্ঞাপন

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, পুঁজিবাজারের ঊর্ধ্বমুখী ধারা এখনও ইতিবাচক। এ নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। নতুন সরকার গঠন, বিশেষ করে নতুন অর্থমন্ত্রীর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা রয়েছে। আর এই কারণে পুঁজিবাজারের সূচক কিছুটা বাড়ছে। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বরং পুঁজিবাজার স্বাভাবিক নিয়মেই প্রয়োজনে মূল্য সংশোধন হবে।

নতুন বছরে শুরুতেই পুঁজিবাজারের উত্থান

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১৫ দিনের মধ্যে ১১ দিন পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে আট দিনই সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এই সময়ে ডিএসইর এক্স সূচক ৫ হাজার ৩৮৫ পয়েন্ট থেকে বেড়ে ৫ হাজার ৮৬৩ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। অন্যদিকে সূচকের এই উত্থানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আর্থিক ও শেয়ার লেনদেন। চলতি জানুয়ারি মাসে লেনদেন হওয়া ১১ দিনের মধ্যে পাঁচ দিন ডিএসইতে আর্থিক লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অথচ জানুয়ারির আগে সাড়ে তিন মাসের একদিনও ডিএসইতে এক হাজার কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়নি।

এর আগে, গত সর্বশেষ ১৩ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে ১ হাজার ৬৪ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছিল। ওই দিনের পর গত ৬ জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো হাজার কোটি টাকার লেনদেন ছাড়ায় ডিএসইতে। সেদিন ১ হাজার ২৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। পরে গতকাল মঙ্গলবারসহ (১৫ জানুয়ারি) আরও চার দিন লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

মঙ্গলবারে শেয়ারবাজারের চিত্র

মঙ্গলবার ডিএসইতে ৩৪৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেন হওয়া এসব শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫৯টির, কমেছে ১৪৭টির এবং ৩৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এদিন ডিএসইতে ১ হাজার ১৩৯ কোটি ৩১ লাখ টাকার টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ইনডেক্স আগের দিনের ২৭ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৮৬৩ পয়েন্টে, ডিডএসই-৩০ সূচক ৩ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২৯ এবং ডিএসই শরিয়া সূচক ৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৩০ পয়েন্টে উন্নীত হয়।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জিএস/জেএএম/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন