বিজ্ঞাপন

কেউ রইলো না নাসিমার

February 23, 2019 | 5:50 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: স্বামী ও এক ছেলে নিয়ে সুখের সংসার ছিল নাসিমা আক্তারের। দুইদিন পর স্বামী-সন্তান নিয়ে ভারতে যাবার কথা ছিল। এজন্য আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে দোয়া নিতে গিয়েছিলেন নাসিমার স্বামী ও ছেলে। ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় দুজনই মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছেন। আর নাসিমা হারিয়েছেন সবই।

শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানার ধনিয়ালাপাড়া জামে মসজিদের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- মো. ছগির (৪০) ও ছেলে মো. জোনায়েদ (১০)।

ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহির হোসেন সারাবাংলাকে জানান, ‘ছগির ও জোনায়েদ ছিলেন মোটর সাইকেলে। দুর্ঘটনা কীভাবে ঘটেছে, সেটা কেউ দেখেননি। তাদের লাশ রাস্তায় দেখে থানায় খবর দেয় স্থানীয়রা। তাদের ধারণা, ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় মোটর সাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মোটর সাইকেলটিও দুমড়ে-মুচড়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

দুর্ঘটনার পর থেকে ছগিরের বাড়ি নগরীর মনসুরাবাদ এলাকার খান সাহেব আব্দুল হাকিম সড়কে মালেক কোম্পানির বাড়িতে শোকার্ত মানুষের ভিড় লেগেছে।

শনিবার দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ছগিরের বাসার সামনের কক্ষে বসে বিলাপ করছেন তার স্ত্রী নাসিমা। মাঝে মাঝে মূর্ছা যাচ্ছেন। তখন আবার চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরানো হচ্ছে। ঘরজুড়ে অসংখ্য নারীপুরুষ, শিশু। কেউ কাঁদছেন। কেউ চোখের কোণে পানি মুছছেন। বাবা-ছেলের আকস্মিক মৃত্যুতে মুষড়ে পড়েছেন স্বজনরা।

ছগিরের ছেলে জোনায়েদ স্থানীয় গণপূর্ত বিদ্যানিকেতনের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। জোনায়েদের মৃত্যুর খবর শুনে তার সহপাঠী শিশুরাও ভিড় জমিয়েছেন ওই বাড়ির সামনে।

বিজ্ঞাপন

ছগিরের বড় ভাই মো. ইলিয়াস সারাবাংলাকে জানান, মনসুরাবাদ বাজারে ‘বিসমিল্লাহ স্টোর’ নামে ছগিরের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর আছে। খুবই চালু দোকান। সেই দোকানের আয়ে ভালোই চলতো ছগিরের সংসার।

রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ছগিরের স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে ভারতে যাবার কথা ছিল। আজমির শরীফ দর্শন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করানোর কথা ছিল। এজন্য আত্মীয়স্বজনের দোয়া নিতে গিয়েছিলেন ছগির ও তার ছেলে। প্রথমে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম এলাকায় পাড়ার ভাতিজা সম্পর্কের একজনের বিয়েতে যান। সেখান থেকে যান নগরীর মতিয়ারপুল এলাকায় ফুপাশ্বশুরের বাড়িতে দোয়া নিতে। সেখান থেকে বেরিয়ে পোস্তারপাড় এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে যাবার কথা ছিল। তার আগেই বাবা-ছেলে লাশ হয়ে পড়ে থাকে সড়কে।

কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ছগিরের ফুপাশ্বশুর রায়হান উল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুর্ঘটনায় চেহারা এমন বিকৃত হয়ে গেছে যে, আমার মেয়েটা (নাসিমা) স্বামী-সন্তানের চেহারাও দেখতে পারেনি। ঘটনার পর থেকে সে বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। বারবার বলছে- আমাকে আমার স্বামী ও ছেলের পা-গুলো হলেও দেখতে দাও। আমার মেয়েটা কিভাবে বাঁচবে ? ও-তো সব হারিয়েছে।’

১১ বছর আগে ছগিরের সঙ্গে নাছিমার বিয়ে হয় বলে জানান ভাই ইলিয়াস। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠেসারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চার ভাই। বড় ভাই আগেই মারা গেছে। ছোট ভাইও চলে গেল। আমাদের যৌথ পরিবার। ১১ বছর আগে ভাই ছগিরকে বিয়ে করিয়েছিলাম। আল্লাহ আমাদের কপালে এমন দুঃখ কেন দিল? আমার ভাইয়ের বৌ-টা কী নিয়ে বাঁচবে?’

বিজ্ঞাপন

ছগির ও জোনায়েদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে বাড়ির সামনে আঙ্গিনায় রাখা হয়েছে। সন্ধ্যার পর দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন ইলিয়াস।

অন্যদিকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহির হোসেন।

সারাবাংলা/আরডি/এমআই

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন