বিজ্ঞাপন

কলিং ০৯৬১১০০০৯৯৯

January 19, 2018 | 1:19 pm

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: জুরাইনের রিকশাচালক আবুল হোসেনের দেড় বছর বয়সী ছেলে খৈয়াম। গত ৭ জানুয়ারি  রাত সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ করেই খৈয়ামের যেমন জ্বর তেমনি ডায়রিয়া শুরু হয়। তখন পাশের এক কলেজ পড়ুয়া ছেলে ফোন করেন ০৯৬১১০০০৯৯৯ নাম্বারে। ওই নাম্বার থেকে তখনি খৈয়ামের জন্য ওষুধের নাম বলা হয় এবং স্যালাইন খাওয়ানোর জন্য বলা হয়। সেদিন ভোর থেকেই কিছুটা কমতে থাকে জ্বর এবং ডায়রিয়া। পরের দিন কয়েকজন মানুষ গিয়ে হাজির হয় তাদের বাসায় এবং খৈয়ামের জন্য ওষুধ লিখে দেন।

সেদিনের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে আবুল হোসেন বলেন, ‘ও তো রাতে ওইটুকুন পোলারে নিয়া কী করমু, কই যামু কিছুই বুঝতে পারতেছিলাম না। সে সময় পাশের বাসার মোকাররম ওই নাম্বারে ফোন দেয়। সেখান থেকে সবকিছু শুনে ছেলেকে ওষুধ খাওয়াই, স্যালাইন খাওয়াতে থাকি। সেদিন যদি ফোনে সাহায্য না পাইতাম তাহলে ওই শীতের রাইতে ছেলেরে নিয়া কী করতাম জানি না। আর ফোন করলে যে ডাক্তার বাড়িতে হাজির হয়- এমন ঘটনা তো এখন খুব কমই ঘটে।’

ধলপুরের সুফিয়া বেগমের অভিজ্ঞতাও একই। পেটের ব্যথায় অসুস্থ সুফিয়ার নাতি মোফাজ্জল  ০৯৬১১০০০৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে দাদির জন্য ওষুধের নাম জেনে নেন। আর তাতেই সুস্থ হন সুফিয়া বেগম। কেবল দেড় বছরের খৈয়াম আর ৬২ বছরের সুফিয়াই নন, ০৯৬১১০০০৯৯৯ নাম্বারে কল করে স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছেন অসংখ্য মানুষ।

বিজ্ঞাপন

০৯৬১১০০০৯৯৯ একটি নাম্বার। আর এই নাম্বারে ফোন করে চিকিৎসা নিচ্ছেন বিনামূল্যে রাজধানী ঢাকার প্রান্তিক, অসহায়, বস্তিবাসী ও আর্থিক দিক দিয়ে মধ্যবিত্তের মানুষেরা। বাংলাদেশে এই ঘটনা বিরল। তাই তো রাজধানীবাসীর কাছে দারুণভাবে সাড়া ফেলেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ‘মেয়র মোহাম্মদ হানিফ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম’।

এই স্বাস্থ্যসেবার আওতায় ইতোমধ্যেই ২০ হাজার মানুষের বাড়িতে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়েছে। ০৯৬১১০০০৯৯৯  নাম্বারে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০০ ফোনকল আসছে চিকিৎসাসেবা চেয়ে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোশনের মেয়র সাঈদ খোকনের নির্দেশে গত ২৮ নভেম্বর শুরু হওয়া এই স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শেষ হয় ১২ ডিসেম্বর। তবে এরপর তা বাড়ানো হয় ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।  কিন্তু মানুষের চাহিদার কারণে সেই কার্যক্রমের মেয়াদ   বাড়িয়ে চলতি মাসের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত করা হয়।

বিজ্ঞাপন

ডিএসসিসি থেকে এবারও বলা হচ্ছে, যদি মানুষ এই সেবার মেয়াদ চেয়ে আবারও আবেদন করে তাহলে তাদের চাওয়াকে সম্মান করা হবে, মেয়াদ বৃদ্ধি করা হবে।

ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত ২০ হাজার মানুষের বাড়িতে গিয়ে তাদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। আর আমাদের সেন্টারে ফোনকল এসেছে ৬০ হাজারের মতো। ১০৫ জন কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার এই চিকিৎসাসেবার দায়িত্বে রয়েছেন। ১৩ রকমের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে এখান থেকে। সাধারণত জ্বর, সর্দি, ঠাণ্ডা, কাশি, ডায়রিয়ার মতো অসুখগুলোতে এখান থেকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। ২৫১ জন মানুষকে ফোনেই সেবা দেওয়া হয়েছে। আর এই কার্যক্রমের প্রথম পর্যায়ে ২৮ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২৭ হাজার ৮৮৪টি ফোনকল এসেছে সেবা চেয়ে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৩ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফোনকল আসে ১৩ হাজার ৩৮৬টি।’

তবে এখানে কিছু ফলস টেলিফোন কলও আসে জানিয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় জানান, ৬২টি কল এসেছিল স্বাস্থ্যসেবার কথা বলে। কিন্ত ‍তাদেরকে পরবর্তীকালে আমরা ফোন করে পাইনি। তারা হয়তো দেখতে চেয়েছিল সত্যি এখান থেকে সেবা দেওয়া হচ্ছে কিনা। আর উত্তর সিটি করপোরেশন থেকেও আমাদের এখানে ফোন আসে, কিন্তু সে ক্ষেত্রে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কিছু করার থাকে না।

জানা যায়, জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, মীর হাজীরবাগ, মুরাদপুর, ধলপুর এলাকা, কামরাঙ্গীরচর এলাকাগুলো থেকে রোগীদের ফোন বেশি আসছে। একইসঙ্গে আসছে বস্তি এলাকা থেকেও।

বিজ্ঞাপন

উত্তম কুমার রায় বলেন, বাংলাদেশে এমন ঘটনা খুবই ব্যতিক্রম। সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে এমন আয়োজন এই উদ্যোগ। আর দিনকে দিন এই স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা বাড়ছে। দুইবার আমাদেরকে সময় বাড়াতে হয়েছে মানুষের চাহিদার কারণে। এবারও যদি মানুষ আবেদন করে তাহলে আমরা সেটি ভেবে দেখব।

এ কার্যক্রমের বিষয়ে  ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বসবাসকারীদের মোবাইলে এসএমএস দেওয়া হয়েছে, ‘মেয়র মোহাম্মদ হানিফ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম উপলক্ষে বাড়িতে বসে বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা (শীতকালীন ঠান্ডা, জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়ারিয়া ইত্যাদি) ও ঔষধ পেতে কল করুন ০৯৬১১০০০৯৯৯, মেয়র, ঢাকা দক্ষিণ।’

সারাবাংলা/জেএ/আইজেকে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন