বিজ্ঞাপন

কোটা সংস্কার আন্দোলন: তারিকুল রিমান্ডে

July 17, 2018 | 5:00 pm

।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: কোটা আন্দোলনের সময় পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তারিকুল ইসলাম তারেক (২২) নামে এক শিক্ষার্থীর একদিনের রিমান্ড আদেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) দুপুরে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম কায়সারুল ইসলাম এ রিমান্ডের আদেশ দেন।

এর আগে, গত ১০ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা, গাড়ি পোড়ানোসহ নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলার আসামি চার শিক্ষার্থীর রিমান্ড শুনানির দিক ঠিক করা ছিল। তবে সেদিন পরীক্ষা থাকায় তারিকুল ইসলাম আদালতের অনুমতি নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেন এবং রিমান্ড শুনানি পেছানোর আবেদন করেন। তার আবেদন মঞ্জুর করে আদালত ওই দিন বাকি তিন জনের রিমান্ড শুনানি নেন এবং তারিকুলের রিমান্ড শুনানির জন্য আজকের (মঙ্গলবার) দিন ঠিক করে দেন।

বিজ্ঞাপন

দুই মামলার আসামি চার শিক্ষার্থীর মধ্যে এক মামলায় ফারুক ও তারিকুলের সাত দিন এবং আরেক মামলায় জসিম ও মশিউরের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক বাহাউদ্দিন। তারেক বাদে তিন জনের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পরে রিমান্ড শেষে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আজ তারিকুলের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলেন আদালত।

গত ৩ জুলাই ফারুকসহ তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই দিনই আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরদিন তাদের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

গত ৮ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীরা রাস্তা বন্ধ করে টায়ার ও আসবাবপত্র জ্বালানোসহ নাশকতা এবং পুলিশকে মারধর ও কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করা হয় দায়ের করা মামলায়। ওই ঘটনায় শাহবাগ থানায় মোট তিনটি মামলা করে পুলিশ। আর ভিসির বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র সিকিউরিটি অফিসার এস এম কামরুল আহসান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, গত ৮ এপ্রিল কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা শাহবাগে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিলে পুলিশ একপর্যায়ে তাদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ শুরু করে এবং তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

ওই রাতেই আন্দোলন চলাকালে ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর এবং বাসার সামনে রাখা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। কাছাকাছি সময়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক ঢাবি ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলেন। পরদিন সকালেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনায় বসবেন- এমন আশ্বাস দেন তিনি।

পরদিন ওবায়দুল কাদেরের সাথে আন্দোলনকারীদের বৈঠকে কোটা সংস্কার নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ৭ মে পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়। তবে আন্দোলনকারীরা দ্রুত কোটা সংস্কারে সমাধান চেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। পরে ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন

প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা স্বাগত জানিয়ে এ বিষয়ে অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারির আহ্বান জানান। প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় তারা ফের আন্দোলনের ঘোষণা দেন।

বিজ্ঞাপন

এর মধ্যে ৭ মে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে জানান, কোটা নিয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। তার এই বক্তব্যের জের ধরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা ৯ মে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হন। ১০ মে’র মধ্যে কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি না হলে ১৩ মে থেকে সারাদেশের সব স্কুল-কলেজে কঠোর আন্দোলন শুরু হবে বলে ঘোষণা দেন তারা। তবে ওই দিনই (৯ মে) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক তিন দিনের মধ্যে কমিটি গঠনের ঘোষণা দিলে আন্দোলনকারীরা অপেক্ষা করতে থাকেন।

এরপর দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও কোটা সংস্কার নিয়ে কোনো সরকারি কমিটি গঠন হয়নি। পরে কোটা সংস্কার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানাতে ৩০ জুন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেয় ছাত্র অধিকার সমন্বয় পরিষদ। তবে সংবাদ সম্মেলনের আগেই আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল্লাহ নূরুসহ সাত শিক্ষার্থী আহত হন।

এর মধ্যে রোববার (১ জুলাই) ছাত্রলীগ নেতার দায়ের করা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেফতার করা হয় কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে। পরে সোমবার (২ জুলাই) পতাকা মিছিল ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করতে গেলেও ছাত্রলীগের বেধড়ক মারধরের শিকার হয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় নারী শিক্ষার্থীদের নিপীড়নের ঘটনাও ঘটে।

এরপরও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের ওপর এ ধরনের হামলার প্রতিবাদে শিক্ষক ও অভিভাবকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবে সমাবেশ আয়োজন করলে তা পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে যায়। এ সময় এক শিক্ষক ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক এক সভাপতিকে আটক করে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঢাবি ক্যাম্পাসেও কর্মসূচি করতে গেলে সেখানে শিক্ষকদের ওপর হামলা ও তাদের লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ আজ এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন, এসব হামলায় দায়ী ছাত্রলীগ

সারাবাংলা/এআই/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন