বিজ্ঞাপন

কর না বাড়িয়ে, করদাতা ও আওতা বাড়াবে এবারের বাজেট

May 20, 2018 | 11:00 am

।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: কর ব্যবস্থা আরও সহজ করে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে করের আওতা বাড়াতে চায় সরকার । করের হার না বাড়িয়ে করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর ওপরও জোর দেওয়া হবে আসন্ন এই বাজেটে।

দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানাচ্ছে, নিয়মিত করদাতাদের ওপর করের বোঝা না বাড়িয়ে নতুন নতুন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে সরকার।

এ ছাড়াও কর ফাঁকি রোধে ও করের আওতা বাড়াতে দোকানে দোকানে ইলেক্ট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার (ইসিআর) মেশিন বসানোর নির্দেশনা থাকবে এবারের বাজেটে।

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে কর ব্যবস্থা সহজিকরণ ও করদাতা বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেই জানাচ্ছেন বাজেট সংশ্লিষ্টরা।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্যেও মিলছে এর প্রমাণ। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আগামী বাজেটে কর ব্যবস্থা আরও সহজ করার পাশাপাশি করের আওতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।’

এ সময় অর্থমন্ত্রী আরও বলেন,  ‘গত ৫ বছরে আমাদের রাজস্ব আয় বাড়লেও যে হারে বাড়ার কথা ছিল, সেভাবে বাড়েনি। বর্তমানে আয়কর দেওয়ার সামর্থ রয়েছে এমন সবাইকে করের আওতায় আনা গেলে রাজস্ব আদায় অনেক বেড়ে যাবে।’

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা ৩২ লাখের কাছাকাছি। যা মোট জনসংখ্যার দুই শতাংশ। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে দেশে আয়কর দেওয়ার যোগ্য মানুষের সংখ্যা রয়েছে ১ কোটির বেশি। এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে করের আওতায় নিয়ে আসা হলে নিয়মিত করদাতাদের ওপর বাড়তি চাপ কমবে। ফলে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকেও আগামী বাজেটে করের আওতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

কর ব্যবস্থা সহজ ও আওতাবৃদ্ধি

কর্পোরেট কর: আগামী তিন অর্থবছরে পর্যায়ক্রমে সকল স্তরের কর্পোরেট  কর ১০ শতাংশ কমানোর জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যেখানে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ শতাংশ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ শতাংশ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ শতাংশ কর কমাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও বাজেটে কর্পোরেট লভ্যাংশ আয়ের ওপর ২০ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ কর নির্ধারণের দাবি জানানো হয়েছে।

আগামী বাজেটে এই বিষয়ে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

ব্যক্তি শ্রেণির আয়কর: বর্তমানে ব্যক্তি শ্রেণির আয়কর সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অর্থ্যাৎ কোনো ব্যক্তি বছরে এই পরিমাণ অর্থ আয় করলে তাকে কোনো আয়কর দিতে হয় না। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এটাকে ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও বিদ্যমান কর ব্যবস্থায় নারী করদাতারা এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সের করমুক্ত আয়কর সীমা ৩ লাখ টাকা, প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়কর সীমা চার লাখ টাকা এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের করমুক্ত আয়কর সীমা চার লাখ ২৫ হাজার টাকা। এইক্ষেত্রে করমুক্ত আয়করসীমা উল্লেখিত তিনটি ধাপ বাড়িয়ে যথাক্রমে চার লাখ, চার লাখ ৫০ হাজার এবং চার লাখ ৭৫ হাজার টাকা করার কথা বলা হয়েছে।

এটিও বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী ও এনবিআর চেয়ারম্যান।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের কর অব্যাহতি: বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী বিদেশে অবস্থানরত সব শ্রেণির দক্ষ পেশাজীবীর দেশে ফিরে আসার আগ্রহ সৃষ্টি করতে ৫ বছর আয় করমুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই প্রণোদনা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ থেকে বছরে ২ থেকে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে রাখা সম্ভব হবে।

ব্যবসায়ীদের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

স্মার্ট ট্যাক্স কার্ড ও ট্যাক্স হেল্পলাইন: করদাতাদের কর প্রদানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ট্যাক্স কার্ডকে ছয়টি ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ডিসিসিআই থেকে। সেগুলো হচ্ছে, গ্রিনকার্ড, গ্রিন প্লাস কার্ড, সিলভার কার্ড, গোল্ড কার্ড, গোল্ড প্লাস কার্ড ও প্লাটিনাম কার্ড। এসব কার্ড প্রাপ্তদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিশেষ সেবা যেমন বিমান, বাস ও ট্রেনের টিকেট, স্বাস্থ্য সেবা, ব্যাংকিং সেবা ও বিভিন্ন সরকারি সেবার সুযোগ দেওয়া।

করদাতাদের সেবায় হেল্পলাইন: স্মার্ট ট্যাক্স কার্ড প্রাপ্তদের ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট, রির্টান ও রিফান্ড সর্ম্পকিত সমস্যা সমাধান এবং বিশেষ সেবা প্রদানে ট্যাক্স হেল্পলাইন চালুর কথা বলা হয়েছে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুরও এসব প্রস্তাবের পক্ষে তার মত দিয়েছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত সাত বছর ধরে বাংলাদেশে ট্যাক্স জিডিপির রেশিও’র তুলনায় একটু বাড়েনি। অথচ একই সময়ে ভারতে ট্যাক্স জিডিপির রেশিও রেড়েছে ৪০ শতাংশ। বর্তমানে আমরা ট্যাক্স আহরণে পিছিয়ে পড়েছি। তাই এদিকে মনোযোগ বাড়ানো দরকার।’

আগামী ৭ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হবে। এটি হচ্ছে বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট।

সারাবাংলা/জিএস/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন