বিজ্ঞাপন

এসকে সিনহার ‘স্বপ্নভঙ্গ’, প্রতিক্রিয়ায় সতর্ক সবাই

September 20, 2018 | 11:21 pm

।। আবদুল জাব্বার খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: দেশত্যাগের সময় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে চিরকূট ধরিয়ে দিতে আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। ফের তিনি আলোচনায় এসেছেন আত্মজীবনীমূলক একটি বই প্রকাশ করে। সরকারের চাপে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন ‘একটি স্বপ্নভঙ্গ: আইনের শাসন, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র’ (আ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি) নামে ওই বইতে।

সাবেক প্রধান বিচারপতি কোন প্রেক্ষাপটে দেশ ছেড়েছেন, কেন তিনি পদত্যাগ করেছেন, সরকারের সঙ্গে তার দূরত্ব কোথা থেকে সৃষ্টি তৈরি হয়েছে— এর সব বিষয়ই তিনি তুলে ধরেছেন তার বইয়ে। ৫২৩ পৃষ্ঠার বইটিতে বিচার ব্যবস্থার অতীত, বর্তমান বিষয় ছাড়াও তার জীবনের বিভিন্ন দিকও তুলে ধরেছেন এস কে সিনহা।

বইটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই চলছে আলোচনা। অ্যাটর্নি জেনারেলসহ সবাই সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, বইটি ভালোভাবে না পড়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। যদিও বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিদেশে বসে আপন মনে ভুতুড়ে কথা ছাপছেন।

বিজ্ঞাপন

‘আ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ বই অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে অ্যামাজন ডটকমে। বইটির ২৭ অধ্যায়ে বিচারপতি এসকে সিনহা লিখেছেন, ‘একটিমাত্র স্যুটকেস নিয়ে আমি দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছি। আমাকে বলপ্রয়োগ করে দেশছাড়া করা হবে এবং রাষ্ট্রহীন অবস্থায় বিদেশে থাকতে হবে— এটা কল্পনাও করিনি।’

তিনি লিখেছেন, ‘আমি রাষ্ট্রহীন হয়ে থাকতে চাই না। কিন্তু কোটি টাকার প্রশ্ন হলো— যদি আমি দেশে ফিরে যাই তাহলে আমার জীবন কতটুকু নিরাপদ? সরকারের আচরণ দেখে আমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীই আমাকে দেশে ফিরতে নিরৎসাহিত করছেন।’

আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সাবেক প্রধান বিচারপতি লিখেছেন, একদিন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বারবার আমাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিলেন, প্রধান বিচারপতি হিসেবে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমি দাবি করব, নিঃসন্দেহে আমার নিয়োগ একটি সঠিক সিদ্ধান্তই ছিল। আমার মেয়াদে আমি অনেকগুলো চাঞ্চল্যকর মামলার রায় দিয়েছি। আমাকে নিয়োগ দেওয়ার পর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারই সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের ২ অক্টোবর বিচারপতির খাস কামরায় কী ঘটেছিল, সেটাও উল্লেখ করেছেন সিনহা। তিনি লিখেছেন, অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করার জন্য ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর আমি কোর্টে এলাম। সকাল সাড়ে ১১টায় আমার ব্যক্তিগত সচিব আনিসুর রহমান আমাকে জানালেন, দুপুর ১২টায় আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাইফুল আবেদিন। আমি তাকে আসার অনুমতি দিলাম। তিনি সময়মতো এলেন এবং সিঙ্গাপুর বিমানবন্দরে তার একজন কর্মকর্তার সঙ্গে কেন খারাপ ব্যবহার করেছি, তা জানতে চাইলেন। তার বডি ল্যাংগুয়েজ ও আমাকে সরাসরি যেভাবে চার্জ করছেন, তাতে হতবাক হয়ে গেলাম।

এসকে সিনহা লিখেছেন, তিনি এমনভাবে কথা বলছেন যেন আমি তার অধীন কোনো কর্মচারী। আমি ভাবলাম, এই অফিসার কিভাবে একজন প্রধান বিচারপতিকে চার্জ করার মতো দুঃসাহস দেখাতে সাহস পেলেন। তিনি আমাকে বললেন, আমার জানা উচিত, আমার দেওয়া ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর বিএনপি এতটাই খুশি হয়েছে যে তারা নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেছে। তারা টেক্সট মেসেজ বিনিময় করেছে যে তারা শিগগিরই ক্ষমতায় আসছে।

“আমি জবাবে তাকে বললাম, কে ক্ষমতায় আসবে সেটা আমার বিবেচনার কোনো বিষয় নয়। এতে যদি কেউ আহত হন, তাহলে সেটা তার দুর্বলতার প্রকাশ এবং এই দুর্বলতা হলো সরকারের। তিনি আমাকে আরও বললেন, তার ও প্রধানমন্ত্রীর মাঝখানে কেউ নেই। তিনি যা বলবেন, তা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হিসেবে আমার নেওয়া উচিত। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসরণ করেছেন। এরপর তিনি বললেন, ‘স্যার, ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত আপনি চার মাসের ছুটি নেন।’ আমি তার এ প্রস্তাব মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানালাম”,— লিখেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি।

বইটি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বইটি আমি এখনও দেখিনি। বই আসুক, দেখি। তারপর বলব। তবে বইটা ইন্টারেস্টিং হবে।’

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘বইটি এখনও দেখিনি। বই পড়ার আগে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’

তবে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিনহা বাবু যা বলেছেন, তা বাস্তব সত্য বলেছেন।’

তিনি বলেন, তাকে দেশ থেকে জোর করে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে— এমন অভিযোগ আমরা আগেও বলে এসেছি। আমাদের সেই কথাগুলোই সত্য হয়েছে।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় সরকারের মনমতো হয়নি বলেই প্রধান বিচারপতিকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল উল্লেখ করে জয়নুল আবেদীন বলেন, এটা বিচার ব্যবস্থার জন্য ভালো লক্ষণ নয়। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন গল্প তৈরি করে তার থেকে প্রধান বিচারপতির পদটি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এর একটাই কারণ। তা হলো— ষোড়শ সংশোধনীর রায়।

আর সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা সাইফুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কোনো মন্তব্য নেই।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২ অক্টোবর ছুটির আবেদন করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। এরপর তিনি ১৪ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে দেশত্যাগ করেন। এরপর তিনি বিদেশে বসেই প্রধান বিচারপতির পদ থেকে সরে দাঁড়াতে পদত্যাগপত্র পাঠান।

সারাবাংলা/এডেজেকে/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন