বিজ্ঞাপন

একই সময়ে ডিএনসিসি-উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি

January 18, 2019 | 4:35 pm

।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সারাদেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচন একই সময়ে অনুষ্ঠানে প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।  আগামী মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পাঁচ ধাপে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করবে কমিশন। এ জন্য ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে চায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।  আর উপজেলা নির্বাচনের পাশাপাশি সুবিধামতো সময়ে ডিএনসিসি উপ-নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন।

এ ব্যাপারে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘উপজেলা ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উভয় নির্বাচন নিয়েই ইসি প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে মার্চ মাস থেকে পাঁচ ধাপে উপজেলা নির্বাচন করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে উপজেলা নির্বাচন আরও একধাপ বাড়তে পারে।’

আরও পড়ুন: মার্চ থেকে ৫ ধাপে উপজেলা নির্বাচন, সদরে ইভিএম

বিজ্ঞাপন

ইসি সচিব বলেন, ‘ডিএনসিসির নির্বাচনের বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায়ের কপি এখনো আমাদের হাতে পৌঁছেনি। রায়ের কপি পাওয়ার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে উপজেলা নির্বাচনের পাশাপাশি ডিএনসিসি নির্বাচনের প্রস্তুতি কমিশনের রয়েছে।’

এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা গত  বুধবার, আগামী মার্চ মাসে ডিএনসিসি নির্বাচনের ভোটগ্রহণের ইঙ্গিত দিলেন।  তিনি বলেন, ‘আমরা তাড়াতাড়ি ডিএনসিসি নির্বাচন করে ফেলবো। মার্চে শুরু হওয়া উপজেলা পরিষদের মাঝেই এ নির্বাচন করা হবে।  তবে এ বিষয়ে কমিশনে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

সিইসি আরও বলেন, ‘ডিএনসিসি নির্বাচনের তফসিল করা হবে।  সেজন্য কমিশনের বসতে হবে।  এটি তাড়াতাড়ি করে ফেলব।  এই নির্বাচন উপজেলা নির্বাচন প্রভাব ফেলবে না।  এর মাঝখানেই করে ফেলব।’

বিজ্ঞাপন

সদর উপজলোর সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট
পঞ্চম উপজলো পরষিদ নির্বাচনে সদর উপজেলাগুলোয় ইলকেট্রনকি ভোটিং মেশিনে (ইভএিম) ভোটগ্রহণ করা হব। আর এ ক্ষেত্রে সদর উপজেলার সব কেন্দ্রেই ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিষয়ে গত ১৪ জানুয়ারি ইসির ৪২তম কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইসি।  এই প্রথমবারই  উপজেলা নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচনের ডঙ্কা বেজেছে, বিএনপি চুপ, দৌড়ঝাঁপে আ. লীগ

দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন
২০১৪ সালে উপজলো পরিষদ নির্বাচন  আইনত নির্দলীয় হলেও আইন সংশোধনের ফলে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।  যদিও উপজেলায় দলীয় প্রতীকে প্রথম ভোট হয়েছিল ২০১৭ সালের মার্চে।  তখন তিনটি উপজেলায় দলীয় প্রতীকে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।  দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নির্দলীয় হওয়ায় ভোটে অংশ নিয়েছিল।  চতুর্থ  উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম তিন পর্বে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ীদের মধ্যে সংখ্যায় বিএনপি এগিয়ে ছিল।  তবে পরের তিন পর্বে তাদের ছাড়িয়ে যান আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা প্রার্থীরা।

বাংলাদেশে প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন
১৯৮৫ সালে এরশাদ সরকারের আমলে উপজেলা পরিষদ চালু হয়। প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয় ১৯৮৫ সালে এরশাদ সরকারের আমলে।  একই সরকারের আমলে ১৯৯০ সালে দ্বিতীয় দফায় উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৯১ সালে বিএনপির খালেদা জিয়ার সরকার ক্ষমতায় এসে উপজেলা পরিষদ বাতিল করে দেয়।  ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীগ সরকার ক্ষমতায় এলে পুনরায় উপজেলা পরিষদ চালু করা হয়।  ২০০৯ সালে পুনরায় তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  প্রথম তিনটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সারাদেশে একদিনে অনুষ্ঠিত হয়।  অন্যদিকে ২০১৪ সালে রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশনের আমলে ছয় ধাপে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ৬ ছয় দিনে সারাদেশের প্রায় ৫০০ উপজেলায় ভোট গ্রহণ হয়।  বর্তমানে দেশে ৪৯২টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। এবার পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে ৫ ধাপে।

বিজ্ঞাপন

 আরও পড়ুন: মার্চে উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময়সীমা
আইন অনুযায়ী, কোনো উপজেলা পরিষদের মেয়াদ পূর্তির আগের ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দশম সংসদ নির্বাচনের পরপরেই অনুষ্ঠিত হয়। এবারও ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন একাদশ সংসদ নির্বাচনের পরপরই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০১৪ সালরে ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর ১৯ জানুয়ারি উপজলো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশন। একই বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস র্পযন্ত মোট ছয় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

ডিএনসিসি নির্বাচন
সীমানা জটিলতা নিয়ে ডিএনসিসি উপ-নির্বাচন স্থগিত চেয়ে করা রিট গত ১৬ জানুয়ারি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি গোবিন্দচন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি  মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটকারীর আইনজীবীরা অনুপস্থিত  থাকায়  নির্বাচনে স্থগিতাদেশ ও রুল খারিজ করে দেন।  এই  নির্বাচন অনুষ্ঠানে আর কোনো আইনি কোনো বাধা রইলো না।  এর আগে ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি ডিএনসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ১৭ জানুয়ারি ডিএনসিসি উপ-নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিতের আদেশ দেন বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্টের বেঞ্চ।

 আরও পড়ুন:  ডিএনসিসি নির্বাচনে বাধা নেই

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  কিন্তু  নির্বাচনের আড়াই বছর পর  ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেয়র আনিসুর হত লন্ডনে মারা যান। পরে ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি ইসি ডিএনসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে।  ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ডিএনসিসি নির্বাচনের কথা ছিল।

সারাবাংলা/জিএস/ এমএনএইচ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন