বিজ্ঞাপন

এমপিপুত্রের গাড়িচাপায় মৃত্যু: ৩০ লাখ টাকায় সমঝোতা!

June 22, 2018 | 2:10 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: রাজধানীতে এমপিপুত্র সাবাব চৌধুরীর গাড়িচাপায় পথচারীর মৃত্যুর ঘটনা ৩০ লাখ টাকায় সমঝোতার প্রস্তাব উঠেছে। নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর পক্ষ থেকেই সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে নিহতদের পরিবারকে। নিহত সেলিম ব্যাপারী যে কোম্পানির হয়ে গাড়ি চালাতেন, সেই কোম্পানির মালিক পরিবারের পক্ষ থেকে ৩০ লাখ টাকার অঙ্কের প্রস্তাব দেন। এমপির পক্ষ থেকে অবশ্য কিছু টাকা কম দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

সেলিম ব্যাপারীর কর্মস্থল নাওয়ার প্রোপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইমরান হোসেনের সাথে শুক্রবার (২২ জুন) দুপুরে কথা হয় সারাবাংলা’র। এ সময় ইমরান হোসেন এসব তথ্য জানান।

ইমরান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (২১ জুন) রাতেই এমপি সাহেব প্রথমে আমার সাথে ফোনে কথা বলেন। তখনই তিনি সমঝোতার প্রস্তাব দেন। এরপর কথা এগিয়ে নিতে তিনি চারজন লোক পাঠান আমার ডিওএইচএসের অফিসে (বাড়ি-৪৬৫, ফ্লোর-১, রোড-৮, বারিধারা)। সেখানেই তাদের সাথে কথা হয়। নিহতের পরিবারের বর্তমানে উপার্জনক্ষম কেউ নেই। তাই তারা যেন ডালভাত খেয়ে বাঁচতে পারে, সেজন্য ৩০ লাখ টাকার একটা ফিক্সড ডিপোজিট করে দিতে বলেছি। এই টাকা থাকলে প্রতিমাসে ২৫ হাজার টাকা আসবে। সেই টাকা দিয়ে তারা অন্তত চলতে পারবে।’

বিজ্ঞাপন

সমঝোতার ওই বৈঠকে সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী, তার স্ত্রী কামরুন্নাহার শিউলি, সন্তান সাবাব চৌধুরী বা পুলিশের পক্ষ থেকে কেউই উপস্থিত ছিলেন না। তবে নিহত সেলিম ব্যাপারীর স্ত্রী-সন্তানরা ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান জানান নাওয়ার প্রোপার্টিজের এমডি।

ইমরান হোসেন জানান, প্রায় দুই ঘণ্টা তার অফিসে সমঝোতা বৈঠক হয়। বৈঠক চলার সময়ও সংসদ সদস্য একরামুল করিমের সঙ্গে ফোন কথা হয় তার। ইমরান বলছেন, “ওই সময় এমপি সাহেব বলেন, ‘আমার প্রতি আপনারা বিশ্বাস রাখেন, ওই পরিবারের প্রতি সুদৃষ্টি দেওয়া হবে। শুধু এই টাকাই নয়, ভবিষ্যতে তাদের আরো দেখভাল করা হবে।’ পরে দুয়েকদিনের দিনের মধ্যেই সংসদ সদস্যের লোকেরা আবার বসবেন বলে তারা চলে যান।”

ইমরান জানান, সংসদ সদস্য ইকরামুল করিমের পক্ষ থেকে বলা হয়, সমঝোতার মাধ্যমে নিহতের পরিবারকে টাকা দেওয়া হবে; তবে গাড়িচাপায় নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি তুলে নিতে হবে। আর এ ঘটনায় সংসদ সদস্যের পরিবারের কারো জড়িত থাকার কথাও বলা যাবে না।

বিজ্ঞাপন

নিহত সেলিম ব্যাপারীর পরিবার বিষয়টি তার ওপরই ছেড়ে দিয়েছে বলে জানান ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, ‘সেলিম আমাদের বিয়ের আগে থেকে আমার গাড়ি চালান। সে প্রায় ২৬ বছর হলো। সেলিম আমার স্ত্রী ও আমাকে তুমি করে বলতেন, এতটাই কাছের মানুষ। এখন টাকা-পয়সা দিয়ে তো তার জীবনের দাম হবে না। আবার মামলা চালিয়েই বা কী হবে! সেলিমের পরিবারের দিকে তাকিয়েই মূলত এমপি সাহেবের সমঝোতার প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছি।’

সমঝোতার জন্য শেষ পর্যন্তদ সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী কত টাকা দিতে পারেন বলে মনে করেন— জানতে চাইলে ইমরান বলেন, ‘৩০ লাখের কথা বলা হয়েছে। হয়তো কিছুটা কম হতে পারে। দুয়েকদিনের মধ্যে আবার বসে এটা চূড়ান্ত করা হবে বলে কথা দিয়েছেন এমপি সাহেব।’

এমপিপুত্র সাবাবই যে গাড়ি চালিয়েছিলেন, তা কি একরামুল করিম স্বীকার করেছেন— জানতে চাইলে ইমরান হোসেন বলেন, ‘তারা তো মেনে নিয়েই সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছেন। কে গাড়ি চালাচ্ছিল, সে কথা সরাসরি না বললেও তার গাড়ি চাপাতেই যে সেলিম নিহত হয়েছেন—  সেটি এমপি সাহেবও বারবার বলেছেন। আর কে গাড়ি চালাচ্ছিলেন, সেটা তো গণমাধ্যমেই বের হয়েছে।’

সমঝোতার বিষয়ে জানতে চাইলে নিহত সেলিম ব্যাপারীর জামাতা আরিফ ভূঁইয়ার মোবাইলে কল করা হলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। সেলিমের বড় ভাই ইউসুফ মোবাইলে বলেন, ‘শুনতেছি এটা নাকি সমাধানের দিকে এগুচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

সমঝোতার বিষয়ে জানতে সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী ও তার স্ত্রী কামরুন্নাহার শিউলির মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাফরুল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুজন কর্মকারের মোবাইলে কল করলে তিনিও কল রিসিভ করেননি।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান সারাবাংলা’কে বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। আর গাড়ির নম্বরপ্লেট দিয়ে আগামী রোববার (২৪ জুন) বিআরটিএ থেকে কাগজপত্র তোলা করা হবে। এরপরই গাড়িটি জব্দ ও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করবে পুলিশ।’

উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়ে গেলে আইনি প্রক্রিয়াটা কী হবে, জানতে চাইলে ডিসি মাসুদুর রহমান বলেন, ‘সেটি আদালতের বিষয়। সমঝোতা হয়ে গেলে সেই কাগজপত্রসহ মামলা আদালতে পাঠানো হবে। আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটি সবাইকে মানতে হবে।’ তবে সমঝোতার ক্ষেত্রে পুলিশ কোনো ভূমিকা পালন করছে না, পুলিশ তদন্তের কাজ করছে বলে জানান তিনি।

‘সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সনাক্ত হবে গাড়ির চালক’

এমপিপুত্রই চালাচ্ছিলেন গাড়ি, মায়ের দাবি- ছেলে ছিল নোয়াখালী

 

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন