বিজ্ঞাপন

ভ্রমণসঙ্গী হুমায়ূন আহমেদ

July 18, 2018 | 5:41 pm

আবদুল্লাহ্ নাসের ।।

বিজ্ঞাপন

‘গর্তজীবী’ ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। কথাটা সত্য। কিন্তু এরচেয়ে বড় সত্য হলো তাঁর ছিল একটা ভ্রমণপিপাসু মন। ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে খুব ভালোবাসতেন তিনি। হুট করেই বেড়ানোর কোনো পরিকল্পনা এবং দ্রুত তা বাস্তবায়ন।

বঙ্গোপসাগরের বুকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে আমি প্রথম গিয়েছি তাঁর সঙ্গে। তাঁর লেখালেখি আর ‘সমুদ্রবিলাস’-এর জন্য সেন্টমার্টিন আমার কাছে স্বপ্নের এক দ্বীপ। আমি জানি, আমার মতো লাখো বাঙালিকে এই অপূর্ব সুন্দর দ্বীপের স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি। তাই যখন সেন্টমার্টিনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো, আমার ভেতর সে-কী উত্তেজনা আর রোমাঞ্চ। অপেক্ষার প্রহর যেন ফুরোয় না। সেন্টমার্টিনে যাচ্ছি, সেই আনন্দ বহুগুণে বেড়ে যাচ্ছে এটা ভেবে, যিনি এই স্বপ্নদ্বীপের কথা জানালেন, তাঁর ভ্রমণসঙ্গী হয়ে সেখানে যাচ্ছি। আমরা উঠেছি ‘সমুদ্রবিলাসে’। কয়েকটি দিন আর রাত যেন স্বপ্নের মতো কেটেছে। বাড়ির উঠোনে বসে দিনে বা রাতে ম্যারাথন আড্ডা। পায়ের কাছে আছড়ে পড়ছে সমুদ্রের ঢেউ। রাতের নিঃশব্দতার মাঝে সমুদ্রের গর্জন। চাঁদের আলোয় ভেসে যাওয়া চরাচর। এমনিভাবে তাঁর সঙ্গে আরও দু’বার সেন্টমার্টিনে গিয়েছি। প্রতিবারই ভ্রমণসঙ্গীর সংখ্যা ৭ থেকে ১৫।

তখনো টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে স্টিমারসার্ভিস চালু হয়নি। আমরা প্রতিবারই গিয়েছি মাছধরা ট্রলারে চেপে। রোমাঞ্চকর সে যাত্রা। একবার তো এমন হলো, মনে হলো সমুদ্রেই বুঝি আমাদের সলিল সমাধি ঘটবে। সমুদ্র অশান্ত। বিশাল ঢেউ যেন উল্টে দিবে আমাদের ট্রলারকে। ঢেউয়ের দোলায় একবার ডানে একবার বামে কাত হয়ে যাচ্ছে ট্রলার। হিংস্র ঢেউগুলো মনে হচ্ছে ট্রলারসমেত আমাদের গিলে খাবে। সমুদ্রের দানবীয় রূপ। বার বার মনে পড়ছিল শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সমুদ্রঝড়ের রূপ বর্ণনা। ভয়ে আত্মা শুকিয়ে গেছে আমাদের কারও কারও। স্যারকে দেখে মনে হলো প্রকৃতির এই রুদ্র রূপেও যেন তিনি খুঁজে পেয়েছেন বিশেষ কিছু। সেন্টমার্টিনের যাত্রাপথে একবার আমরা টেকনাফে রাত্রিযাপন করি। স্যারের অসম্ভব ভক্ত নুরুল হকের শূন্যবাড়ি আমাদের কোলাহলে মুখর হয়ে ওঠে সে রাত্রিতে। পরদিন আমরা টেকনাফ সৈকতে যাই। কক্সবাজারের চেয়ে আরও সুন্দর এই সৈকত। আরেকবার আমরা বাংলাদেশের শেষ স্থলসীমা শাহপরী দ্বীপে গিয়েছিলাম নুরুল হকের গ্রামের বাড়িতে। আমরা যখন সেখানে পৌঁছাই, নুরুল হক বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর বাড়ির লোকজন আমাদের আপ্যায়নের জন্য গাছ থেকে ডাব পাড়ার লোক খুঁজছিল। এমন সময় বাড়ির সামনের একটি গাছ থেকে ঝুপ করে এক কাদি ডাব আপনা-আপনি নিচে পড়ল। সবাই অবাক। নারকেল ঝরে পড়তে দেখা যায়। কিন্তু ডাবের কাঁদি ঝরে পড়তে কেউ দেখেনি কখনো।

বিজ্ঞাপন

স্যারের পছন্দের বেড়ানোর অল্প ক’টি জায়গার একটি ছিল নেপাল। কয়েকবার তিনি নেপাল গিয়েছেন সদলবলে। দখিন হাওয়া’য় এক রাতের আড্ডায় ঠিক হলো আমরা নেপাল যাব। এও ঠিক হলো এটা হবে ‘ব্যাচেলরস ট্রিপ’। অর্থাৎ শুধু ছেলেরাই যাবে এ যাত্রায়, কোনো মেয়ে থাকবে না। স্যার, তাঁর তিন বন্ধু অধ্যাপক ডা. করিম, স্থপতি করিম, প্রকাশক আলমগীর রহমান, অভিনেতা চ্যালেঞ্জার আর আমরা তিনজন মাজহার, কমল ও আমি,এই আটজনের দল। খুব আনন্দ হয়েছিল সেবার। একেবারে বাঁধন ছেঁড়া ঘুরে বেড়ানো। চারদিন ছিলাম নেপালে। একদিন কাঠমান্ডুর বাইরে গিয়েছিলাম রাফটিং করতে। সবাই নেমেছি পাহাড়ি নদীতে। শুধু আলমগীর ভাই নামেননি। পাথুরে পাহাড়ি নদী। খরস্রোতা। বড় বড় পাথর এখানে-সেখানে। এমনি এক পাথরের গায়ে সজোরে ধাক্কা খেতে খেতে প্রায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যান চ্যালেঞ্জার। মাথায় আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা ছিল তাঁর। সে-যাত্রায় বেঁচে গেলেও ক্যানসার পরে কেড়ে নিয়েছে তাঁকে।

সিকিম আর দার্জিলিংয়ের গল্প বেশ রোমাঞ্চকর। গ্যাংটকে তো বেঁধেই গেল গন্ডগোল। স্যারসহ আমরা ১৩জন দুটি মাইক্রোতে করে যাই রংপুরের তিস্তা ব্যারেজ রেস্ট হাউজে। সেখানে রাত্রিযাপন শেষে পরদিন চ্যাংরাবান্দা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করি আমরা। তারপর সেখান থেকে শিলিগুড়ি হয়ে সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক। দুটি জিপে করে আমরা রওনা হই। পথে পাহাড়ি রাস্তায় চলন্ত জিপের ছাদ থেকে আমার লাগেজ পড়ে যায়, রুদ্ধশ্বাস কিছু সময় পর তা ফিরে পাই। যে শার্ট ও প্যান্ট আমি পরে ছিলাম, তা ছাড়া সব পোশাক, টাকাপয়সা এমনকি আমার পাসপোর্টটিও ছিল ওই লাগেজে। যা হোক, রাত আটটা নাগাদ আমরা পৌঁছাই সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকে। গন্ডগোল যেন ওঁৎ পেতে অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য। জিপ চালকেরা আমাদের একটা খুব সুন্দর হোটেলে নিয়ে এল। আমাদের সবার পছন্দ হলো হোটেলটা। সিদ্ধান্ত হলো, যে ক’দিন গ্যাংটকে আছি আমরা এই হোটেলেই থাকব। পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনেকেই ঘুরতে আসে এখানে, দেখতে-শুনতে তারা আমাদেরই মতো। তাই হোটেল ম্যানেজার যখন আমাদের দলনেতা মাজহারের কাছে জানতে চাইলেন আমরা কোথা থেকে এসেছি, মাজহার বাংলাদেশের কথা বললেন। ম্যানেজার বললেন, তা হলে তোমাদের পাসপোর্টগুলো দাও। মাজহার সবার পাসপোর্ট তার হাতে দিতেই তিনি জানতে চাইলেন, সিকিম ভ্রমণের পূর্বানুমতি নিয়েছ তোমরা? বিদেশিদের এই অনুমতি প্রয়োজন। আকাশ ভেঙে পড়ল যেন মাজহারের মাথায়। বলল, অনুমতি নেওয়ার ব্যাপারটা তো আমরা জানতাম না। ম্যানেজার অভয় দিয়ে বললেন, চিন্তা কোরো না। সবাই রুমে যাও, ফ্রেশ হও, তারপর রাতের খাবার সেরে একটা ঘুম দাও, সকালে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে গিয়ে রিপোর্ট করলে অনুমতি পেয়ে যাবে। রাত দশটায় আমরা সবাই হোটেলের নিচতলার রেস্টুরেন্টে জড়ো হলাম রাতের খাবারের জন্য। খাবারের অর্ডার দেওয়া হয়েছে, আমরা অপেক্ষা করছি। এমন সময় একজন বেয়ারা এসে মাজহারকে ডেকে নিয়ে গেল এই বলে যে ম্যানেজার তার সঙ্গে কথা বলবেন। মিনিট দশেক পেরিয়ে গেলেও মাজহার আসছে না দেখে অভিনেতা স্বাধীন খসরু উঠে যান এই বলে, দেখে আসি মাজহার ভাই ফিরছে না কেন। আমাদের এই ট্রিপে পুরনো অনেকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন স্বাধীন। আরও দশ মিনিট পেরিয়ে যায়, মাজহার বা স্বাধীন কেউই ফেরেন না। স্যারসহ আমরা অপেক্ষা করছি খাবার সামনে নিয়ে। স্যার বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। বিষয়টা কীÑযে-ই যাচ্ছে আর ফিরছে না। আমাকে বললেন, নাসের, তুমি যাও। দেখো কী ব্যাপার। তবে ওদের মতো হারিয়ে যেয়ো না। হোটেলের লবিতে রিসেপশন কাউন্টারের সামনে এসে আমি হতবাক। জনা পনের পুলিশ সদস্য সেখানে। একজন অফিসারের সঙ্গে কথা বলছেন মাজহার ও স্বাধীন। বোঝা গেল, আমাদের অবস্থানের বিষয়টি পুলিশকে জানানোর যে দায়িত্ব হোটেল কর্তৃপক্ষের, তা পালনে এতটুকু শিথিলতা দেখায়নি তারা। মাজহার-স্বাধীনের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ অফিসারটি আশ্বস্ত হলেন বলে মনে হলো। বললেন, তোমাদের কাল সকালে অনুমতি নিতে হবে। পেয়ে যাবে আশা করছি। কোথা থেকে অনুমতি নিতে হবে সেই ঠিকানাও বুঝিয়ে দিলেন। তারপর আমাদের দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে পরিচিত হতে অফিসারটি রেস্টুরেন্টে এলেন। আমাদের নৈশভোজের আমন্ত্রণে সাড়া না দিয়ে শুধু এককাপ কফি খেলেন। বেশ রসিক মানুষ। আমাদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠলেন, ব্যক্তিগত রসিকতাও হলো অনেক। স্বল্পসময়েই হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত হয়ে উঠলেন পুলিশ-কর্তা। যাওয়ার আগে আমাদের ভ্রমণের সাফল্য কামনা করলেন। ঠিক হলো, পরদিন সকালে মাজহার আর স্বাধীন অনুমতি সংগ্রহের জন্য যাবেন। আমরা সারা দিন হোটেলেই থাকব, টিভিতে খেলা দেখব, বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ। পাকিস্তানে খেলতে গেছে বাংলাদেশ। স্যার এই খেলা দেখা বাদ দিয়ে বাইরে কোথাও যাবেন না। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কঠিন ভক্ত তিনি।

বিজ্ঞাপন

দুপুর বারোটার দিকে মাজহার-স্বাধীন ফিরে এলেন বিমর্ষমুখে। জানালেন, অনুমতি পাওয়া যায়নি। এখনই আমাদের সিকিম ছেড়ে চলে যেতে হবে। নইলে পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নিবে। সে ব্যবস্থা অনেকটা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বহুল আলোচিত ‘পুশব্যাক’-এর মতো। সিকিম ত্যাগের জন্য মাজহার-স্বাধীন সঙ্গে গাড়ি ঠিক করে এনেছেন। আমরা দ্রুত লাগেজপত্র নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ি। বাংলাদেশ-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে না-পারার ক্ষোভ আর সিকিমের সৌন্দর্য উপভোগের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা পূরণ না-হওয়ার হতাশায় আমরা আচ্ছন্ন। সিকিমকে এভাবে বিদায় জানাতে হবে কেউ ভাবতেই পারছিল না।

আমরা চলে আসি দার্জিলিংয়ে। সেখানে চারদিন নানা পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরে বেড়াই। আমি আর স্বাধীন তখন ব্যাচেলর। আমরা দুজন একটা রুমে থাকি। অন্যেরা স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে আমাদের সঙ্গী। দেশে বা দেশের বাইরে সবসময়ই স্যারকে দেখেছি যত রাতেই ঘুমান না কেন, খুব ভোরে উঠে যান। নুহাশপল্লীতে দেখেছি ভোরে উঠে স্যার সবুজ মাঠে বা গাছগাছালির মাঝে হাঁটাহাঁটি করছেন। এখানে প্রতি ভোরে আমাদের রুমে ফোন করে আমাকে আর স্বাধীনকে নিজের রুমে ডেকে নিতেন চা খেতে। এই ভ্রমণটি আমার জীবনের আনন্দময় অংশগুলোর একটি।

মেঘালয়ের রাজধানী শিলং, চেরাপুঞ্জি ও সেখানকার আরও কিছু জায়গা ঘুরে বেড়িয়েছি আমরা দিন সাতেক। আমরা উঠেছিলাম শিলং ক্লাবে। পরিকল্পনা ছিল চারদিন থাকার। বিডিআর-বিএসএফ সংঘর্ষে ৬ বিএসএফ সদস্য মারা যাওয়ায় সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমরা আটকা পড়ি শিলংয়ে। তবে মেঘালয়ের সৌন্দর্য আমাদের সব উৎকণ্ঠা ভুলিয়ে দেয়। আমাদের সকলেরই খুব ভালো লাগে মেঘালয়। আমার বোধহয় একটু বেশি ভালো লেগেছিল পাহাড়ি নিসর্গ। আর সেটা দৃষ্টি এড়ায়নি হুমায়ূন আহমেদের। তিনি অন্য সঙ্গীদের কয়েকবারই বলেছেন, নাসেরের আনন্দ দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। ও ভীষণ পাহাড় ভালোবাসে। সেবারে স্যারের আমন্ত্রণে আমাদের সঙ্গী হয়েছিলেন নুহাশ চলচ্চিত্রের তিন কর্মী। এদের ভ্রমণের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করেছেন স্যার। স্যারের এই ঔদার্যে আরেকবার মুগ্ধ হই আমরা। পুরোটা সময় আমরা নুহাশ চলচ্চিত্রের কর্মীদের সঙ্গে একই হোটেলে থেকেছি, একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেছি, ঘুরে বেড়িয়েছি।

২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারির শেষে ঠিক হলো আমরা এবার খুব কাছের একটি ভারতীয় শহর আগরতলায় যাব। আগরতলা ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে ত্রিপুরার সঙ্গে। মার্চের প্রথম সপ্তায় বিআরটিসির ঢাকা-আগরতলা বাস সার্ভিসে করে আগরতলা পৌঁছলাম আমরা। স্যারের নেতৃত্বে এবারের সফরের সদস্য সংখ্যা ১৫। এই দলে আছেন লেখক ইমদাদুল হক মিলন, অধ্যাপক শফি আহমেদ, প্রকাশক আলমগীর রহমান, স্থপতি ফজলুল করিম প্রমুখ। আখাউড়া সীমান্ত পেরিয়ে আগরতলা সীমান্তে প্রবেশ করতেই আগরতলায় আমাদের কিছু সুহৃদ উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন। পাঁচ দিন ছিলাম আমরা ত্রিপুরায়। সে সময় আগরতলা বইমেলা চলছিল। একদিন মেলায় গেলাম। সেখানে হুমায়ূন আহমেদ ও ইমদাদুল হক মিলনকে সংবর্ধনা দেওয়া হলো। বাকি চারদিন নানা ট্যুরিস্ট স্পট ঘুরে ঘুরে দেখলাম। রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত কিছু স্থান ছিল। কিছু প্রাচীন মন্দির ছিল। আগরতলা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে পানিবেষ্টিত প্রাসাদ ‘নিরমহল’ দেখতে গেলাম। প্রাসাদটি স্যারকে মুগ্ধ করেছিল, তিনি বেশ সময় নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখলেন। প্রাসাদটি এখন একটি পর্যটন কেন্দ্র। রাতে এখানে লাইট এন্ড সাউন্ড শো হয়। প্রাসাদের কাছেই পর্যটনের একটি হোটেলে আমরা রাত্রিযাপন করলাম। গভীর রাত পর্যন্ত হোটেলের ভেতরেই খোলা চত্বরে জমজমাট আড্ডা হলো। যেখানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম সেখানে থেকে দেখা যাচ্ছিল জলের বুকে ভেসে আছে ‘নীরমহল’। এই আড্ডায় যোগ দিয়েছিলেন আমাদের ত্রিপুরার কিছু বন্ধু। শচীন দেব বর্মনকে নিয়ে নানা প্রসঙ্গে অনেক কথা হলো। কারণ আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন শচীনের বংশধর কবি রাতুল দেব বর্মন। এখানেও আড্ডার মধ্যমণি গল্পের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ। সবার অনুরোধে শাওন কয়েকটি গান গাইলেন। এই ত্রিপুরা ভ্রমণের কথা হুমায়ূন আহমেদ তাঁর ‘দেখা না-দেখা’ গ্রন্থে বিশদ উল্লেখ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

নুহাশপল্লীর মাটি এই ভ্রমণপ্রিয় মানুষটিকে কাছে টেনে নিয়েছে পরম মমতায়। তিনি শুয়ে আছেন লিচুতলায়, বৃক্ষরাজির নিবিড় মমতায়। নিশ্চয়ই গাছেদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। সে-কথার মাঝে হুট করে কোনো আগন্তুকের প্রবেশ ঘটে না। তিনি বৃষ্টিযাপন করেন তাদের সঙ্গেই। তাদের সঙ্গী করেই অনন্ত নক্ষত্রবীথির উদ্দেশে তার অন্তহীন ভ্রমণ।

আবদুল্লাহ্ নাসের : অন্যদিনের নির্বাহী সম্পাদক এবং অন্যপ্রকাশের পরিচালক।

সারাবাংলা/পিএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন