বিজ্ঞাপন

এখন একুশে গ্রন্থমেলার ভরা যৌবন

February 16, 2018 | 11:33 pm

এস এম মুন্না

বিজ্ঞাপন

যেমনটা ভাবা হচ্ছিল, তেমনটাই এখন বইমেলার চিত্র। দুই সপ্তাহ পেরিয়ে এখন পূর্ণ যৌবনে এবারকার একুশে গ্রন্থমেলা। চৈত্র মাস আসতে এখনো ঢের সময় বাকি, সবেমাত্র ফাল্গুনের চতুর্থ দিন। কিন্তু আজ শুক্রবার চৈত্রের মতই সূর্য তাপ বিলিয়েছে সেই সকাল বেলা থেকেই। গনগনে সূর্যের তাপে কপাল বেয়ে চিকন ঘাম গড়িয়ে পড়লেও উৎসব প্রিয় মানুষকে ঘরে বসিয়ে রাখা যায়নি। বরং সকাল থেকে শুরু হয়েছে মেলামুখী মানুষের স্রোত। এই স্রোত চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

এবারকার মেলার তৃতীয় শুক্রবার আজ। সেই সঙ্গে ছিল মেলার তৃতীয় শিশু প্রহরও। ছিমছাম পরিবেশে আনন্দময় আরও একটি দিন কাটালো শিশু-কিশোররা। দৌড়-ঝাঁপ, হই-হুল্লোড় আর বই কেনার আনন্দে সকাল থেকেই মুখর করে রেখেছিল মেলাপ্রাঙ্গণ। ক্ষণিকের জন্য হলেও ছিল না মা-বাবার কড়া শাসন-বারণ। বরং আবদার মিটিয়েছেন বই কিনে দিয়ে। সবার হাতে হাতে ছিল নতুন বই। কেউ কেউ মেলাপ্রাঙ্গণেই বসে যায় সদ্য কেনা বইটি পড়তে।

সকাল ১১টায় মেলার দুয়ার খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু তার আগে মেলার প্রবেশদ্বারে লেগে যায় প্রচণ্ড ভিড়। একজন নয়, দুজন নয়, দলে দলে আসতে থাকে শিশু-কিশোররা। সঙ্গে মা-বাবা। কারও হাত ধরে, কারও কাঁধে চড়ে মেলায় আসে শিশুরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়তে থাকে। ওইদিকে মেলামঞ্চে ছিল শিশু-কিশোরদের সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত নির্বাচন। ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ কচিকণ্ঠে বারবার উচ্চারিত হচ্ছিল। আর মজার মজার সব সাধারণ জ্ঞানের উত্তর দিকে বিচারকদের বাহবা কুঁড়িয়েছেন শিশু-কিশোররা।

বিজ্ঞাপন

মেলার সোহরাওয়াদী উদ্যানে শিশু কর্নার। প্রথম তিন ঘণ্টা শিশু-কিশোরদের জন্য সময় বরাদ্দ করে দেওয়া হলেও, বড়রা এসেছিলেন। তাই সকাল থেকে মুখর মেলা প্রাঙ্গণ। এই ভিড় থাকবে আজ রাত ৯টা পর্যন্ত মেলার আলো নিভে দেওয়ার আগ পর্যন্ত। শিশু কর্নারে এদিনও হাস্যরস কথা-বার্তা আর অঙ্গ-ভঙ্গি করে সর্বক্ষণ মাতিয়ে রেখেছিল সিসিমপুরের কার্টুন চরিত্ররাও। অনেকেই তাদের সঙ্গে সেলফি তুলেছে। লাইভ কার্টুন ছাড়াও সিসিমপুরের প্রতিকৃতি রাখা আছে এখানে। সেই প্রতিকৃতির পাশে দাঁড়িয়েও বহু শিশু-কিশোরকে দেখা গেলো ছবি তুলতে। এও এক ধরনের মজা।

বই কিনতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে সেবা প্রকাশনীর স্টলে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে রয়েছে এই প্রকাশনীর স্টল। বিশ্বের জনপ্রিয় সব উপন্যাস ও গল্পের অনুবাদের বইয়ের পাশাপাশি মাসুদ রানা, কুয়াশা, শিকার কাহিনি, পিশাচ কাহিনি ও তিন গোয়েন্দা সিরিজের বই তো আছেই। সেবা প্রকাশনী মেলা কেন্দ্র করে কোনো বই প্রকাশ করে না। তারা সারা বছরই নতুন বই বের করে সে হিসেবে তাদের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে নিয়াজ মোর্শেদ ও কাজী শাহনূর হোসেন রূপান্তরিত ‘রবিনসন ক্রুসো’, ‘দি স্কারলেট পিম্পপারনেল’, ‘অ্যাক্রস দ্য পিরেনীজ’, ‘সুইস ফ্যামিলি রবিনসন’ ইত্যাদিসহ আরও অনেক বই।

বিজ্ঞাপন

শিশু-কিশোদের জন্য সুনির্বাচিত কিছু বইয়ের তথ্য: এখন পর্যন্ত মেলায় শিশু-কিশোরদের নতুন বই এসেছে ১১৫টি। প্রকাশকরা জানালেন নতুন বইয়ের পাশাপাশি আগের বছরগুলোতে প্রকাশিত হওয়া বইগুলো ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই নতুন-পুরাতন মিলিয়ে এক গুচ্ছ বইয়ের তালিকা দেওয়া হলো সারাবাংলা ডট নেট পাঠকদের সুবিধার্থে। এবার নতুন আসা শিশু-কিশোর, ছড়া, রোমাঞ্চোপন্যাস, বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনীর বইয়ের মধ্যে রয়েছে সাইক্লোন-মুহম্মদ জাফর ইকবাল (তাম্রলিপি), বাহাদুর পিঁপড়ে-তাতিয়ানা মাকারোভা (দ্যু প্রকাশন), রূপালী রাজপ্রাসাদ-মোস্তফা মামুন (পার্ল), ভয়ংকর জাদুকর-সুমন্ত আসলাম (আলোঘর), ছদ্মবেশী ঘাতক-ইকবাল খন্দকার (পার্ল), ছন্দ-ছড়ায় স্বপ্ন আঁকি-ইসলাম তারিক, (দাঁড়িকমা প্রকাশনী), বুড়ো আংলা-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, (কবি প্রকাশনী), সেরা সাত ভৌতিক উপন্যাস: হুমায়ূন আহমেদ (অবসর), দুই বাংলার নির্বাচিত ছড়া-সজল আহমেদ (কবি প্রকাশনী), লাল নেকড়ে- রকিব হাসান (অবসর), সেরা সাত ভৌতিক উপন্যাস-রকিব হাসান (অবসর), ভূতখেয়ালি-আশিক মুস্তাফা (তাম্রলিপি), সত্যি অ্যাডভেঞ্চার- আহসান হাবীব (তাম্রলিপি), ফুটবলার বিজ্ঞানী-তপন চক্রবর্তী (অনুপম প্রকাশনী), সারপ্রাইজ-দন্ত্যস রওশন (অনন্যা), গল্পগুলো পাশের দেশের-আলী ইমাম (বাঁধন), এক্স  পেরিমেন্ট-নাসরীন মুস্তাফা, (বাংলা প্রকাশ), না ঘুমানোর দল-পলাশ মাহবুব (পাঞ্জেরী), রাজুর বিড়ম্বনা-কাইজার চৌধুরী (য়ারোয়া বুক কর্ণার), কফিমেকার-অরুণ কুমার বিশ্বাস (অনিন্দ্যপ্রকাশ), বঙ্গবন্ধু ও সাতই মার্চের ছবি-রফিকুর রশীদ (বাঁধন), তালহা ও তার ফড়িং বন্ধু-অরণ্য প্রভা (সপ্তডিঙ্গা), শ্রডিঙ্গারের  জেব্রা-আহসান হাবীব (শিকড়), নির্বাচিত গল্প-মূল : জয়েস কেরল ওটস, অনুবাদ: দুলাল আল মনসুর (বেহুলা বাঙলা), অ্যাতিনা-মুহম্মদ জাফর ইকবাল, (সময় প্রকাশন), হাফ ডজন অ্যাডভেঞ্চার-আহসান হাবীব (অনুপম প্রকাশনী), বেড়ালের গলায় ঘণ্টা-সৈয়দ নজমুল আবদাল (পাঞ্জেরী), তোমাদের জন্য বিজ্ঞান-ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী, (অনুপম প্রকাশনী), রুকু টুকুর গাছবন্ধু-অদ্বৈত মারুত (শিশুগ্রন্থ কুটির), ‘মাছ খাবে ভুতোং’ ও ‘ব্যাটসম্যান ভুতো’ রিদওয়ান আক্রাম (চিরন্তন প্রকাশ), অ্যানি নামের জ্ঞানী ভূত-রোহিত রুবেল (রিয়া প্রকাশন), পরির হতে ঘড়ি- মাহমুদ মোস্তফা, (শিশুকিশোর প্রকাশনা), ছন্দ ঝরে বন্ধ ঘরে- পৃথ্বীশ চক্রবর্তী (সপ্তবর্ণ), সোনালি ডানার চিল : কৈশোর-সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, (আগামী প্রকাশনী), উড়ন্ত মন দূরন্ত মন-রফিক লিটন (সাহস পাবলিকেশন্স), তপুর কথা-সুশান্ত সরকার (জয়তী প্রকাশনী), বনভোজন-নাজিয়া জাবীন (ময়ূরপঙ্খী), সেই পরী-রানিজা আরা মৌ, (সপ্তবর্ণ), ভয়ংকর ভ‚তের গল্প: রবিউল ইসলাম (শিশুকিশোর প্রকাশন)। আগের বছরগুলোতে প্রকাশিত হওয়ার বইগুলোর মধ্যে অবসর ও প্রতীক প্রকাশনীর স্টলে পাওয়া যাবে চাররঙা এক গুচ্ছ শিশুতোষ বই। শরিফুল ইসলাম ভূইঁয়া রূপান্তরিত নাসিরুদ্দিন হোজ্জার হাসির গল্প ‘বাজি’ও ‘মিষ্টি’, ঈশপের গল্প ছয়টি বই ‘সিংহ ও ষাঁড়, ‘সিংহ ও হাতি’, চিতা ও শেয়াল’, ‘নেকড়ে, শেয়াল ও গরিলা’, ‘পিঁপড়ে ও ঘুঘু’, ‘খরগোশ ও কাছিম’। আরও আছে ‘রবীন্দ্রনাথ ছেলেবেলা’ ও ‘রবীন্দ্রনাথ কিশোর জীবনী : চিত্ররূপময় আলেখ্য’ শিরোনামে দুটি বই। বড়রাও বইটি পড়ে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে আরও বিশদ জানতে পারবেন। পাতায় পাতায় চিত্রিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক ও সাহিত্যজীবনের বিশেষ মুহূর্ত। হায়াৎ মামুদ সম্পাদিত বইটির চিত্রিত সংস্করণে পরিকল্পনা করেন আলমগীর রহমান। শেখ আবদুল হাকিমের ভ‚ত বিষয়ক তিনটি বই পাওয়া যাচ্ছে প্রতীক প্রকাশনীতে। অন্যপ্রকাশ পাওয়া যাচ্ছে কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের ‘কাকারু’, ‘টগর অ্যান্ড জেরি’, ‘ব্যাং কন্যা এ্যালেং’, ‘কানী ডাইনী’, ‘বোকা রাজার সোনার সিংহাসন’, ‘কাক ও কাঠগোলাপ’ বইগুলোর পরিমার্জিত সংস্করণ। মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘এখন তখন মানিক রতন’ (শুদ্ধস্বর), বাপ্পার বন্ধু (তা¤্রলিপি), টোনাটুনি ও ছোটচাচ্চু (পার্ল পাবলিকেশন্স)। ফিরোজ ইমামের ‘জোড়া হাঁস টুয়েন্টি টু গণিত কল্পকাহিনি’ (শুদ্ধস্বর), সুনন্দাকবীরের ‘সবকিছু মায়ের জন্য’ (আগামী)। ইন্দ্রজিৎ সরকারের দস্যুর জঙ্গলে তোতন’ (শুভ্রপ্রকাশ)। হাসান আজিজুল হকের ‘ফুটবল থেকে সাবধান’, ‘লাল ঘোড়া আমি’, সুফিয়া বেগমের ‘কেনু বুড়ির জঙ্গলে দুঃসাহসী রাজু’, দীপু মাহমুদের ‘মাহিনের জুতো জামা’ ও ‘কিটিরমিটির’, মোজাম্মেল হক নিয়োগীর ‘ছোটমামা’, তিন্নির পথ খোঁজা’ (ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ)। বিপ্রদাশ বড়–য়ার ‘রাতের রেলগাড়িতে ছায়াপথে ভ্রমণ’, ঋব্দ রিদওয়ানুল হকের ‘প্রফেসর এ ডাবল’ (অ্যাডর্ন), হাসান শাহরিয়ায়ের ‘দশটি কিশোর উপন্যাস’, শেখ আবদুল হাকিমের ‘এ কেমন প্রতিশোধ’ ও ‘মুঠোর ভেতর গুপ্তধন’ (অনন্যা)। আফজাল হোসেনের ‘কুহকিনী’, কুমায়ুনের মানুষ খেকো’, রিজিয়া রহমানের ‘রাজার ছড়া অন্য ছড়া’, ‘চশমা পরা পাখি’ (ঐতিহ্য), অনার্য থেকে এসেছে সৈয়দ শামসুল হকের বর্ণমালা শেখার বই ‘বাবুদের বর্ণচেনা’, শামসুজ্জামান খানের ‘কালো মানিকের গল্প ও অন্যান্য’ (রাত্রী প্রকাশনী)। চারুলিপিতে পাওয়া যাচ্ছে জাহানারা ইমাম অনূদিত বিখ্যাত একগুচ্ছ শিশু-কিশোর কাসিক্যাল উপন্যাস।

শনিবার শিশুপ্রহর: ১৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার মেলার দুয়ার খোলে দেওয়া হবে বেলা ১১টায়। চলবে একটানা রাত ৯টায় পর্যন্ত। তবে প্রথম তিন ঘণ্টা বেলা ১১ থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশু প্রহর। অন্য দিকে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মেলা মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে শিশু-কিশোরদের নানা প্রতিযোগিতা। এ তথ্য জানিয়েছে একাডেমির জনসংযোগ উপ বিভাগ।

সারাবাংলা/এসএমএম/এমআই

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন