বিজ্ঞাপন

কেমন হবে ফেব্রুয়ারির সাজ?

February 10, 2019 | 2:39 pm

।। রাজনীন ফারজানা ।।

বিজ্ঞাপন

 

ফেব্রুয়ারি, যে মাসে ফাগুন এসে দূর করে মাঘের শীতের শুষ্কতা। হেমন্তে নবান্ন দিয়ে বাংলায় যে শীতকালীন উৎসব শুরু হয়, তা শীত পেরিয়ে বসন্তে এসে যেন আরও বেগবান হয়। বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি মাসের আবেদনই যেন অনন্য। ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় জীবনের অন্যতম শোকের দিন হলেও এই মাসেই রয়েছে উদযাপনের নানা রঙিন উপলক্ষ্য।

ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখ কোকিলের কূজন ফাগুন ডেকে আনে। আবার পহেলা ফাল্গুনের রেশ কাটতে না কাটতেই ১৪ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভালোবাসা দিবস। এসব দিবস ছাড়াও পুরো মাস জুড়ে বইমেলা তো আছেই যা উৎসবমুখর বাঙালিকে মাতিয়ে রাখে পুরো মাস।

বিজ্ঞাপন

এই উৎসবের মাসের নানা দিবস আমরা একেক জন একেকজনের মত করে পালন করি। তবে অনেকেই ভুলে যাই কোন দিবসে ঠিক কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করা উচিৎ। একেক দিবসের একেক অনুভব, তাই আমাদের সাজগোজেও তার প্রতিফলন পড়া উচিৎ।

রঙে রঙিন বসন্তের প্রথম দিন আমরা অনেকেই বাসন্তি শাড়িতে বা অন্য পোশাকে নিজেকে সাজাই। অনেকে বেছে নেন লাল, হলুদ বা কমলা রঙের পোশাক। উজ্জ্বল পোশাক আর ফুলের গয়না, প্রকৃতির রঙ যেন এসে ধরা দেয় নগরের উতসবমুখরতায়। এইদিন যেন কোনকিছুই বেমানান লাগে না। তাঁতের শাড়ি পরা তরুণীর খোঁপায় তাজা ফুলের মালায় ভ্রমরও যেন পথ ভুলে যায় এদিন।

বিজ্ঞাপন

আজকাল বাবা-মা এবং সন্তানের জন্য একই রকম পোশাক বানায় অনেক ফ্যাশন হাউজ। পরিবারের সবাই একরকম পোশাকে সাজলে দারুণ আকর্ষণীয় লাগে।

ভালোবাসা দিবসের স্নিগ্ধ সাজে অভীক দেব ও তমালিকা দেব দম্পতি

রঙিন সাজগোজের ক্ষেত্রে একটা বিষয় মাথায় রাখা দরকার আর তা হল ওভারডুইং এড়িয়ে চলা। যেমন কেউ যদি ভারি কারুকাজের বা প্রিন্টের শাড়ি পরেন, ব্লাউজ পরুন সাদাসিধে। এদিন তাঁতের শাড়ি, চটি, কাপড় বা পাটের ব্যাগ আর দেশীয় বা ঐতিহ্যবাহী গয়নায় দারুণ মানিয়ে যায় ফাল্গুনের উৎসবমুখরতা।

তবে কারও যদি সারাদিনের জন্য বাইরে থাকার পরিকল্পনা থাকে, তবে পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে বের হওয়াই ভালো। মাঘ শেষ হলেও তখনও বাতাসে হালকা শীতের রেশ রয়ে যায়। তাই সন্ধ্যার পর পরার জন্য পাতলা শীতের কাপড় নিয়ে বের হতে হবে। আজকাল ফ্যাশন হাউজগুলোতে বসন্তের উপযোগী পোশাকের পাশাপাশি নানারকম রঙিন পাতলা শীতের শালও পাওয়া যায়।

ভালোবাসা দিবসের সাজ

ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে লাল পোশাক পরা জরুরি নয়

সাজের ক্ষেত্রে দিনের বেলা মেকআপের আগে সানব্লক লাগাতে ভুলবেন না। মনে রাখা ভালো, ফাল্গুনের মৃদু বাতাস মনোরম লাগলেও রোদের তাপ কিন্তু ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।

বিজ্ঞাপন

পহেলা ফাল্গুনের এই উৎসব মুখরতা শেষ হতে না হতেই পরদিন আসে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এইদিনের সাজেও থেকে যায় ফাল্গুনের রেশ। পশ্চিমা বিশ্বের অনুকরণে এইদিন মূলত লালেই সেজে উঠি আমরা। ফ্যাশন হাউজগুলোতে থাকে বিশেষ সংগ্রহ আর উপহারের দোকানগুলোতে নানা সামগ্রী। খাবারের দোকানগুলোতেও থাকে আলাদা আয়োজন। প্রিয় মানুষ বা বন্ধুবান্ধবের পাশাপাশি পরিবারের সাথেও অনেকে উদযাপন করে থাকেন ভালোবাসা দিবস।

ভালোবাসা দিবসের সাজ

লাল শাড়িতে মডেল তিশা

পহেলা ফাল্গুন বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উৎসবের হলেও একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জন্য উৎসবের উপলক্ষ নয়। অনেকেই দেখা যায় পহেলা ফাল্গুনে বা আন্তর্জাতিক ভালোবাসা দিবসে যেভাবে সাজেন, একই ধরণের রঙিন সাজে ঘোরেন একুশে ফেব্রুয়ারিতেও। অথচ একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনের শোকের দিন। তাই সেদিনের সাজপোশাকে সংযম থাকাটা জরুরি।

তবে ইদানীং অনেকেই সেটা ভুলতে বসেছে। ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে শহীদ মিনারে যেতে অনেকেই এদিন দেশিয় পোশাক বেছে নেন। বাধ্যতামূলক নয় আপনাকে সাদা কালোই পরতে হবে। চাইলে দেশিয় যেকোন শাড়ি বা পাঞ্জাবিই বেছে নেওয়া যায়। কোনভাবেই যেন উৎসব উপলক্ষে সাজগোজ ব্যাপারটা ফুটে না ওঠে সেটা আমাদের মাথায় রাখা দরকার।

একুশে ফেব্রুয়ারিতে মা-মেয়ে

সাদা-কালো পোশাকে মা তুলি সঙ্গীতা আর মেয়ে সানেমি শ্রেষ্ঠা

শহীদ মিনারে খালি পায়ে ওঠা হয় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। সেটা মাথায় রেখেই আমাদের জুতো বা স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে বের হতে হবে এইদিন। অনেকে মাইকে উচ্চ শব্দে ভিনদেশী গান বাজিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন করেন। এতে শহীদদের স্মৃতির প্রতি অবমাননা করা হয়।

ফেব্রুয়ারি মাসের এই বিশেষ তিনটি দিবস ছাড়াও পুরো মাস জুড়ে চলে বইমেলা যা আমাদের উৎসবের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় অনেক গুণ। তাছাড়া যেকোন উপলক্ষেই হোক এই মাসে রাজধানী ঢাকার সব ভিড় যেয়ে মিলে যায় বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দির একুশে বইমেলা প্রাঙ্গনে।

বইমেলায় মেয়েরা

বইমেলায় বই দেখছেন একদল ক্রেতা

কিন্তু উৎসব অনেকসময় যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায় অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে। যারা বই কিনতে মেলায় যান তারা অনেকসময় প্রিয় বইটি না নিয়েই বেরিয়ে আসেন। নিজেরা সচেতন ও শৃঙ্খল হলেই এড়ানো যায় এমন অবস্থা।

মেলা উপলক্ষে অনেকেই সাজগোজ করেন। তবে সেক্ষেত্রেও আমাদের সচেতন হওয়া দরকার। অযথা ভারি সাজে না সেজে তুলনামূলক আরামদায়ক সাজপোশাকই মানানসই। মেলায় যেহেতু ইট বসিয়ে সাময়িক চলার পথ বানানো হয় আর মেলার ভেতরে বালি দিয়ে সমান করা হয় তাই মেলায় আসলে আরামদায়ক জুতো বা স্যান্ডেল পড়ে আসাই শ্রেয়। সবচাইতে ভালো হয় স্নিকার্স বা কেডস পরলে। এতে দীর্ঘক্ষণ হেঁটে হেঁটে স্টল ঘুরে ঘুরে বই কেনা সহজ হয়ে যায়।

উৎসবের মাস ফেব্রুয়ারি। উৎসবের বিষয়টা মাথায় থাকলেও আমরা ভুলে যাই চারপাশের পরিবেশের কথা। এই মাসের নানা উপলক্ষে বাইরে বেরিয়ে আমরা চারপাশে পানির বোতল, খাবারের প্যাকেট, বাদামের খোসা, প্লাস্টিকের গ্লাস, ডাবের খোসা ইত্যাদি ফেলে নোংরা করে ফেলি। নিজ দায়িত্বে এগুলো ডাস্টবিনে ফেলা উচিৎ যাতে পরিবেশ দূষণ না হয়।

 

ছবি- সারাবাংলা

 

সারাবাংলা/আরএফ /এসএস 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন