বিজ্ঞাপন

কর্মসূচি চেয়ে নেতাদের বক্তব্য থামিয়ে দিলেন বিএনপি কর্মীরা

February 20, 2019 | 8:20 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে চলছিল বিএনপির আলোচনা সভা। সেখানে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লা আল নোমানসহ শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দিচ্ছিলেন।

কিন্তু দর্শক সারিতে থাকা কর্মী সমর্থকরা বিএনপি নেতাদের বক্তৃতা শুনতে আর রাজি নয়। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে তারা চায় রাজপথের কর্মসূচি।

অনুষ্ঠানের শেষপর্যায়ে এসে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যখন বলছিনে, ‘শহিদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। ক্ষোভের সঙ্গে আমাদেরকে বলতে হয়,  জাতির জন্য সব চেয়ে কলঙ্কময় অধ্যায় আজ সৃষ্টি হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের মাতা, গণতন্ত্রের জন্য যিনি দীর্ঘকাল সংগ্রাম করেছেন, যিনি গণতন্ত্রের জন্য সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছেন, সেই মহান নেতা আজ কারাগারে। তিনি এখন অত্যন্ত অসুস্থ। তিনি এক বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন। তাকে নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছে, যেটা মানবাধিকারের বিরুদ্ধে। আজকে তাই স্পষ্ট করে বলতে চাই, খালেদা জিয়াকে নির্জন কারাগারে রাখার অপরাধে একদিন তাদের বিচার হবে।’

মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের এ পর্যায়ে দর্শক সারি থেকে কয়েকজন চিৎকার শুরু করেন, ‘বক্তৃতা নয়, কর্মসূচি চাই, কর্মসূচি দিন। বিএনপি নেই, বিএনপি শেষ। বিএনপিকে বাঁচাতে হলে রাজপথে কর্মসূচি দিন।’

এ সময় বিএনপির মহাসচিব কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘কর্মসূচি হবে, ধৈর্য ধরুন। কর্মসূচি চাইলেই তো হবে না, পালন করতে হবে। সব কিছুই হবে,  ধৈর্য ধরতে হবে। হলের মধ্যে চিৎকার করলে হবে না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আপনাদের যে ক্ষোভ, যে ব্যথা, সেটা আমরা বুঝি। কিন্তু একটা কথা আপনাদের মনে রাখতে হবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক শক্তি যখন লড়াই করে, তখন এত সহজে সফলতা পাওয়া যায় না।’

‘আপনারা বারবার কেন ভাবছেন যে, ব্যর্থ হয়েছেন? আপনারা মোটেই ব্যর্থ হননি, আপনারা বিজয়ী হয়েছেন। আপনারা জনগণের সামনে, বিশ্ববাসীর সামনে প্রমাণ করে দিয়েছেন, আওয়ামী একটা ফ্যাসিবাদ শক্তি। এরা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু বিশ্বাস করে না। এরা কোনোদিন গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনি।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই বক্তব্যের মধ্যেও কয়েকজন কর্মী চিৎকার করতে থাকেন— ‘আমরা বক্তব্য শুনতে চাই না। কর্মসূচি দিন। মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই।’

এ পর্যায়ে উত্তেজিত কর্মীদের থামিয়ে দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ভুলে গেলে চলবে না, তারা ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন বাকশাল কায়েম করেছিল। গত ১০ বছর ধরে তারা একের পর এক নির্যাতন চালাচ্ছে, নিপীড়ন চালাচ্ছে, বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা করছে। তারা গণতান্ত্রিক শক্তি নয়। তারা একটি ফ্যাসিবাদী শক্তি। এই ফ্যিাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সংগঠনকে শক্তিশাল করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘যে লড়াই আমরা দীর্ঘকাল ধরে করছি, সে লড়াই সামনে দিকে নিয়ে যেতে হবে। এ জন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করেই এগিয়ে যেতে হবে। একুশের চেতনাকে ধারণ করে, ত্যাগ স্বীকারে মানসিকতা নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’

সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত তৈরি হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন বিশ্ব জনমত তৈরি হচ্ছে এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে। তার আগে আমাদেরকে তৈরি হতে হবে।’

এর আগে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বক্তব্য’র সময়ও বিএনপির কর্মী সমর্থকরা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন। কয়েকজন চিল্লাতে থাকেন, ‘হল খালি কেন? আমরা আর বক্তব্য শুনতে চাই না, কর্মসুচি চাই। কর্মসূচি দিন।’

এ সময় ব্যারিস্টর মওদুদ আহমদ বলেন, ‘বেগম জিয়ার কথাটা শুনতে চান না। আমি তো তার কথাই বলছি। উনি খুব অসুস্থ— এই কথাই বলতে চাচ্ছিলাম। আমাদের প্রাণের দাবি, সকলেরই দাবি, আমরা তার মুক্তি চাই। কিন্তু তার মুক্তি আইনি প্রক্রিয়ায় সম্ভবপর হবে বলে আমি মনে করি না। একমাত্র আন্দোলন ছাড়া বেগম জিয়ার মুক্তি সম্ভব না। সেই জন্য সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। যাতে এবার আমরা পরাজিত না হই।’

সারাবাংলা/এজেড/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন