বিজ্ঞাপন

ওই সময়টা ভুলছেন না ‘বড় মনের’ মুমিনুল

February 4, 2018 | 6:57 pm

মোসতাকিম হোসেন, চট্টগ্রাম থেকে

বিজ্ঞাপন

প্রশ্নটা উঠতেই একটু যেন খেই হারিয়ে ফেললেন মুমিনুল হক। বাংলাদেশের হয়ে এই প্রথম এক টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি, একই মালায় এমন দুই ফুল গাঁথার সৌভাগ্য তো তার আগে কারও হয়নি। মুমিনুল হক অবশ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্বিতীয় ইনিংসটাই এগিয়ে রাখছেন বেশি। কিন্তু প্রথম ইনিংসের তুলনায় পরের উদযাপনটা তো অনেক বেশি সংযমী, পরিমিত হলো, সেটার রহস্যটা কী?

মুমিনুল হক এই টেস্টে ক্রিকেট বলকে ফুটবলের মতো দেখছিলেন (অন্তত তার ব্যাটিং বলছিল সে কথাই), এবার যেন তা হয়ে গেল গলফ বলের মতো। শুধু আমতা আমতা করে বললেন, ‘আসলে ওইরকম ভাবে চিন্তা ভাবনা করিনি… সেকেন্ড ইনিংসটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ’

অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ অবশ্য পাশেই ছিলেন। অগ্রজের ভূমিকায় নেমে মুমিনুলকে যেন খেই ধরিয়ে দিচ্ছিলেন, ‘প্রথম ইনিংসে একটু বেশি উত্তেজিত ছিলাম, দ্বিতীয় ইনিংসে সেই তুলনায় শান্ত ছিলাম- এটা বল’। ওদিকে সংবাদ সম্মেলনে মৃদু হাসির গুঞ্জন উঠতে শুরু করেছে। মুমিনুল শেষ পর্যন্ত বলেই ফেললেন, ‘আপনি যে প্রশ্ন করেছেন তার উত্তর আমার কাছে নাই।’

বিজ্ঞাপন

সঙ্গে সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে হাসির তুমুল কোরাস। এই এক কথাতেই যেন অনেক কথা বলে দিলেন মুমিনুল, দ্বিধা-সংশয়ের সব বিষবাষ্প যেন ফুৎকার উড়ে গেল অনেকটুকুই। যার প্রমাণ আগেই দিয়েছেন ব্যাটে, শুধু প্রথম ইনিংসের ওই উদযাপনটা হয়ে রইল ছাইচাপা আগুনের মতো।

প্রশ্নটা ঘুরেফিরে এলো এরপরও। জোড়া সেঞ্চুরিতে যেভাবে আলো ছড়ালেন, তা কি বিশেষ কারও প্রতি কোনো জবাব? এমন চিন্তা করেই কি মাঠে নেমেছিলেন? মুমিনুল সেটা পাত্তাই দিলেন না, ‘ওইরকম কোনো চিন্তা ভাবনা ছিল না। কোনো প্লেয়ারের পক্ষেই এরকম চিন্তা ভাবনা করা সম্ভব না যে টার্গেট করে এটা-ওটা করব।‘

অথচ তাকে নিয়ে ‘অভিযোগ’ তো কম ছিল না। শর্ট বল খেলতে পারেন না, চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বাংলাদেশে কোচ হয়ে আসার পরেই যেন ধুয়া উঠল। গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আবারও বাদ পড়লেন। কারণ? অফ স্পিন খেলতে পারেন না। হাথুরু চলে গেছেন, শ্রীলঙ্কার কোচ হয়ে আজ ম্যাচের শেষে মুমিনুলের সঙ্গে হাতও মিলিয়েছেন। তাকে এভাবে তাঁতিয়ে দেওয়ার জন্য মুমিনুল কি ধন্যবাদ দিয়েছেন কোনো?

বিজ্ঞাপন

চাইলে তো দিতেই পারেন। ক্যারিয়ারে যে কটা সেঞ্চুরি, তার মধ্যে মাত্র একটি হাথুরুসিংহে কোচ হয়ে আসার পর। এক সময় গড় ছিল ৭৫, হাথুরুর সময়ে নেমে এসেছে ত্রিশের নিচে। এসব তো নিরেট পরিসংখ্যানই, যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে ওই সময়টা অনেক ঝড় ঝাপটার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। হাথুরু চলে গেছেন, জোড়া সেঞ্চুরিতে কি মুমিনুলের দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরু?

মুমিনুলের ভেতর যে একটা জেদ ছিল, এবার তার একটু দেখা পাওয়া গেল, ‘আপনারা কীভাবে ভাবেন জানি না তবে আমার কাছে মনে হয় এটা আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমার মানসিকতার একটা বদল এসেছে, পরিশ্রমটা আরও বাড়ছে।’

সেই শুরুটাও হলো পয়া চট্টগ্রামেই, নিজের ছয়টি সেঞ্চুরির পাঁচটি এসেছে যেখানে। এই ব্যাপারটা অবশ্য মুমিনুলের কাছে আলাদা কোনো গুরুত্ব পাচ্ছে না। বরং মনে করিয়ে দিলেন, গত দুই টেস্টেও এখানে খুব একটা রান পাননি। সব সংস্কার একপাশে রেখে, নিজেকে নিয়ে শুধুই ভেবেছেন সেটাও তো জানান দিলেন!

এমন একটা দিনের পর ড্রেসিংরুমে সিনিয়ররা নিশ্চয় পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন তাকে, সতীর্থেরা বেঁধেছেন আলিঙ্গনে। তবে আজকের দিনের সবচেয়ে বড় উপহারটা পেলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর কাছ থেকেই। পাশ থেকে যেটি বিব্রত হাসিতে শুনছিলেন মুমিনুল।

বিজ্ঞাপন

‘মুমিনুল মানুষ ছোট, কিন্তু কাজ বড় করে। একট কথা বলব, ওর হৃদয় অনেক বড়। সে অনেক বড় মনের এবং এজন্যই সে আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশের জন্য ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে। দোয়া করি সামনে মুমিনুল আরো ভালো করবে।’

বাংলাদেশের হয়ে প্রথম জোড়া সেঞ্চুরি, এক টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান, ম্যাচসেরার পুরস্কার… এমন একটা ‘সার্টিফিকেটের’ পর এসব তো তুচ্ছই!

সারাবাংলা/এএম/এমআরপি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন