বিজ্ঞাপন

একজন অনন্য যোদ্ধা এম এ খায়েরের কথা

March 8, 2018 | 1:22 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। ঢাকার রেসকোর্স ময়দান। জনসমুদ্রের সকলেই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনলো সেই দৃঢ় ঘোষণা- এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সে ঘোষণার অনুরণন বুকে-হৃদয়ে ধারণ করে সকলেই হয়তো যুদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে সেদিন বের হয়েছিলেন রেসকোর্স ময়দান থেকে।কিন্তু একজন ছিলেন- যিনি বুকের গভীরে যুদ্ধের দামামা নিয়ে শুধু নয়, সেদিন দুরু দুরু বুকে বের হয়ে এসেছিলেন একটি ভিডিও ও একটি অডিও ক্যাসেট নিয়েও।

কি ছিলো সেই ভিসিআর টেপ ও গ্রামোফোনে করা অডিও রেকর্ডে, তা বলাই বাহুল্য।
সেটি ছিলো এমন একটি টেপ বা রেকর্ড যা না থাকলে আজকের প্রজন্ম কতটুকু শুনতে পেতো… দেখতে পেতো… জানতে পেতো সেই ইতিহাসের সেই অমর অধ্যায়টি? তা হতো প্রশ্নসাপেক্ষ।

বিজ্ঞাপন

কেবল তাই নয়, প্রশ্ন এও হতে পারতো- কতটুকুই বা বুঝতে পেতো এই প্রজন্ম সেই অমোঘ বাণী- কবির ভাষায় সেই অমর কবিতা- এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’র মর্মার্থ?

কী করেই বা তারা বুঝতে পারতো- কবে থেকে কিভাবে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের হলো।

ওই রেকর্ড না থাকলে আজ জানা সহজ হতো না কী ঘটেছিলো সেই ৭ মার্চে। বাঙালি জানতে পেতো না, সত্যিকারের জনসমুদ্র আসলে কি? ক্যামন? তারা বুঝতে পেতো না, এমন ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু কতটা দৃঢ় ছিলেন, কতটা নিশ্চিত ছিলেন একটি জাতিকে স্বাধীন করার প্রত্যয়ে। সর্বোপরি এও তো বলা চলে- সেদিন সেটি ভিডিওতে ধারণ করা না হলে ৭ মার্চের ভাষণের আজ যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি তা ত্বরান্বিত করাও হতো অনেক কঠিন।

বিজ্ঞাপন

তিনি এম এ খায়ের। খায়ের মিয়া নামে ছিলেন সুপরিচিত। তৎকালীণ এমএলএ এমএ খায়ের ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। কেউ কেউ বলতো বঙ্গবন্ধুর বন্ধু। সবচেয়ে বড় পরিচয় একজন দেশপ্রেমিক, বাঙালি চেতনায় উদ্দীপ্ত এক প্রাণ।

জন্ম গোপালগঞ্জ জেলার মকসুদপুরের ঝুটি গ্রামে। আর ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ৮৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন এমএ খায়ের। সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার শোকবার্তায় বলেন- মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান জাতি গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করবে।

তবে মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে ছিলেন আরও চার দশাধিককাল।

কতটা চেতনা ধারণ করে তিনি এই সমাজে বেঁচে ছিলেন তা আমাদের জানা। মহান মুক্তিযুদ্ধের পরও দেশ গঠনের কঠিন ব্রত তিনি নিয়েছিলেন। জাতির জনকের সেই ঘোষণা এবার প্রয়োজন অর্থনৈতিক মুক্তি, সেই চেতনাকেও তিনি ধারণ করেছিলেন গভীর আন্তরিকতায়। বেসরকারি ব্যাংক যমুনা ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

তবে চেতনার মশালতো প্রজ্জ্বলিতই ছিলো। সেই প্রখর দুপুরে জাগ্রত চেতনার মানুষটি নইলে এমন একটি উদ্যোগ কেনই নিয়েছিলেন? তার দুরদর্শিতায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম আজ চিনতে পেরেছে কোথা থেকে কিভাবে উৎসারিত আমাদের স্বাধীনতা।
তথ্য প্রমাণ যতটুকু মেলে তাতে সেই ভিডিও ধারণ করে মোটেই শান্তিতে ছিলেন না এম এ খায়ের। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, যে করেই হোক পাক সেনারা তাকে পাকড়াও করে এই ভিডিও নিয়ে নেবে। আর সে কারণেই অনেক পালিয়ে পালিয়েও বেড়াতে হয়েছে। বলা চলে ৮ মার্চ থেকেই শুরু হয়ে যায় তার অন্য এক যুদ্ধ। একটি ভিডিও ক্যাসেটকে বাঁচিয়ে রাখার যুদ্ধ। একটি ইতিহাসের অনন্য সাক্ষীকে টিকিয়ে রাখার অন্য অনন্য সংগ্রাম।

এই সংগ্রামের কথা জাতিকে ভুললে চলবে না। তার মৃত্যুর পর সে বছরের মার্চে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয় এম এ খায়েরকে। তবে যতদিন ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে পদ্মা-মেঘনা-যমুনার এই দেশের প্রান্তরে প্রান্তরে বাঁচবে- ‘ভাইয়েরা আমার… কিংবা… রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেবো… কিংবা এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম… আর সবশেষে জয়বাংলা… ততদিন এম এ খায়ের বেঁচে থাকবেন তার কৃতকর্মে।

সারাবাংলা/এজেড/এমএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন