বিজ্ঞাপন

এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭%, এডিবির পূর্বাভাস

April 11, 2018 | 12:59 pm

।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: চলতি অর্থবছরে (২০১৭-১৮) মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে ৭ শতাংশ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) তার এশিয়ান ডেভলপমেন্ট আউট লুকে এ পূর্বাভাস দিয়েছে।

বুধবার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এডিবি কার্যালয়ে আউটলুক প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

এছাড়া সংস্থাটি আরও বলেছে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাড়াবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

সরকারি হিসাবে এ বছরের অনুমিত প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের তরফ থেকে অনুমিত প্রবৃদ্ধি ৬.৫ শতাংশ বলা হয়েছে। এবার এডিবি অনুমান করছে ৭ শতাংশ।

সাংবাদিক সম্মেলনে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ উপস্থিত ছিলেন। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থাটির ইকনোমিস্ট সুন চ্যান হং।

স্বল্পোন্নত দেশের এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরণে প্রাথমিক মূল্যায়নে যোগ্যাতা অর্জন করায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান মনমোহন প্রকাশ।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যারা ৩ শর্ত পূরণ করতে পেরেছে। অর্থাৎ মাথাপিছু আয়, অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা ও মানব সম্পদ উন্নয়নের শর্ত পূরণ করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ভারসাম্যের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিও শক্ত অবস্থানে। রাজস্ব ঘাটতিও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। তবে দেশকে আরও এগিয়ে নিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি রফতানি রেমিটেন্স বাড়বে। পোশাক শিল্পের বৈচিত্র্য ও শ্রমঘন শিল্পখাতে গুরুত্ব দেওয়া হলে আগামীতে প্রবৃদ্ধি বাড়বে।’ তাছাড়া আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইওে শিল্পায়ন নিশ্চিত করার তাগিদ দেন তিনি।

চলতি অর্থবছর কৃষি খাতে ২ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা দিয়েছে এডিবি। গত বছর ৩ খাতে পূর্বাভাস ছিল ৩ শতাংশ। এবার শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। রপ্তানি বেড়ে যাওয়ার কারণে শিল্পের প্রবৃদ্ধি বাড়বে। সেবা খাতে এ সময়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমে প্রবৃদ্ধি দাড়াবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।

রপ্তানি সম্প্রসারণের গতি কমে আসার পাশাপাশি রেমিটেন্সে নিম্নগতি সত্বেও গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির প্রবণতাও কমেছে। তবে চলতি হিসেবে ঘাটতি বেড়েছে। চলতি অর্থবছর কৃষি ও সেবা খাতে ধীরগতি সত্বেও অর্থনীতির ভালো প্রবৃদ্ধি হবে। তবে এ সময়ে চলতি হিসেবে ঘাটতি আরও বাড়বে। তবে টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে শিল্পের ভিত্তি শক্তিশালী করার পাশাপাশি রফতানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও নীতিগত সংস্কারের তাগিদ দিয়েছে এডিবি।

বিজ্ঞাপন

এডিবির মতে চলতি অর্থবছরে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ৬ দশমিক ১  শতাংশে, যা গত অর্থবছরে ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণ হিসাবে বলা হয়েছে তেল ও অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য মূল্য বৃদ্ধি পাবে। প্রাকৃতিক গ্যাস বিদ্যুতের দামের সমন্বয় করা এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাবে।

এছাড়া আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে দাঁড়াবে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে।

চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে রাজস্ব আহরণে ৩১ দশমিক ৮০ শতাংশ ও ব্যয়ে ২৬ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল। উন্নয়ন খাতে ৩৮ দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়তি ব্যয় ধরায় পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, রুপপুর, পায়রা বন্দর, রামপাল ও মাতারবাড়ির মতো মেগা প্রকল্পে গতি আসার সম্ভাবনা ছিল। রাজস্ব আয় জিডিপির ১৩ শতাংশ ও সরকারি ব্যয় জিডিপির ১৮ শতাংশে উন্নীতি করার পরিকল্পনা ছিল। আয় ও ব্যয় বৃদ্ধিও বিশাল লক্ষ্যমাত্র আদায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। প্রত্যাশিত হাওে আয় ও ব্যয় না হওয়ায় বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের মধ্যেই থাকবে।

১৯০ দেশের মধ্যে ডুয়িং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৭তম। দেশের সম্ভাবনাকে উন্নয়নে রুপান্তর করতে বাংলাদেশে ব্যবসার উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এখানে অবকাঠামো খাতে বড় ধরনের ঘাটতি আছে। বিদ্যুত, সড়ক ও রেলওয়ের মতো অবকাঠামোতে বাংলাদেশের অবস্থান তলানীতে। বর্তমানে দেশের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ জিডিপির ৩ শতাংশ। উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে তা ৬ থেকে ৮ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।

দেশের কর কাঠামোতে বড় ধরনের সংস্কার আনতে হবে। বাড়তি রাজস্ব আহরনে ভ্যাট আইন কার্যকর করতে হবে।

উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিও পাশাপাশি প্রতিযোগিতা সক্ষমতার বিবেচনায আমদানি শুল্ক যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে। ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ নিশ্চিত করতে ব্যাংকিং খাতের সংস্কার চেয়েছে এডিবি।

উৎপাদন বৈচিত্র্য আনতে বাংলাদেশ শ্রমিক ও প্রযুক্তির ঘাটতি রয়েছে। প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা নিতে এ খাতে যথাযত উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দিয়েছে এডিবি।

ঢাকা ও চট্টগ্রামে সমস্ত ব্যবস্য বাণিজ্য কেন্দ্রীভূত। ভারসাম্য আনতে সারাদেশে অর্থনৈতিক সঞ্চালনের কাজের গতি আনার তাগিদ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে চলতি অর্থবছরে এশিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ৬ শতাংশ এবং আগামী অর্থবছরে সেটি কমে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৯ শতাংশে। এছাড়া এশিয়ার মূল্যস্ফীতি চলতি এবং আগামী অর্থবছরে ২ দশমিক ৯ শতাংশে।

সারাবাংলা/জেজে/এমএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন