বিজ্ঞাপন

এবার ‘অ্যাম্বাসেডর অব কনসায়েন্স’ খেতাব হারাচ্ছেন সুচি

November 12, 2018 | 7:13 pm

।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: এক সময়কার নৈতিক অবস্থান থেকে লজ্জাজনকভাবে সরে আসায় মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচিকে দেওয়া সর্বোচ্চ পদকটি কেড়ে নিচ্ছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সোমবার (১২ নভেম্বর) এক ঘোষণার মাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়েছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে।

ফিরছে ২২৬০ রোহিঙ্গা, জানাল মিয়ানমার

নভেম্বরের ১১ তারিখে সংস্থাটির মহাসচিব কুমি নাইডু অং সান সুচিকে দেওয়া এক চিঠির মাধ্যমে তাকে দেওয়া এই পদকটি প্রত্যাহারের খবরটি জানান। ২০০৯ সালে অং সান সুচি এই সম্মাননা পেয়েছিলেন। নাইডু তার লেখা চিঠিতে সংস্থাটির হতাশার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, আট বছর গৃহবন্দী থাকা এই নেত্রী ক্ষমতা গ্রহণের অর্ধ মেয়াদ পূরণের পর তার রাজনৈতিক নীতি-আর্দশ, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার কথা ভুলে সামরিক বাহিনীর চালানো জাতিগত  নিধনযজ্ঞ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি ছিলেন উদাসীন।

সুচিকে দেওয়া চিঠিতে কুমি নাইডু লিখেছেন, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একজন অ্যাম্বাসেডর অফ কনসায়েন্স হিসেবে আপনার কাছে প্রত্যাশা ছিল শুধু মিয়ানমারের ভেতরে নয়, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের অবিচারের বিরুদ্ধে আপনি আপনার নৈতিক কতৃত্ব ও ভূমিকা রাখবেন’।

বিজ্ঞাপন

‘আজ আমরা গভীর দুঃখ ভারাক্রান্ত, কারণ আপনি আর আশা, সাহস এবং মানবাধিকার রক্ষার প্রতিনিধিত্ব করেন না। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আপনাকে দেওয়া ‘অ্যাম্বাসেডর অব কনসায়েন্স’ সম্মাননা অব্যাহত রাখার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছে না। সুতরাং আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে আপনাকে দেওয়া উপাধিটি বাতিল ঘোষণা করছি।’

মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেতা অং সান সুচির নেতৃত্বে বেসামরিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর তার প্রশাসন একাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিল।

বিজ্ঞাপন

জাতিগত বিদ্বেষের কারণে বহু বছর ধরে বৈষম্যের শিকার রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক বাহিনীর চালানো দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ব্যর্থ হওয়ায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বারবার অং সান সুচি এবং তার সরকারের সমালোচনা করেছে। গতবছর নিধনযজ্ঞ চলাকালীন সময়ে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী  হত্যা করেছে হাজরো মানুষ। এই সময় ধর্ষিত হয়েছে অসংখ্য নারী ও শিশু, আটক ও নৃশংসতার হাত থেকে রেহাই পায়নি বৃদ্ধ, শিশু এবং কিশোর। রাখাইন রাজ্যে শতাধিক গ্রাম আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে। ৭ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। জাতিসংঘের একটি তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দেশটির র্শীষ সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত এবং বিচার হওয়া প্রয়োজন।

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর ওপর বেসামরিক সরকারের কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা সংঘঠিত সমস্ত অপরাধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় ও গুরুত্ব অস্বীকার করে অং সান সুচি ও তার দফতর তাদের রক্ষা করেছেন এবং রাখাইনে প্রবেশ করতে দেয়নি কোনো আর্ন্তজাতিক পর্যবেক্ষক। সুচি প্রশাসন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বৈরিভাব তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে, এ ছাড়াও ‘জঙ্গি’ আখ্যা দিয়ে অভিযোগ তুলেছে এই জনগোষ্ঠী নিজেরাই নিজেদের বাড়ি পুড়িয়ে নাটক সাজিয়েছে ‘মিথ্যা ধর্ষণের’। এই সময় উসকানিমূলক এবং অমানবিক সব লেখা প্রচারে সক্রিয় ছিল রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। তাদের প্রকাশিত লেখাগুলো রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়াকে বর্ণনা করেছে ‘জঘন্য পলায়ন’ এবং ‘পোকামাকড়’ তুল্য কাজ হিসেবে।

‘রোহিঙ্গাদের পক্ষে দাঁড়াতে অং সান সুচির ব্যর্থতাই একটি মূল কারণ আমরা তার ‘অ্যাম্বাসেডর অফ কনসায়েন্স’ উপাধিটি অব্যাহত রাখার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাইনি, বলেছেন কুমি নাইডু।

‘ভয়ঙ্কর নিপীড়ন এবং নির্যাতনের এইসব ঘটনা অস্বীকার করে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশে কিংবা রাখাইন রাজ্যে অবস্থানরত লাখো রোহিঙ্গার জীবনমান উন্নয়নের বা পরিবর্তনের আশা ক্ষীণ। নৃশংসতা থামাতে ভবিষ্যতে সরকারের উদ্যোগ কেমন হতে পারে তা সহজেই বোঝা যায় যখন একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংঘঠিত অপরাধের কথা রাষ্ট্রযন্ত্র অস্বীকার করে।’

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়াও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কাচিন এবং উত্তরের শান স্টেইটগুলোতে সেনাবাহিনী পরিচালিত বর্বর নির্যাতন এবং মানবতা বিরোধী অপরাধের ওপর আলোকপাত করেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মনে করে অং সান সুচি সামরিক নির্যাতন, যুদ্ধাপরাধ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কাজে তার প্রভাব ও নৈতিক কর্তৃত্ব ব্যবহারে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি ব্যর্থ হয়েছেন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়ে সামরিক বাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে। এই অঞ্চলগুলোতে মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর কাজে তাঁর প্রশাসনের কঠোর নিষেধাঞ্জা প্রায় ১০০,০০০-এরও বেশী উদবাস্তু জনগোষ্ঠীর জীবন কঠিন করে তুলেছে।

সামরিক বাহিনীর বিস্তর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও, আইন প্রনয়ণ এবং সংশোধনের বেশ কিছু ক্ষমতা বেসামরিক সরকারের হাতে রয়েছে। বিশেষ করে মত প্রকাশ ও সমিতির স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের আধিকার নিশ্চিত করার মতন বিষয়গুলো। অথচ সুচি সরকার ক্ষমতা গ্রহণের দুই বছরের মাথায় মানবাধিকার রক্ষাকর্মী, শান্তি কর্মী ও সাংবাদকিদের হুমকি, ভয়, হয়রানি এমনকি কারাবরণও করতে হয়েছে।

দমনমূলক আইনগুলো রোধ করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। এই আইগুলোর মধ্যে এমন কিছু ধারা আছে যা সুচিসহ নানা রাজনৈতিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের অন্তরীণ করার লক্ষে ব্যবহার করা হয়েছিলো অতীতে। সংশোধনের পরিবর্তে তিনি আইনগুলো ব্য়বহারের পক্ষ নিয়েছেন। ফলে সেনাবহিনীর দ্বারা সংঘঠিত  হত্যাকাণ্ডের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন রয়র্টাসের দুজন সাংবাদিক।

গৃহবন্দী থাকাকালীন সময়ে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রক্ষায় শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনের স্বীকৃতি হিসেবে অং সান সুচি ২০০৯ সালে ‘অ্যাম্বাসেডর অফ কনসায়েন্স’ সম্মাননা পেয়েছিলেন। ঠিক আজকের দিনে অবসান হয়েছিল তার আট বছরের কারা জীবন। ২০১৩ সালে সম্মাননা পেয়ে অং সান সুচি বলেছিলেন,  ‘আমাদের ওপর থেকে দৃষ্টি ও মন সরিয়ে নেবেন না, এমন একটি দেশ গড়তে আমাদের সহায়তা করুন যেখানে আশা এবং ইতিহাস একত্রিত হতে পারে’।

‘সেদিন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অং সান সুচির অনুরোধ বেশ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছিল, যে কারণে মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় থেকে আমরা চোখ সরায়নি,” বলেছেন নাইডু।

এ ছাড়াও তিনি আরও বলেছেন, ‘সুচি সাহায্য করুন আর নাই করুন, আমরা মিয়ানমারে বিচার এবং মানবাধিকার নিশ্চিতের লক্ষে লড়াই চালিয়ে যাব’।

সারাবাংলা/এমআই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন