বিজ্ঞাপন

ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য নষ্ট করলে শাস্তির হুঁশিয়ারি বিএনপির

October 22, 2018 | 7:29 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো : আগামী ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের অনুমতি দিতে সরকার বাধ্য হবে বলে মনে করছেন জোটটির নেতারা। বিএনপি ঐক্যফ্রন্টকে এগিয়ে নিতে সর্বোচ্চ ছাড় দিতে রাজি জানিয়ে দলটির নেতারা চট্টগ্রামে এক সভায় বলেছেন, সমাবেশে বিএনপির কোনো নেতা ঐক্য বিনষ্ট হয় এমন কাজ করলে তাকে সাংগঠনিক শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

সোমবার (২২ অক্টোবর) নগরীর নাসিমন ভবনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চট্টগ্রাম বিভাগের এক সভায় এসব বক্তব্য উঠে এসেছে। ২৭ অক্টোবরের সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বিএনপি, গণফোরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, ন্যাপ (ভাসানী), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ভাসানী ফাউন্ডেশন, জমিয়াতুল ওলামা ইসলাম বাংলাদেশ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), কল্যাণ পার্টিসহ বিভিন্ন দলের চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার নেতারা বক্তব্য দেন। ঐক্যফ্রন্টের সভায় ২০ দলের শরীক দলের অনেকে বক্তব্য রাখলেও জামায়াত ইসলামীর কোনো নেতাকে দেখা যায়নি।

বিজ্ঞাপন

সভায় ঐক্যফ্রন্টের জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘২৭ অক্টোবর সমাবেশ হবেই। আমরা অনুমতি পাব। সিলেটেও সমাবেশের অনুমতি প্রথমে দেয়নি। ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। গতকাল (রোববার) নোটিশ পাঠানো হলে সরকার তড়িঘড়ি করে অনুমতি দিতে বাধ্য হয়। একইভাবে চট্টগ্রামেও সমাবেশের অনুমতি দিতে সরকার বাধ্য হবে।’

সমাবেশের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সমাবেশে বিএনপির কোন নেতা নিজের নামে ব্যানার দিলে তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। বিএনপি অনেক জনপ্রিয় দল। নেতার জনপ্রিয়তা থাকলে সেটা ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে শোডাউন করে দেখাতে হবে না। ব্যানারের উপরে থাকবে শুধু জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট লেখা। আর বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে ব্যানার থাকতে পারে। কারণ বেগম জিয়ার মুক্তি মানে গণতন্ত্রের মুক্তি।’

বিজ্ঞাপন

বিএনপি সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের সভায় আমাদের মহাসচিব বসেন ৭ নম্বর চেয়ারে। সভাপতির পাশে চেয়ারগুলোতে বসেন রব সাহেব, মান্না সাহেব। মোস্তফা মহসীন মন্টুও বসেন। আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বসেন আরও দূরে। এটা আমরা মেনে নিয়েছি। কারণ বড় দল হিসেবে আমাদের অবশ্যই ছাড় দিতে হবে।’

সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান সমাবেশে পুলিশের বাধার আশঙ্কা করে নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘মাথা গরম করার দরকার নেই। কারও উপর চড়াও হবেন না। চুপ থাকুন। তবে কেউ যদি গায়ের উপর এসে পড়ে, আমরা রামকৃঞ্চ মিশনের সদস্যের মতো বসে থাকব না।’

সভায় উপস্থিত ছোট দলগুলোর নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যখন নিজেদের ছোট দলের নেতা বলেন, তখন আমাদের কষ্ট লাগে। কে ছোট, কে বড় সেটা দেখে তো আমরা ঐক্য করিনি। আমাদের কাছে সবার গুরুত্ব সমান। আমরা সবাই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সৈনিক।’

সমাবেশে শৃঙ্খলা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অমুক ভাই, তমুক ভাইয়ের লোক বলে সমাবেশে স্লোগান দেওয়ার দরকার নেই। ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহার করে কোন ব্যানার হবে না। আমাদের সমাবেশগুলোতে নেতা বক্তব্য দেওয়ার সময় দেখা যায় পেছনে ৪-৫ জন দাঁড়িয়ে আছে। এটা যারা করবে, তাদের শাস্তি পেতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

সভায় বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি বলেন, সিলেটে যেভাবে সরকার সমাবেশের অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছে, চট্টগ্রামেও হবে। কারণ সরকার বুঝে গেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কতটা শক্তিশালী।’

বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আশরাফ উদ্দিন নিজান বলেন, ‘বড় দল, ছোট দল এটা কথা নয়। কথা হচ্ছে, আমরা ঐক্য করেছি এবং এই ঐক্য আমরা ধরে রাখতে চাই। আমাদের মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঐক্যফ্রন্টের মঞ্চে বসেন প্রথম সারির শেষে। স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেনের মতো প্রবীণ নেতারা অনেক সময় দ্বিতীয় সারিতেও বসছেন। আমাদের তো জায়গাও হয় না। এ্যানিও মাইক পায় না। তাহলে বুঝতে হবে, ঐক্য নিয়ে আমরা কতটা আন্তরিক।’

সভায় জেএসডি’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি গোলাম জিলানী চৌধুরী বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য ধরে রাখতে পারলে আগামী নির্বাচনে আড়াইশ’রও বেশি আসন আমরা পাব। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কোন অস্তিত্ব নেই। এখন আমাদের উচিৎ কে বড়, কে ছোট সেটা বিবেচনা না করে ঐক্যফ্রন্টকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’

প্রস্তুতি সভা আয়োজনের বিষয়ে না জানানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের শরীক দল জাগপা’র চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি আবু মোজাফফর আনাছ।

নাগরিক ঐক্যের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সোহরাব হোসেন বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের হাজার হাজার নেতাকর্মী আজ জেলে আছে। এই সমাবেশের মাধ্যমে সরকারকে বলতে হবে, অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ করুন।’

গণফোরামের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি মনসুর মাহমুদ খান ড.কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করায় বিএনপি নেতাদের ধন্যবাদ দেন।

বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বিঘ্নে আমাদের সমাবেশ করতে দেবে, এটা মনে করি না। এরপরও আমাদের কৌশলে যেভাবে পারি সমাবেশ সফল করতে হবে।’

বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীমের সঞ্চালনায় দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, উত্তর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিন, নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করসহ নোয়াখালী, কক্সবাজার, ফেনী, তিন পার্বত্য জেলা থেকে আসা অন্ত:ত ২৫ জন নেতা বক্তব্য রাখেন।

সভা শেষ হওয়ার আধাঘন্টা পর নগরীর জিইসি মোড় থেকে মাহবুবুর রহমান শামীম ও আবুল হাশেম বক্করকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় নগর গোয়েন্দা পুলিশ।

সারাবাংলা/আরডি/এসএমএন

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন