বিজ্ঞাপন

কোন পথে বাংলাদেশের ফুটবল?

August 18, 2018 | 9:19 pm

।। স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দেখছে বাংলাদেশ। একদিকে দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন হিসেবে নিজেদের জায়গা তৈরি করছে কিশোরিরা। অন্যদিকে রঙ হারিয়ে পুরুষ ফুটবল দল বিলীন হওয়ার পথে। বছরজুড়ে মাঠে নেই দর্শক। ঘরোয়া ফুটবলে নিদারুণ অবস্থা। পাইপলাইনে ফুটবলার সংকট। নেই একটা ফুটবল একডেমি। নানান সমস্যায় জর্জরিত দেশের ফুটবল। অতল গহ্বরে ঐতিহ্য।

বহির্বিশ্ব ফুটবলে নিভু নিভু তারাগুলো যেখানে আলোর মিছিলে যোগ দিয়েছে সেখানে আলো হারিয়ে অন্ধকারে বাতি খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।

কি কারণে এমন ভরাডুবি দেশের ফুটবলে? কি করতে হবে পুরনো ফুটবল জাগরণে?

বিজ্ঞাপন

চোখে আঙ্গুল দিয়ে সেসব কারণ ব্যাখ্যা করেছেন দেশের সাবেক তারকা ফুটবলার, গণমাধ্যমকর্মীসহ ফুটবল সংগঠকরা।

শনিবার (১৮ আগস্ট) বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) ডাচ বাংলা মিলনায়তনে দেশের হারানোর ফুটবল ফিরিয়ে আনার পথ সন্ধানে নিজেরাই নেমেছেন মাঠে। ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম সেন্টার অব বাংলাদেশ’র (আইজেসিবিডি) আয়োজনে ‘কোন পথে বাংলাদেশে ফুটবল’ এ নামে একটি সেমিনার আয়োজিত হয়। বরেণ্য সাংবাদিক ও আইজেসিবিডি’র সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার সঞ্চালনায় এ সেমিনারে ফুটবল শঙ্কা নিরসনে মতামত দেন সাবেক ফুটবলার, প্রবীণ সাংবাদিক ও ফুটবল সংগঠকরা।

বক্তব্যের মাধ্যমে তুলে ধরেন দেশের ফুটবলের দুরাবস্থা-সংকট ও তার উত্তরণের উপায়।

বিজ্ঞাপন

এসময় ‘কোন পথে বাংলাদেশের ফুটবল’ এই নামে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক সনত বাবলা। তিনি তার প্রবন্ধে দেশের ফুটবলের শঙ্কটাবস্থার কারণ হিসেবে যুব ফুটবলের অবমূল্যায়নকে দেখিয়েছেন। তিনি জানান, ‘মেয়েরা দুর্দান্ত খেলছে। এটা সাধুবাদ পাওয়ার দাবিদার। তাদের বছরব্যাপী ট্রেনিংয়ে রাখা হয় কিন্তু যুব-কিশোরদের উন্নয়নে বরাবরই উদাসীন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের। তাই পাইপলাইনে সংকট প্রকট। দেশে ক্লাব বা বাফুফে কারও নেই কোনও ফুটবল একাডেমি। যেও সিলেটে একটা একাডেমি করেছে ফেডারেশন সেটা ঠিকতে পেরেছি মাত্র ৯ মাস। উন্নয়ন আনতে হবে যুব ফুটবলেই।’

বাফুফে পিরামিডের গোড়া ছেড়ে মাথায় পানি দিচ্ছে উল্লেখ করে সাবেক ‍ফুটবলার হাসানুজ্জামান বাবলু বলেন, ‘২০০৩ সালে বাংলাদেশকে সাফে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন জর্জ কোটান। তার কিছুদিন পরেই কোচিং ছেড়ে চলে যান এই কোচ। যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলেন এ দেশে কিছু হবে না। নেই কোনও স্ট্রাকচার, নেই কোন তৃণমূলে কাজ। সবাই জাতীয় দল নিয়ে দৌড়ায়। গাছের গোড়ায় পানি না দিয়ে সবাই মাথায় পানি দিতে চাচ্ছে। সফলতা চাচ্ছে। এভাবে কোন দেশের ফুটবল এগিয়ে যেতে পারে না। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অভাব তো আছেই নেই কোন উদ্যোগও।’

দেশের সর্বোচ্চ ফুটবল অভিভাবক বাফুফের স্বদিচ্ছাসহ সংগঠনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দীন আহমেদের ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দীন আলমগীর, ‘প্রতিবার সভাপতি (কাজী সালাউদ্দীন) নির্বাচনী ইশতিহারে অনেক কিছু করার কথা বললেও পদে যাওয়ার পর সেগুলো করেন না। দেশের ফুটবলের কাজ করেন না। নির্বাচনের সময় লাখ লাখ টাকা ঢালেন কিন্তু পদে এসেই সবকিছু ভুলে যান। তাহলে তাকে দিয়ে দেশের লাভ কি?’

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কোচ মারুফুল হক দেশের ফুটবল উন্নয়নের ছয়টি রূপরেখার উল্লেখ করেন, বিশ্বের যে দেশেই হোক না কেন, ফুটবলের উন্নতি করতে হলে ছয়টি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। ১. পরিকল্পনা/অর্থায়ন ২. অনেকজন যোগ্য কোচের সরবরাহ ৩. তৃণমূল পর্যায়ে উন্নয়ন ৪. দীর্ঘমেয়াদী ফুটবলার উন্নয়ন ৫. ঘরোয়া লিগকে শক্তিশালী করা ৬. টপ ক্লাস প্লেয়ারদের বিদেশে খেলা। এই ছয়টি পূরণ করতে পারলেই কেবল দেশের ফুটবলে জাগরণ হবে। এগুলো নিশ্চিত করতে হবে ক্লাব ও ফুটবল ফেডারেশনকেই করতে হবে।’

সাবেক ফুটবল আশরাফ উদ্দীন আহমেদ চুন্নু ও গোলাম সারোয়ার টিপুর মুখেও আক্ষেপ। তারা বলেন, দেশের ফুটবলের মৃত্যু হয়ে গেছে। ফেডারেশনের কোন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেই। দেশের অচলাবস্থা দূর করতে বড় বিজ্ঞাপন হিসেবে কাজী সালাউদ্দীনকে নির্বাচিত করা হয়েছিল কিন্তু তিনি কিছুই করতে পারেন নি। এখন দরকার নতুন নেতৃত্ব। নতুন নেতৃত্বই পারে বদল আনতে। অন্তত চেষ্টা করে দেখবেন তারা।

একাডেমিও সহ তৃণমূলে কাজ করা ছাড়া কোনও বিকল্প নেই বলে জানান ফুটবল সংগঠক ও সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি তরফদার রুহুল আমিন, ‘পাইপলাইনে কোনও খেলোয়াড় নেই। দর্শক নেই এগুলোর জন্য দায়ী আমরাই। আমাদের নিজস্ব কোনও একাডেমি নেই। একাডেমি করতে হবে। তৃণমূলে প্রচুর কাজ করতে হবে। যোগ্য কোচ তৈরি করে তাদের তৃণমূলে কাজে লাগাতে হবে। শর্টটার্ম-মিডটার্ম ও লং টার্ম পরিকল্পনার দরকার। তাহলেই অন্তত ১০-১৫ বছর পরে সফলতা আসবে।’

দেশের ফুটবল ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে রাতারাতি কিছুই হবে না বলে জানান তারা। এজন্য প্রয়োজন নেত্বত্বের পরিবর্তন। পরিকল্পনার কার্যকরণ। তাহলেই দেশের ফুটবলে সুদিন আসবে বলে মনে করেন তারা। এসময় সাবেক ফুটবলার, ক্রীড়া সংগঠক ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/জেএইচ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন