ক্রাইস্টচার্চের বাংলাদেশিরা ভালো আছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে বসবাসরত আনুমানিক ১৫০ জন বাংলাদেশি এখন ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।

তিনি বলেন, ক্রাইস্টচার্চে প্রায় দেড়শ বাংলাদেশি বসবাস করেন। তাদের সবার সঙ্গে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। বাংলাদেশিরা এখন ওইখানে ভালো আছেন।

সোমবার (১৮ মার্চ) এ এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।

আরও পড়ুন- নিউজিল্যান্ড ভ্রমণে সতর্কতা জারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের

তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তার জন্য নিউজিল্যান্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ রাখছে। হাইকমিশন থেকে সরাসরি ও অকল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারি কনস্যুলারের মাধ্যমে নিউজিল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশিদের শান্ত থাকতে, বাড়ির ভেতরে থাকতে, জনসমাবেশ এড়াতে এবং দেশটির আইনি নির্দেশ মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে ভয়াবহ হামলায় পাঁচ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তিন জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। এ ছাড়া একজন নিখোঁজ রয়েছে।’

ক্রাইস্টচার্চ হামলায় এ পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া নিহত বাংলাদেশিরা হলেন- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আবদুস সামাদ ও সিলেটের ফরিদ আহমেদের স্ত্রী হোসনে আরা আহমেদ, চাঁদপুরের মোজাম্মেল হক, নরসিংদীর পলাশ উপজেলার জাকারিয়া ভূঁইয়া ও নারায়ণগঞ্জের মোহাম্মদ ওমর ফারুক।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ড. সামাদের পরিবার তাকে নিউজিল্যান্ডে কবর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার বড় ছেলে বাংলাদেশ থেকে নিউজিল্যান্ডে যাবেন। আর আহতদের মধ্যে কিশোরগঞ্জের লিপির অবস্থা সংকটাপন্ন। তার আরেকটি অস্ত্রোপচার লাগতে পারে। এর আগে তার দুইটি অস্ত্রপচার করা হয়।

আহত অন্যদের কথা জানিয়ে আবদুল মোমেন বলেন, পায়ে গুলিবিদ্ধ মুতাসসিম (গাজীপুর) ও শেখ ‍হাসান রুবেলের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের কয়েকজন খেলোয়াড়, যাদের আল নুর মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করার কথা ছিল। বাংলাদেশ হাইকমিশন ক্যানবেরার সহায়তায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এরই মধ্যে নিরাপদে দেশে পৌঁছেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নিউজিল্যান্ড সরকার বাংলাদেশকে জানিয়েছে, নিহত প্রত্যেকের পরিবারের একজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের কাছে তারা মরদেহ হস্তান্তর করবে এবং তারা মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে পারবে।’

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে সন্ত্রাসীয় হামলার পর পরিস্থিতি মোকাবিলায় অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন অত্যন্ত তৎপর ও যথাযথ ভূমিকা রাখে। বিদেশি মিশনের মধ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশন ক্যানবেরার টিম-ই সর্বপ্রথম অস্ট্রেলিয়া থেকে ক্রাইস্টচার্চে পৌঁছায়। তারা হতাহতের পরিবারের পাশে দাঁড়ায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশিদের সব রকমের সহায়তার আশ্বাস দেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, উদ্বিগ্ন বাংলাদেশিরা নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল শফিকুর রহমানের মোবাইলে +৬৪ ২১০২৪ ৬৫৮১৯ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। এ ছাড়া আরও তিনটি জরুরি নম্বরেও (+৬১ ৪২৪ ৪৭২৫৪৪, +৬১ ৪৫০১৭৩০৩৫ এবং +৬১ ৪৫০৬৫৭০৪৬) যোগাযোগ করা যাবে।

উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ শুক্রবার জুমার নামাজের সময় নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে নৃশংস হামলায় অন্তত ৫০ জন প্রাণ হারান। এ হামলায় আরও ৪৮ জন আহত হন। স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে প্রথমে ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদ ও পরে লিনউড মসজিদে জুমার নামাজ আদায়রত মুসল্লিদের ওপর হামলা চালান অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ব্রেনটন হারিসন টারান্ট।

সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর