বিজ্ঞাপন

নেতারা জানেন না খালেদা কী চান!

December 6, 2017 | 3:52 am

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন কী ভাবছেন বা কী চাইছেন—  সে সম্পর্কে দলটির শীর্ষ নেতারা রয়েছেন অন্ধকারে! বর্তমান সংবিধানের আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ, নাকি ‘সহায়ক’ সরকারের দাবিতে রাজপথে অবস্থান— কোনো কিছুই পরিষ্কার নয় তাদের কাছে।

সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘যত প্রতিকূল পরিস্থিতিই হোক, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি।’

এর একদিন পর ১২ নভেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জনসভায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। ‘সহায়ক’ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ওয়ান ইলেভেনের পরিবর্তিত পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার পর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকেন খালেদা জিয়া। বিশেষ করে ‘৫ জানুয়ারি’ সরকারের বর্ষপূর্তিতে ২০ দলের পক্ষে ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির দায়ভার তার একার কাঁধে এসে পড়লে ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়া সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ সীমিত করে দেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হলেও খালেদা জিয়া একাই সিদ্ধান্ত নেন। এ ক্ষেত্রে বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান (শিমুল বিশ্বাস) ও লন্ডনে অবস্থানরত বড় ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান-ই কেবল তার কাছে গুরুত্ব পান বলে অভিযোগ রয়েছে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থান নিয়ে দলের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়াপারসনের উপদেষ্টাসহ শীর্ষ পর্যায়ের এসব নেতাদের মূল বক্তব্য হলো-নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়া নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর।

বিজ্ঞাপন

ব্যক্তিগত সফরে গত ১৫ জুলাই থেকে ১৭ অক্টোবর টানা তিন মাস লন্ডনে অবস্থান করেন খালেদা জিয়া। তার লন্ডন অবস্থানকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ একাধিক শীর্ষ নেতা দলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জানান, দেশে ফিরেই ‘সহায়ক’ সরকারের রূপরেখা দেবেন খালেদা জিয়া।

কিন্তু দেড় মাসের অধিক সময় পার হয়ে গেলেও সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করেননি বিএনপি চেয়ারপারসন। এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্যও আর দিচ্ছেন না দলের শীর্ষ নেতারা। বরং সহায়ক সরকার, নাকি তত্ত্বাবধায়ক সরকার-এই নিয়ে দোটানায় রয়েছেন তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিএনপির বেশিরভাগ শীর্ষ নেতার ধারণা-সরকারের সঙ্গে সমঝোতার একটা পথ তৈরি করেই দেশে ফিরেছেন খালেদা জিয়া। এরই ভিত্তিতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কক্সবাজার শরণার্থী শিবির ও ঢাকার সোরাওয়ার্দী উদ্যানে দীর্ঘদিন পর শো-ডাউনের সুযোগ পেয়েছে বিএনপি। তবে পর্দার অন্তরালে সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতা আদৌ হয়েছে কিনা- সে ব্যাপারে দলের শীর্ষ নেতাদের কিছু বলেননি বিএনপির চেয়ারপারসন।

এ কারণেই নির্বাচন নিয়ে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তারা ঠিক বুঝতেই পারছেন না- দলের চেয়ারপারসন কী চাচ্ছেন? কী বার্তা নিয়ে তিনি লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন?

বিজ্ঞাপন

গত ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরার চারদিন পর ২৩ অক্টোবর দলের স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। ওই বৈঠকেও নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে কোনো ধারণা দেননি তিনি। বরং দীর্ঘদিন ধরে বলে আসা ‘সহায়ক’ সরকারের ধারণা থেকে সরে এসে ফের ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকারের বিষয়টি আলোচনার টেবিলে আনেন তিনি।

সম্প্রতি বিএনপির সর্বোচ্চ পর্যায়ের দুই নেতার সঙ্গে একান্ত আলাপে জানা যায়, নেহায়াত প্রয়োজন না হলে ইদানীং কারো সঙ্গে কিছু শেয়ার করছেন না খালেদা জিয়া। তাকে নিয়ে সরকারের ভাবনা কী? কী তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ? বিদেশি কূটনীতিকদের মাধ্যমে তার কাছে বিশেষ কোনো বার্তা পৌঁছানো হচ্ছে কিনা? তার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমানের (শিমুল বিশ্বাস) মাধ্যমে ‘সরকারের কাছ থেকে কোনো বার্তা আসছে কিনা? সে ব্যাপারে কিছুই জানাচ্ছেন না দলের শীর্ষ নেতাদের।

তবে খালেদা জিয়ার এই ‘অন্তর্মুখী’ অবস্থান নিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতারা মিডিয়ার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে নারাজ। তারা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে দলীয় প্রধানের এই ‘একক ক্ষমত’ চর্চা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। সব দলের অবস্থা প্রায় একই। অযথা কথা বলে দলে গণতন্ত্র চর্চার ‘অভাব’-কে প্রকাশ্যে এনে কোনো লাভ হবে না। অধিকন্তু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সুবিধা নেওয়ার সুযোগ পাবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ম্যাডামেরও তো নিজস্ব কিছু হিসাব-নিকাশ আছে। যেটা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন, সেটা করছেন। আর যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করছেন না, সেটা নিজের কাছে রাখছেন। এতে দোষের কিছু দেখছি না।’

সারাবাংলা/এজেড/আইজেকে/এসআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন