বিজ্ঞাপন

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কর্মসূচির দাবি যৌক্তিক: ড. কামাল

February 22, 2019 | 8:15 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর গণশুনানি শেষে জুরি বোর্ডের সভাপতি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সবাই কর্মসূচি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন, এই দাবি যৌক্তিক।’

শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশন মিলনায়তনে এ গণশুনানি হয়। মাঝে নামাজের জন্য ছিল দেড় ঘণ্টার বিরতি। ড. কামাল ছাড়াও গণশুনানির জুরি বোর্ডে ছিলেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমদ, অ্যাডভোকেট মহসীন রশীদ, আনিসুর রহমান খান, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, নুরুল আমীন ব্যাপারী ও আসিফ নজরুল।

দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ধানের শীষ প্রতীকে অংশ নেওয়া ৪১ জন প্রার্থী তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এদের প্রত্যেকেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত জন্য রাজপথে কর্মসূচি দেওয়ার দাবি জানান।

বিজ্ঞাপন

নরসিংদী-৪ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের পর ১১ ডিসেম্বর থেকে আমার বাড়ির চারদিকে পুলিশ-র‌্যাব এমনভাবে টহল দেওয়া শুরু করল যে, আমার বাড়িতে কর্মী আসা বন্ধ করে দিল। ১৩ ডিসেম্বর গণসংযোগ প্রোগ্রাম দিয়েছিলাম। সেই গণসংযোগ প্রোগ্রামের পেছন থেকে রামদা নিয়ে হামলা করা হলো।’

তিনি বলেন, ‘১৫৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১৫২টিতে আমার কোনো এজেন্ট ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সব পিটিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। এই হচ্ছে এবারের নির্বাচনের সিনারি। সুতরাং খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতি বাংলাদেশে কেমন নির্বাচন হয়েছে, সেটা জাতি দেখেছে।’

বিজ্ঞাপন

‘তবে পরাজয় আমাদের হয়নি। দুঃখ শুধু একটা জায়গায়, নির্বাচনের পর খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমরা কোনো কর্মসূচি দিতে পারিনি। সুতরাং আজকের শুনানিতে এটা একটা অংশ হবে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া এ সরকারকে কোনো মতেই হঠানো যাবে না। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমরা আপনার কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম চাই’— বলেন বিএনপির এই সংস্কারপন্থী নেতা।

পিরোজপুর-৩ আসনের ধানের শীষ প্রার্থী রুহুল আমীন দুলাল বলেন, ‘ভাবলাম ২৪ ডিসেম্বর আর্মি নামলে আমরা এ দেশ জয় করে ফেলাবো, বিএনপি ক্ষমতায় চলে যাবে। অথচ নির্বাচনটা হয়েছে আর্মির ব্লু প্রিন্টে, যা বাস্তবায়ন করেছে পুলিশ। বিষয়গুলো আগেই বুঝতে পেরে আমাদের সমন্বয়কারীকে জানালাম। কিন্তু তার সঙ্গে কথা বলে মনে হলো, তার চেয়ে আমিই বেশি শক্তিশালী। অবশেষে ৩৮টি কেন্দ্র আমিই পাহারা দিলাম।’

কেন্দ্রীয় নেতাদের আচরণ তৃণমূল নেতাদের পছন্দ হয় না উল্লেখ করে দুলাল বলেন, ‘কেন্দ্রে সমন্বয়ের অভাব আছে। আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন কর্মসূচি চাই। ৩০০ জন প্রার্থী আছে, জেলার নেতারা, কেন্দ্রীয় নেতারা আছে। সুতরাং সঠিক কর্মসূচি চাই। তা না হলে আমাদের নেত্রীর মুক্তি হবে না।’

নোয়াখালী-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘এখান থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ২০০ বছরের পুরোনো ভবনে অসুস্থ অবস্থায় আমাদের নেত্রী (খালেদা জিয়া) বসে বসে আমাদের জন্য দোয়া করে। আমাদের তৃণমূল কর্মীদের আপনার (ড. কামাল হোসেন) ওপর আশা ছিল। কিন্তু আমাদের নেত্রীর মুক্তির ব্যাপারে সরকার প্রধান আপনাকে আশ্বস্ত করার পরও কেন মুক্তি দিলেন না। এতো প্রতিনিধি পাঠালেন নির্বাচন কমিশনে। তারা গিয়ে বলল, আমাদের পোস্টার লাগাতে দিচ্ছে না, আমাদের মারধর করছে, বাড়ি-ঘর ভাঙছে, তারা (নির্বাচন কমিশন) কি একটা অভিযোগ আমলে নিয়েছে?’

বিজ্ঞাপন

‘তখনই বোঝা উচিত ছিল আপনাদের, আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে আপনারা পরাজিত হয়েছেন। যদি ড. কামাল হোসেন সেদিন বলতেন, ২৭ ডিসেম্বর আমাকে ঢাকায় সমাবেশ করতে না দিলে আমি নির্বাচনে যাব না। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আর বরকত উল্লাহ বুলুর ফোনলাপ ফাঁস হওয়ার পর যদি তাদের কথা আমলে নিতেন, তখন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত’,—বলেন জয়নুল আবদিন ফারুক।

তিনি বলেন, ‘মহাসচিব নির্দেশ দিয়েছেন অভিযোগ দাখিল করেছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্দেশ দিয়েছেন মামলা করেছি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অফিস থেকে চিঠি দিয়েছে, আজ এখানে গণশুনানিতে এসেছি। আমি সব কিছু ভুলে যেতে পারি। কিন্তু আমার মাকে (খালেদা জিয়াকে) মুক্ত করার জন্য কেন আপনারা কর্মসূচি দিলেন না?’

এভাবে ৪১ জনের বক্তব্য শোনার পর ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আজকের অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিল খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি। তার এই মুক্তি চাওয়া দরকার। এটা যৌক্তিক দাবি। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর এই ধরনের দাবি আমাদের করতে হচ্ছে। এটা দুঃখজনক। এ ব্যাপারে আপনাদের (বিএনপি) দলীয় ফোরামে আলাদা আলোচনা হবে।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত এই গণশুনানিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মোহসীন মন্টু দর্শক সারিতে বসে বক্তব্য শোনেন।

আ স ম আব্দুর রব ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী প্রোগ্রামে এলেও শেষ পর্যন্ত তারা থাকেননি। প্রোগ্রামের মাঝখানে তারা বের হয়ে চলে যান।

সারাবাংলা/এজেড/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন